সাহসী সাত জাপানি: হলি আর্টিজান হামলায় প্রাণ হারান যে এমআরটি বিশেষজ্ঞরা
মেট্রোরেল প্রকল্পে কাজ করতে বাংলাদেশে এসেছিলেন টোকিও-ভিত্তিক তিন কনসাল্টিং সংস্থার আট কারিগরি বিশেষজ্ঞ। ২০১৬ সালের ১ জুলাই হলি আর্টিজানে আক্রমণের সময় ক্যাফেটিতে একসঙ্গে বসে খাচ্ছিলেন তারা।
ওই হামলায় তাদের মধ্যে দুইজন নারী ও পাঁচজন পুরুষ নিহত হন। একজন কোনোমতে প্রাণে বাঁচেন। জঙ্গি হামলার ঘটনায় মেট্রোরেল প্রকল্পে আসে বড় আঘাত।
তবে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করায় প্রকল্পের কাজ অব্যাহত থাকে।
গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া তোমাওকি ওয়াতানাবে ছিলেন কনসাল্টেন্সি ফার্ম আলমেকের চার কর্মকর্তার একজন । বাকি তিনজন ইউকো সাকাই, রুই শিমোদাইরা এবং মাকোতো ওকামুরা হামলায় নিহত হন।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, আফ্রিকা এবং ল্যাটিন আমেরিকার বেশকিছু প্রকল্পে কাজ করা পরিবহন বিষয়ক কন্সালটেন্সি ফার্ম কাতাহিরা অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্টারন্যাশনালের জন্য কাজ করতেন আরেক ভিক্টিম কোয়ো ওগাসাওয়ারা।
নিহত বাকি তিনজন হিডেকি হাশিমোতো, নোবুহিরো কুরোসাকি এবং হিরোশি তানাকা ওরিয়েন্টাল কনসালটেন্টস গ্লোবালের হয়ে কাজ করছিলেন। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত জাতীয় মহাসড়ক প্রশস্তকরণের জন্য তিন সেতু নির্মাণের একটি জাপানি প্রকল্পে কাজ করছিলেন তারা।
জাইকার বাংলাদেশ অফিসের প্রধান প্রতিনিধি ইচিগুচি তোমোহাইড টিবিএসকে বলেন, 'আমরা সেই ঘটনা ভুলে যাইনি, বিশেষ করে নিহত সাত জাপানির কথা। তারা সবাই এমআরটি লাইনের সম্ভাব্যতা অধ্যয়নের কাজ করছিলেন। এই এমআরটি প্রকল্পের বাস্তবায়নে নিবেদিত ছিলেন তারা'।
'তাদের ভুলে যাওয়া আমাদের উচিত হবে না। তাই প্রতি বছর ১ জুলাই সেই ঘটনার দিন আমরা তাদের স্মৃতিসভার আয়োজন করে থাকি,' বলেন তিনি।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন সিদ্দিক টিবিএসকে বলেন, 'মেট্রোরেলের প্রদর্শনী ও তথ্য কেন্দ্রে গেলে (ডিপোতে অবস্থিত) আপনি মেট্রোরেলের জন্য কাজ করা জাপানি নাগরিকদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিফলক দেখতে পাবেন। চলতি বছর একটি আয়োজনে আমরা নিহত জাপানি নাগরিকদের শ্রদ্ধা নিবেদন করি'।
যেহেতু তারা এমআরটি-১ ও এমআরটি-৫-এ কাজ করছিল তাই নতুন বাজার রেলওয়ে স্টেশন তৈরি হলে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ সেই স্টেশনে স্মৃতিফলকটি স্থানান্তর করবে।
সেখানেই ফলকটি স্থায়ীভাবে স্থাপিত হবে।
'তাদের যখন হত্যা করা হয়, তখন তাদের হাতে বেশ কয়েকটি বই ছিল। সেই বইগুলোও প্রদর্শনীর জন্য রাখা হবে। আমরা প্রতিবছর ওই স্মৃতিফলকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করব,' বলেন এম এ এন সিদ্দিক।
সাত জাপানি ছাড়াও ওই হামলায় নয় ইতালীয়, একজন মার্কিন ও একজন ভারতীয় নাগরিক নিহত হন।
কর্তৃপক্ষ কীভাবে এই কঠিন সময় পার করল?
যখন ঘটনাটি ঘটে তখন শুধুমাত্র একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল, সেটি হলো টোকিও কন্সট্রাকশনের সিপি-১: ডিপো ল্যান্ড ডেভলপমেন্ট।
জাইকার তথ্যানুসারে, এই ঘটনার পরে অনেক প্রতিষ্ঠান দরপত্র জমা দিতে ভয় পাচ্ছিল।
ভয় দূর করতে বিএমটিসিএল নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার সিদ্ধান্ত নেয়।
'কিছু কন্সট্রাকশন অফিস ছিল। সেগুলোর চারপাশে কিছু বড় দেয়াল নির্মাণ বা সিসিটিভি স্থাপন ও নিরাপত্তা সংস্থা নিয়োগ করার দরকার পড়েছিল', বলেন জাইকার চিফ রিপ্রেজেন্টেটিভ ইচিগুচি তোমোহাইড।
'এই বিষয়গুলো দরপত্রের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। এরপর প্রতিষ্ঠানগুলো যোগ দিতে নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে,' বলেন তিনি।
তিনি বলেন, 'এই ঘটনার পর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার বিষয়ে আমরা সরকারের সঙ্গে পরামর্শ করেছি। আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও আইনি আলোচনা করেছি। বিভিন্ন কোম্পানি এবং পরামর্শদাতাদের আস্থা ধরে রাখতে কী করা যায় সে বিষয়েও পর্যবেক্ষণ চালিয়ে গেছি'।
ডিএমটিসিএল-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন সিদ্দিক বলেন, 'তারা নিজ দেশে গিয়ে আর নাও ফিরে আসতে পারত। কিন্তু মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করায় তারা ফিরে আসে।'
'আমরা তাদের জন্য তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছি,' বলেন তিনি।