র্যাপিড পাস দিয়ে মেট্রোরেলের ভাড়া দিতে পারবেন যাত্রীরা
ঢাকায় জনসাধারণের জন্য মেট্রোরেল সেবা চালুর প্রথম দিন থেকেই ভেন্ডিং মেশিন থেকে টিকেট কেনা ও এমআরটি পাস ব্যবহার করে ভাড়া পরিশোধের পাশাপাশি ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কোঅরডিনেশন অথরিটি (ডিটিসিএ) এর ইস্যু করা 'র্যাপিড পাস' ব্যবহার করেও মেট্রোরেলে চড়তে পারবেন যাত্রীরা।
ডিটিসিএ'র ক্লিয়ারিং ব্যাংকের দায়িত্ব পালন করা ডাচ ব্যাংলা ব্যাংকের নির্দিষ্ট কয়েকটি শাখায় নিজের নাম ও মোবাইল নাম্বার দিয়ে নিবন্ধন করে মাত্র ৪০০ টাকার বিনিময়ে এই কার্ড গ্রহণ করা যাবে। এর মধ্যে ২০০ টাকা জামানত হিসাবে থাকবে আর ২০০ টাকা ভ্রমণের ভাড়া হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।
ডিটিসিএ সূত্র জানায়, এস্টাব্লিশিং অফ ক্লিয়ারিং হাউজ ফর ইন্টিগ্রেটিং ট্রান্সপোর্ট টিকেটিং সিস্টেম ইন ঢাকা সিটি এরিয়া শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় বিআরটিসি ও বেসরকারি কয়েকটি বাসের ভাড়া পরিশোধে ডেবিট কার্ডের আদলে সীমিত পরিসরে র্যাপিড পাস চালু হয় ২০১৭ সালে।
'ওয়ান কার্ড ফর অল ট্রান্সপোর্ট' স্লোগানে এই কার্ডের মাধ্যমে বাস এবং মেট্রোরেল ছাড়াও পর্যায়ক্রমে বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি), বাংলাদেশ রেলওয়ে, বিআইডব্লিওটিএর নৌপরিবহন সেবায় ভাড়া পরিশোধের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন ডিটিসিএ-এর এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর সাবিহা পারভীন।
তিনি জানিয়েছেন, সব ধরনের গণপরিবহনেরই এই স্মার্ট কার্ডের ব্যবহার নিশ্চিত করতে প্রায় ৮৪ কোটি টাকা ব্যয়ের এস্টাব্লিশমেন্ট অব ক্লিয়ারিং হাউজ ফর ইন্টিগ্রেটিং ট্রান্সপোর্ট টিকেটিং সিস্টেম ইন ঢাকা সিটি এন্ড এডযাসেন্ট ডিসট্রিক্টস প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে বাস্তবায়ন চলছে।
এই প্রকল্পের আওতায় একটি ক্লিয়ারিং হাউজ প্রতিষ্ঠা করা হবে, যার দায়িত্ব হবে এই ব্যবস্থায় আদায় হওয়া ভাড়া বিভিন্ন পরিবহন কোম্পানির মধ্যে তাদের পাওনা অনুযায়ী ভাগ করে দেওয়া। এই কাজ শেষ হলে সব পরিবহনেই এই কার্ডের ভাড়া পরিশোধ করা সম্ভব হবে বলে তিনি জানান।
মেট্রোরেলের টিকেট সিস্টেম
মেট্রোরেল স্টেশনের দ্বিতীয় তলায় টিকেট ভেন্ডিং মেশিনের সামনে লাইন করে দাড়িয়ে সেখান থেকে টিকেট কিনে যাত্রা করা যাবে। আর এমআরটি পাসধারীরা এই কার্ড পাঞ্চ করে চলে যাবেন পেইড জোনে।
প্ল্যাটফর্ম থেকে গন্তব্যে পৌছে এরআরটি পাসধারীরা আবার কার্ড পাঞ্চ করে স্টেশন ত্যাগ করবেন। আর সিঙ্গেল যাত্রার টিকেটধারীরা কার্ডটি একটি স্লটে রেখে আসবেন।
র্যাপিড পাসধারীরাও এমআরটি পাসের মতই কার্ড পাঞ্চ করে স্টেশনে ঢুকতে ও বের হতে পারবেন।
র্যাপিড পাস কী?
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৮ সালের শুরুতে র্যাপিড পাস উদ্বোধন করেন। সাধারণ ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের মতই এই র্যাপিড কার্ডেও একটি মাইক্রো চিপ থাকে।
তবে কাগজের টিকেট মাত্র একবার ব্যবহার করা গেলেও এই পাস ব্যালেন্স থাকা সাপেক্ষে যতবার ইচ্ছে ব্যবহার করা যায়। ব্যালেন্স শেষ হয়ে গেলে আবার সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে এই কার্ড রিচার্জ করা যায়।
বিভিন্ন দেশেই এ ধরনের কার্ড ব্যবহার করা হয়, এরমধ্যে জাপানে এই কার্ডের প্রচলন হয়েছে ২০০৫ সালে।
ডিটিসিএ ঢাকায় এই ব্যবস্থা চালু করতে জাপানের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় ২০১৪ সালে একটি প্রকল্প নেয়। ২০১৬ সালের মধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে জনগনের কাছে কার্ড পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য থাকলেও প্রকল্পে ধীরগতির কারণে ২০১৮ সালে তা সম্ভব হয়।
যেভাবে পাওয়া যাবে এই কার্ড
ডাচ বাংলা ব্যাংকের নির্দিষ্ট কয়েকটি শাখায় নাম ও মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে এই কার্ড গ্রহণ করা যাবে। এই কার্ডের রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হতে দুই দিন সময় লাগবে।
এই কার্ড গ্রহণের সময় ৪০০ টাকা পরিশোধ করতে হবে, যার ২০০ টাকা যাত্রায় ভাড়া হিসাবে ব্যবহার করা যাবে। অবশিষ্ট ২০০ টাকা জামানত হিসেবে থাকবে, যা কার্ড জমা দিলে ফেরত পাওয়া যাবে।
রিচার্জের উপায়
ডিবিবিএল নির্দিষ্ট ১২টি শাখার যেকোন একটি শাখা বা টিকিট শপ থেকে র্যাপিড পাস কার্ড রিচার্জ করা যাবে।
টিকিট শপ হিসেবে মেট্রোরেলের টিকেট ভেন্ডিং মেশিন, বিআরটিসির টিকেট ভেন্ডিং মেশিনে নগদ টাকা দিয়ে কার্ড রিচার্জ করা যায়।
একজন ব্যবহারকারী ১০০ টাকা থেকে একবারে সর্বোচ্চ ১০০০ টাকা রিচার্জ করতে পারবেন। কিন্তু ব্যবহারকারী র্যাপিড পাস কার্ডে ২০০০ টাকার মোট ব্যালেন্স অতিক্রম করতে পারবেন না।