বঙ্গবন্ধু টানেলে চলবে না মোটরসাইকেল, তিন চাকার যান
কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু টানেলের ভেতর দিয়ে চলানো যাবে না মোটরসাইকেল ও তিন চাকার গাড়ি। টানেলের ভেতর কী ধরনের গাড়ি চলবে এবং তার টোল কত হবে, তার একটি প্রস্তাবিত তালিকায় এমনটিই জনিয়েছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ।
গত ২০ ডিসেম্বর সেতু কর্তৃপক্ষের প্রস্তাবিত সেই টোল হার অনুমোদন দিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এখন তা অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায়।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (উন্নয়ন) মো. আবুল হাসান বলেন, "টানেলের ভেতরে মোটরসাইকেল ও তিন চাকার গাড়ি চলাচলের বিষয়টি আপাতত বিবেচনায় নেই। মূলত টানেলের নিরাপত্তার জন্য এ ধরনের গাড়ি চলাচলের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না।"
বঙ্গবন্ধু টানেলের প্রকল্প পরিচালক মো. হারুনুর রশিদ জানান, টানেলের দুটি টিউব বা সুড়ঙ্গের মধ্যে দক্ষিণ সুড়ঙ্গের (টিউব) পূর্তকাজ শেষ হয়েছে। এই সুড়ঙ্গ চট্টগ্রামের আনোয়ারা প্রান্ত থেকে শুরু হয়ে নগরের পতেঙ্গা প্রান্ত পর্যন্ত। এটি এখন যান চলাচলের জন্য প্রস্তুত। উত্তর সুড়ঙ্গের (পতেঙ্গা থেকে আনোয়ারামুখী) কাজও শেষের পথে। এটির কাজ শেষ হলে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া যাবে টানেলটি। গাড়ি চলাচল শুরু হওয়ার আগেই টোল নির্ধারণ চূড়ান্ত করা হবে বলে জানান তিনি।
গত ২৬ নভেম্বর সকালে দক্ষিণ সুড়ঙ্গের পূর্তকাজের সমাপ্তি ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এখন পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি ৯৪ শতাংশ। বাকি কাজ আগামী জানুয়ারিতে শেষ হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা।
মোঃ আবুল হাসান আরও জানান, পার্শ্ববর্তী শাহ আমানত সেতুর টোল পর্যালোচনা করে টোল হারের খসড়া নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অর্থ বিভাগ ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের চূড়ান্ত অনুমোদনের পর তা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে।
সেতু কর্তৃপক্ষের নির্ধারণ করা টোল অনুযায়ী, টানেলের মধ্যে দিয়ে যেতে হলে ব্যক্তিগত গাড়ি (প্রাইভেট কার), জিপ ও পিকআপকে দিতে হবে ২০০ টাকা করে। শাহ আমানত সেতুতে প্রাইভেট কারের জন্য ৭৫ টাকা এবং জিপের জন্য ১০০ টাকা দিতে হয়। আর মাইক্রোবাসের জন্য দিতে হবে ২৫০ টাকা। শাহ আমানত সেতুতে এই হার ১০০ টাকা।
৩১ বা এরচেয়ে কম আসনের বাসের জন্য ৩০০ এবং ৩২ বা তার চেয়ে বেশি আসনের জন্য ৪০০ টাকা টোল দিতে হবে। যদিও শাহ আমানত সেতুতে নেওয়া হয় যথাক্রমে ৫০ ও ১৫৫ টাকা।
টানেল দিয়ে যেতে হলে ৫ টনের ট্রাককে ৪০০ টাকা, ৫ থেকে ৮ টনের ট্রাককে ৫০০, ৮ থেকে ১১ টনের ট্রাককে ৬০০ টাকা টোল দিতে হবে। তবে শাহ আমানত সেতুতে টোল নেওয়া হয় যথাক্রমে ১৩০, ২০০ ও ৩০০ টাকা। ট্রেইলরের টোল নির্ধারণ করা হয়েছে ১০০০ টাকা। শাহ আমানত সেতুতে এই হার ৭৫০ টাকা।
এর আগে, ২০১৯ সালে প্রথম টানেলের বোরিং কাজ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
২০১৫ সালে বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণের মূল প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৮ হাজার ৪৪৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। পরে একই বছর প্রথম সংশোধনীতে ব্যয় ১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা বাড়িয়ে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা করা হয়। ওই সময়ে মেয়াদ ২০২০ সাল থেকে বাড়িয়ে ২০২২ সাল করা হয়। সর্বশেষ দ্বিতীয় সংশোধনীতে বঙ্গবন্ধু টানেলের মেয়াদ ২০২৩ সালের ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হচ্ছে।
চীনের আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় নির্মিত হচ্ছে এই টানেল। এ প্রকল্পে ২ শতাংশ হার সুদে ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা অর্থায়ন করছে চীনের এক্সিম ব্যাংক। বাকি ৪ হাজার ৪৬১ কোটি টাকা জোগান দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার।
কর্ণফুলীর দুই তীরকে সংযুক্ত করে চীনের সাংহাই শহরের আদলে 'ওয়ান সিটি টু টাউন' গড়ে তোলার লক্ষ্যে টানেল প্রকল্প গ্রহণ করে সরকার। দুই টিউব সংবলিত মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। টানেল টিউবের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার এবং ভেতরের ব্যাস ১০ দশমিক ৮০ মিটার।