গণঅবস্থানে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর শোডাউন আজ, ‘সতর্ক পাহারা’য় আওয়ামী লীগ
গণঅবস্থান কর্মসূচিতে বড় শোডাউনের প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপিসহ সরকার বিরোধী দলগুলো। বুধবার সকাল ১১টা থেকে ঢাকাসহ ১০ বিভাগীয় শহরে এ কর্মসূচি পালন করা হবে বলে জানা গেছে। এদিকে আগামী ১৬ জানুয়ারির জন্য আজ নতুন কর্মসূচির ঘোষণা আসতে পারে বলে সূত্র জানায়।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) ফারুক হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, কয়েকটি শর্তে বিএনপিকে চার ঘণ্টা সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর ডিএমপি সদর দপ্তরে বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান এজেডএম জাহিদ হোসেন ও ডিএমপি কমিশনার মোঃ গোলাম ফারুকের নেতৃত্বে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদলের মধ্যে বৈঠকের পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার বলেন, "কর্মসূচি অবশ্যই শান্তিপূর্ণ হতে হবে, নইলে পুলিশ পদক্ষেপ নেবে।"
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিলেট বিভাগের আরেক পুলিশ কর্মকর্তা টিবিএসকে জানান, তাদের বিরোধীদলের আন্দোলনের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, "এমন নির্দেশনার পর আমরা যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে বিভিন্ন ইউনিট থেকে অতিরিক্ত ফোর্স ডেকেছি।"
সমাবেশের মধ্যে রাজধানীতে যান চলাচল প্রসঙ্গে যাত্রীদের জন্য তাদের পক্ষ থেকে কোনো নির্দিষ্ট ট্রাফিক ডাইভারশন বা নির্দেশনা নেই বলে জানিয়েছেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মোঃ মুনিবুর রহমান।
তিনি বলেন, "আমাদের জানামতে, তারা [বিরোধী দলগুলো] রাস্তা অবরোধ করবে না, তাই আশা করছি মানুষের ভোগান্তি হবে না।"
যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে অতিরিক্ত ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন করা হবে বলেও জানান তিনি।
বিএনপি নেতারা বলছেন, ১০ দফা আদায়ে ২৪ ও ৩০ ডিসেম্বর গণমিছিল কর্মসূচিতে রাজপথে নিজেদের অবস্থান জানান দিয়েছে বিএনপি ও সমমনা দল এবং জোটগুলো। যার ফলে বিএনপিসহ অন্যান্য দলের কর্মীরাও উচ্ছ্বসিত। এভাবেই দেশের জনগণ আস্তে আস্তে রাস্তায় নেমে পড়বে।
বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবি এবং রাষ্ট্র মেরামতের ২৭ দফা নিয়ে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করেছে বিএনপি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, "আমাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে, ইতোমধ্যে বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দও পৌঁছেছেন, জেলা, উপজেলা,ইউনিয়ন-ওয়ার্ড পর্যন্ত প্রস্তুত এ কর্মসূচি পালনে। আমরা সংঘাত চাই না, তবে আওয়ামী লীগ হামলা করতে আসলে তো আমরা আত্মরক্ষা করবোই।"
ঢাকায় বিভাগীয় গণঅবস্থান কর্মসূচি পালিত হবে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে, সকাল ১১টা থেকে ৪ ঘণ্টার এ কর্মসূচিতে যোগ দিবেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিভাগীয় নেতারা।
অন্যদিকে, বিরোধী জোটের এ কর্মসূচির দিন 'সতর্ক পাহারায়' থাকবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সম্ভাব্য সন্ত্রাস-নৈরাজ্য ঠেকাতে 'শান্তি সমাবেশ' কর্মসূচির মাধ্যমে মাঠে থাকবেন দলটির নেতাকর্মীরা।
যেকোনো ধরনের আন্দোলনের নামে সহিংসতার সমুচিত জবাব দিতে আওয়ামী লীগ প্রস্তুত বলে মন্তব্য করেছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের 'স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস' উপলক্ষে মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে রক্ষিত জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ওবায়দুল কাদের এ কথা বলেন।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, "১০ ডিসেম্বর তো গেল, আওয়ামী লীগ কি মোকাবিলা করেনি? আজকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ, অনেক বেশি শক্তিশালী। আমরা যেকোনো ধরনের ষড়যন্ত্র, যেকোনো ধরনের আন্দোলনের নামে সহিংসতার সমুচিত জবাব দিতে প্রস্তুত।"
জানা যায়, বুধবার মিরপুরের ৮নং ওয়ার্ডের ঈদগাহ মাঠে শান্তি সমাবেশের আয়োজন করবে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ। ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের সামনে সকাল ১০টা থেকে দিনব্যাপী অবস্থান কর্মসূচি ও সমাবেশ করবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। দুই কর্মসূচিতেই প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এছাড়া কেন্দ্রীয় এবং নগর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা এতে উপস্থিত থাকবেন।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, "কেউ যদি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়, দেশ ও জনগণের ক্ষতি করতে চায়, তা প্রতিরোধ করার জন্য এ বিষয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া আছে। তারা সতর্ক থাকবেন। কেউ যেন কর্মসূচির নামে কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে, তারা সে ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন। মাঠে থাকবেন।"
বিএনপি ছাড়া আরো ৩৩ রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী পরিষদ ও ১৫ সংগঠনও মাঠে থাকছে।
গণঅবস্থান কর্মসূচি বাস্তবায়নে সাতদলীয় জোট গণতন্ত্র মঞ্চ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে কর্মসূচি পালনে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জোটের একাধিক নেতা জানিয়েছেন। বিজয়নগর পানির ট্যাঙ্কের সামনে গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করবে ১২ দলীয় জোট। পুরানা পল্টন মোড়ে গণঅবস্থান কর্মসূচি পালনের কথা জানিয়েছেন ১২ দলের জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট। আরামবাগে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে এ কর্মসূচি পালন করবে মোস্তফা মোহসীন মন্টু নেতৃত্বাধীন গণফোরাম।পূর্ব পান্থপথের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বড় আকারে শোডাউন করে গণঅবস্থান কর্মসূচির প্রস্তুতি নিয়েছেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) নেতাকর্মীরা। পাশাপাশি থাকবে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ এবং ইয়ুথ ফোরাম, জিয়া নাগরিক সংসদ, বাংলাদেশ জাস্টিস পার্টি, জাতীয়তাবাদী চালক দলসহ ১৫টি সংগঠন।
এদিকে জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাছুম এক বিবৃতিতে জানান, আজ 'গণতন্ত্র হত্যা দিবস' পালন করবেন তারা। এজন্য দেশের সব মহানগরী শাখায় আলোচনা সভা করা হবে।
১১ জানুয়ারি 'গণতন্ত্র হত্যা দিবস' হিসেবে পালনের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটির ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মাছুম এক বিবৃতিতে বলেন, "২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি বাংলাদেশের ইতিহাসে 'গণতন্ত্র হত্যা দিবস' হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। ওই দিন দেশের গণতান্ত্রিক ধারাকে ব্যাহত করে জরুরি অবস্থা জারির মাধ্যমে অগণতান্ত্রিক সরকার রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে। সে সরকারকে নিজেদের আন্দোলনের ফসল বলে দাবি করে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ বাদে দেশের সব রাজনৈতিক দল অগণতান্ত্রিক সরকারের ক্ষমতা দখলের প্রতিবাদ জানায়।"
তিনি বলেন, "ওয়ান ইলেভেনের মাধ্যমে দেশে যে রাজনীতিহীন ও গণতন্ত্রহীনতার পরিবেশ তৈরি হয়েছে তা থেকে জাতি মুক্তি চায়। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।"
তিনি আরও বলেন, "ওয়ান ইলেভেনের এই দিনটিকে 'গণতন্ত্র হত্যা দিবস' হিসেবে পালন করার জন্য দেশের সকল মহানগরী শাখাকে আলোচনা সভার আয়োজন করার ও দেশবাসীকে কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে নিজেদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার জন্য সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।"