ছাদখোলা বাসে চট্টগ্রাম ঘুরে দেখতে পারবেন পর্যটকরা
চট্টগ্রামে পর্যটকরা ইউরোপিয়ান স্টাইলে ছাদখোলা বাসে করে দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন পর্যটন বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী। তিনি বলেন, "জার্মানির একটি কোম্পানি থেকে বাসগুলো সংগ্রহ করা হচ্ছে। শিগগিরই দেশে আসলে চট্টগ্রামেও কয়েকটি বাস দেওয়া হবে।"
বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারি) চট্টগ্রাম নগরীর তারকা হোটেল দি পেনিনসুলা চিটাগংয়ে আয়োজিত তিনদিনব্যাপী পর্যটন মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এয়ারলাইনস গ্রুপ এয়ার এস্ট্রার সহযোগিতায় চিটাগং ট্রাভেল মার্টের উদ্যোগে ১৩তম পর্যটন মেলার আয়োজন করা হয়েছে।
পর্যটন বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী বলেন, "প্রধানমন্ত্রী পর্যটন নিয়ে মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন। এটি বাস্তবায়ন হলে দেশের পর্যটনে গুণগত মানের উন্নয়ন হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে পর্যটন খাতে কী পরিমাণ মানুষের কর্মসংস্থান হবে তাও পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। জাতীয় পর্যটন মেলা ২০১০ যুগোপযোগী করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দেশের প্রবৃদ্ধির কারণে দেশীয় পর্যটক বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৯ সালে যেখানে অভ্যন্তরীণ পর্যটকের সংখ্যা ছিলো এক কোটি। ২০২২ সালে তা দাঁড়িয়েছে ২ কোটিরও বেশি।
তিনি আরো বলেন, 'তবে অস্বীকার করছি না, আমরা এখনো বিদেশি পর্যটক আকৃষ্ট করতে পারিনি। এর কারণ যাই থাকুক। বর্তমান সময় এসেছে, পর্যটন উন্নয়ন সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। শুধু কক্সবাজারে নাফ ও সুমাদিয়ায় তিনটি পর্যটন স্পট তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। বিদেশি পর্যটক আকৃষ্ট করতে ভিসা সহজ করা হচ্ছে। দেশের পর্যটন স্পটগুলো বিশ্বের দরবারে তুলে ধরা হচ্ছে। আজকের এই ট্রাভেল মার্ট এরকমই একটি উদ্যোগ।'
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন চিটাগং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক অঞ্জন শেখর দাস, এয়ার এস্ট্রার প্রধান নির্বাহী ইমরান আসিফ, বাংলাদেশ মনিটর সম্পাদক কাজী ওয়াহিদুল আলম এবং ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক মোঃ কামরুল ইসলাম।
চিটাগং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রির পরিচালক অঞ্জন শেখর দাস বলেন, "২০ বছরে চট্টগ্রাম বন্দরে যা উন্নয়ন হয়েছে, এটির সম্প্রসারণ আরো বাড়ানো দরকার। এখন আমরা চাই যোগাযোগ বাড়ুক। বিমান সংস্থাগুলো যেন, চট্টগ্রাম-কলকাতার ফ্লাইট আরো বেশি পরিচালনা করে। পাশাাপাশি টাকাও যাতে কম রাখে। বর্তমানে একটি ফ্লাইট হওয়ায় চট্টগ্রামের অনেক রোগী আগরতলা হয়ে যায়, এটি সময়সাপেক্ষ হওয়ায় রোগীদের বেশি ক্ষতি হচ্ছে।
কাপ্তাই, রাঙামাটিতে কোনো বিদেশি যেতে পারে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, "চট্টগ্রামে ১০০টি ইকোনমিক জোন হচ্ছে। অন্তত এখানে যারা কাজ করতে আসেন, তাদের জন্য হলেও এসব জায়গা উন্মুক্ত রাখা দরকার। বিভিন্ন বাধার কারণে নির্দিষ্ট কিছু জায়গা ছাড়া পর্যটকরা যেতে পারেন না।"
৩ দিনের মেলায় ৫ কোটি টাকা ব্যবসার আশা
মেলায় মোট ২৬টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে এয়ারলাইনস, ট্যুর অপারেটর, হোটেল, রিসোর্ট, অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি, হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান, ইমিগ্রেশন কোম্পানি সহ ভ্রমণ, হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট একাডেমিক ইনস্টিটিউট ও পর্যটন সংশ্লিষ্ট সেবাপ্রদানকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান।
মেলার আয়োজনকারী প্রতিষ্ঠান চিটাগং ট্রাভেল মার্টের পরিচালক ও বাংলাদেশ মনিটর সম্পাদক কাজী ওয়াহিদুল আলম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "চট্টগ্রামের এই মেলায় ৫ কোটি টাকারও বেশি স্পট সেলসের আশা করছি আমরা। ঢাকায় এমন মেলায় ১০-১৫ কোটি টাকার স্পট সেলস হয়। এখানে মূলত ১০-১৫% ছাড়ে এয়ার টিকেট বিক্রি করা হচ্ছে। হোটেল বুকিং, ট্যুর প্যাকেজ বুকিংসহ সব বিষয়ে ছাড় রয়েছে মেলায়। এছাড়া মেলায় থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ভারতের বিভিন্ন চিকিৎসা সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান এসেছে, সাড়াও পাচ্ছে।"
সিঙ্গাপুর ভিত্তিক হেলথ ট্রাভেল প্ল্যাটফর্ম হেলথ ট্রিপের চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক টিবিএসকে বলেন, "রোগীদের রিপোর্ট-প্রেসক্রিপশন আমরা তাদের পছন্দ অনুযায়ী দেশের চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংযোগের ব্যবস্থা করে থাকি। রোগীরা যে ধরণের হাসপাতাল, যে ধরণের চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চান, সে ব্যবস্থা আমরা করে দিয়ে আসছি।"
বেঙ্গল ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর লিমিটেডের সহকারী ব্যবস্থাপক সিরাজুম আশা টিবিএসকে বলেন, "শুধু জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে আমরা ৬টি ট্যুর প্যাকেজ ছেড়েছি। আমরা প্রতিনিয়ত করপোরেট ট্যুর আয়োজন করছি। পুরো বছরে ১০০টির মতো ট্যুর আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে। থাইল্যান্ড, ভারত, সিঙ্গাপুর, নেপাল, শ্রীলঙ্কায় গ্রাহক চাহিদা বেশি।"