ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল কিংবা ওয়াশিংটন পোস্ট কিনতে চান মিডিয়া মোগল মাইক ব্লুমবার্গ
বিশ্বখ্যাত অর্থনৈতিক ডেটা সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান ব্লুমবার্গের প্রতিষ্ঠাতা মাইক ব্লুমবার্গ গণমাধ্যম জগতে নিজের প্রভাব-প্রতিপত্তির কারণে ইতোমধ্যেই বিশ্বজুড়ে মিডিয়া মোগল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। তবে নিজের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্যারিয়ার বিবেচনায় গণমাধ্যম জগতে তিনি নিজের প্রভাব-প্রতিপত্তিকে আরও বাড়াতে চান। এরই অংশ হিসেবে সম্প্রতি ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্যারেন্ট কোম্পানি (মূল সংস্থা) ডো জোন্স কিংবা ওয়াশিংটন পোস্টের মত প্রভাবশালী গণমাধ্যমকে কেনার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন মার্কিন এ ধনকুবের। খবর আল জাজিরা।
শুধু ওয়াল স্ট্রিট জার্নালই নয়, ব্যারন ও মার্কেট ওয়াচের মতো বিখ্যাত সব মিডিয়ার মালিকও ডো জোন্স কোম্পানি। আর তাই ব্লুমবার্গের ব্যবসায়িক স্বার্থে ডো জোন্সকে কিনতেই বেশি আগ্রহী মাইক ব্লুমবার্গ। কিন্তু ক্ষেত্রবিশেষে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের বিকল্প হিসেবে ওয়াশিংটন পোস্টকেও কিনতে রাজি তিনি। তবে পুরোটাই নির্ভর করছে একদিকে ওয়াশিংটন পোস্টের মালিক অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস এবং অন্যদিকে, ডো জোন্সের প্যারেন্ট কোম্পানি নিউজ কর্পের নির্বাহী চেয়ারম্যান রুপার্ট মার্ডকের সদিচ্ছার ওপর।
ব্লুমবার্গ অবশ্য এই চুক্তির ব্যাপারে অনেকটা গোপনীয়তা বজায় রাখছেন। চুক্তির সর্বশেষ আপডেট সম্পর্কে বার্তাসংস্থা রয়টার্সের পক্ষ থেকে ব্লুমবার্গ ও ডো জোন্সের কাছে জানতে চাওয়া হলে প্রতিষ্ঠানগুলো তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে ওয়াশিংটন পোস্টের একজন মুখপাত্র বলেছেন, বর্তমানে তাদের কোম্পানি বিক্রি করার কোনো পরিকল্পনা নেই।
এই ডিলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি রয়টার্সকে জানিয়েছেন, ব্লুমবার্গের পক্ষ থেকে রুপার্ট মার্ডকের কাছে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো প্রস্তাব পাঠানো হয়নি। এমনকি, দুই পক্ষের মধ্যে ফলপ্রসূ কোনো আলাপও হয়নি। কারণ ব্লুমবার্গের কাছে এটি এখনো অস্পষ্ট যে, রুপার্ট মার্ডক আসলেই ডো জোন্স কোম্পানিটি বিক্রি করতে চান কি-না।
২০০২ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত নিউইয়র্ক সিটির মেয়র ছিলেন ধনকুবের ব্লুমবার্গ। এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট শিবির থেকেও মনোনয়নপ্রত্যাশী তিনি। এ কারণে নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থ রক্ষায় ব্লুমবার্গ বিখ্যাত কোনো গণমাধ্যমকে কিনতে চান বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।
তাছাড়া, বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের তালিকায় ১২তম স্থানে রয়েছেন এই ধনকুবের। ফলে বিশ্বখ্যাত কোনো গণমাধ্যম চড়া দামে কিনতেও অসুবিধা হওয়ার কথা নয় ব্লুমবার্গের।
২০২০ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আগে বহু চেষ্টার পরেও মনোনয়নের দৌড়ে খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি মাইক ব্লুমবার্গ। আর তাই আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন করে ভাবছেন এ ধনকুবের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকটি সূত্র রয়টার্সকে জানান, বিখ্যাত কোনো গণমাধ্যম কিনে নিয়ে ব্লুমবার্গ মূলত বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত কিংবা নিজের ব্যবসা সম্পর্কে ইতিবাচক সংবাদ প্রকাশ করে আমেরিকার জনগণের প্রতি নিজের প্রভাব বিস্তার করতে চান।
অন্যদিকে, চলতি বছরের অক্টোবরে রুপার্ট মার্ডক নিজের মিডিয়া সাম্রাজ্যকে একীভূতকরণের জন্য নিউজ কর্প ও ফক্স কর্পকে একই ছাতার নিচে আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছিল। কিন্তু তার এ উদ্যোগের বিরোধিতা করে নিউজ কর্পের অন্য শেয়ার হোল্ডাররা। তাদের মতে, নিউজ কর্প যদি ফক্স কর্পের সঙ্গে একীভূত হয়ে যায়, তবে নিউজ কর্প প্রতিষ্ঠানটি তার নিজস্বতা হারাবে।
হুবার রিসার্চ পার্টনারের মিডিয়া বিশ্লেষক ক্রেইগ মনে করেন, রুপার্ট মার্ডকের নিজেরও ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল বিক্রির সদিচ্ছা নেই। এমনকি নিজের পরিবারকেও সংবাদপত্রটি বিক্রি না করতে বলে যাবেন তিনি। কারণ এই সংবাদপত্র মার্ডকের মিডিয়া সাম্রাজ্যের পরিচয় বহন করে। একইসঙ্গে, নিউজ কর্পের বেশ কয়েকজন শেয়ার হোল্ডার রুপার্ট মার্ডক ও পরিচালনা বোর্ডকে বোঝাতে চেষ্টা করছেন, ডো জোন্স আলাদা প্রতিষ্ঠান হিসেবে থাকলেই ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে বেশি সুবিধা করতে পারবে। আর এ কারণে মাইক ব্লুমবার্গের ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল কিংবা ওয়াশিংটন পোস্টের মালিক হওয়ার ইচ্ছা খুব সহজে পূরণ হবে না।