বিএসটিআইকে চারটি গবেষণাগারে পাস্তুরিত দুধ পরীক্ষার নির্দেশ দিল হাইকোর্ট
বাজারে থাকা বিএসটিআই অনুমোদিত ১৪ টি কোম্পানির প্যাকেটজাত দুধে অ্যান্টিবায়োটিকসহ ক্ষতিকর উপাদানের উপস্থিতি আছে কি না তা জানতে চারটি গবেষণাগারে আলাদাভাবে দুধ পরীক্ষা করানোর জন্য প্রতিষ্ঠানটিকে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
এই পরীক্ষাগারগুলো হচ্ছে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর), ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডাইরিয়াল ডিজিজ রিসার্চ, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) ও সাভারের বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণাগার।
রোববার বিচারপতি সৈয়দ রিফাত আহমেদ এবং বিচারপতি মোহাম্মদ ইকবাল কবির লিটনের যৌথ বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এছাড়াও সম্প্রতি বাজার থেকে সংগ্রহ করা পাস্তুরিত দুধের ওপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপকের গবেষণার ফলাফলের বিষয়ে বিএসটিআই কি পদক্ষেপ নিয়েছে তা জানতে চেয়েছে হাইকোর্ট।
আদালত আরও জানতে চেয়েছেন, দুধে এন্টিবায়োটিকের উপস্থিতি নির্ণয় করতে এবং গবেষণাগারের মান উন্নত করতে আরও কত সময় নেবে পণ্যের মান নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসটিআই?
সম্প্রতি দ্বিতীয় দফা পরীক্ষার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিকেল রিসার্চ সেন্টারের সদ্য-সাবেক পরিচালক অধ্যাপক আ ব ম ফারুক দাবি করেছেন, বাজার থেকে ১০ টি পাস্তুরিত দুধের নমুনা সংগ্রহ করে সেগুলো পরীক্ষার পর ১০ টিতেই এন্টিবায়োটিকের উপস্থিতি পেয়েছেন তার গবেষক দল।
এর আগে গত ২ জুলাই একই বিষয়ে নিজের গবেষণার ফল প্রকাশ করেছিলেন এই অধ্যাপক। সেখানেও তরল দুধে অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতির কথা জানান তিনি।
তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের লেকচার থিয়েটারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আ ব ম ফারুক বলেছিলেন, তার নেতৃত্বে চালানো এই গবেষণার জন্য বাজার থেকে পাস্তুরিত দুধের সাতটি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এগুলো হলো মিল্ক ভিটা, আড়ং, ফার্ম ফ্রেশ, প্রাণ, ইগলু, ইগলু চকোলেট ও ইগলু ম্যাংগো। পাস্তুরিত দুধের তিনটি নমুনা সংগ্রহ করা হয় রাজধানীর পলাশী, গাবতলী ও মোহাম্মদপুর বাজার থেকে।
সেসময় তিনি বলেছিলেন, “আমরা যে ফলাফল দিয়েছি, তা নমুনা ফলাফল। তার মানে এই নয় যে ওই সব কোম্পানির সব পণ্যই এ রকম। তবে এভাবে যেখানে-সেখানে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার হলে আমরা কিন্তু থাকব না, মরে যাব। অ্যান্টিবায়োটিক যে গরুকে খাওয়ানো হলো, ওই গরুর দুধ ও মাংস আমরা খেলে তা আমাদের শরীরে প্রবেশ করবে। মানুষকে বাঁচাতে এখনই গরুকে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানো বন্ধ করতে হবে।”
এরপরই অধ্যাপক ফারুকের এই গবেষণার ফলাফল নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।
তাদের ওই গবেষণার সঙ্গে ফার্মেসি বিভাগের কোন সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেন ঐ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সীতেশ চন্দ্র বাছার।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের ‘নিরাপদ তরল দুধ উৎপাদন: দেশীয় দুগ্ধশিল্প রক্ষা ও বিকাশে করণীয়’ শীর্ষক এক আলোচনা অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ফারুকের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন।
এর প্রেক্ষাপটে শনিবার একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে একই নমুনা নিয়ে, একই গবেষক দ্বারা নিজেদের চালানো দ্বিতীয়বারের পরীক্ষার ফলাফল জানান তিনি।
রোববার রিট আবেদনকারী পক্ষে আদালতে শুনানি করেন আইনজীবী অনীক আর হক। বিএসটিআইর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সরকার এম আর হাসান। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী ফরিদুল ইসলাম।
শুনানি শেষে রিটকারী আইনজীবী সাংবাদিকদের বলেন, “এ মামলায় মৎস ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়কে আট নম্বর বিবাদী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর বাইরে বিএসটিআই যেহেতু বলেছে, তাদের ল্যাবে অ্যান্টিবায়োটিক বা ডিটারজেন্ট পরীক্ষার সক্ষমতা নেই, সে জন্যে চারটি সংস্থার ল্যাবে যেন টোটাল ব্যাকটেরিয়াল কাউন্ট, কলিফর্ম কাউন্ট, স্টাইফ্লোকোক্কাস কাউন্ট, অ্যাসিডিটি কাউন্ট, ফরমালিন কাউন্ট এবং বিশেষ করে ডিটারজেন্ট ও অ্যান্টিবায়োটিক কাউন্ট পরীক্ষা করতে বলা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, “যে চারটি ল্যাবরেটরির কথা বলা হয়েছে, সেসব ল্যাবরেটরির প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে বিএসটিআই তাদের অনুমোদিত বাজারের পাস্তুরিত দুধের নমুনা সংগ্রহ করে তাদের ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করবে। পরে আলাদা আলাদা রিপোর্ট এক সপ্তাহের মধ্যে কোর্টে জমা দেবে। আগামী ২৩ জুলাই শুনানির তারিখ রেখেছে আদালত।”