রিজার্ভ চুরি: আরসিবিসি-সহ অভিযুক্ত ৬ জনের আপিল খারিজ করলো মার্কিন আদালত
রিজার্ভ চুরির ঘটনায় বাংলাদেশের পক্ষে রায় দিয়ে ফিলিপাইনের রিজল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশন (আরসিবিসি) সহ অভিযুক্ত ছয়জনের 'মোশন টু ডিসমিস' আবেদন খারিজ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সুপ্রিম কোর্ট (স্টেট কোর্ট)।
সোমবার আর্থিক গেয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এর প্রধান মাসুদ বিশ্বাস এর স্বাক্ষিরত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১৩ জানুয়ারি এ মামলা খারিজ করা হয়েছে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্টেট কোর্ট আরসিবিসি ও ১৮ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিবাদীদের আগামী ২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তাদের জবাব দাখিল করার আদেশ প্রদান করেছে এবং একইসঙ্গে মধ্যস্থতার নির্দেশনা প্রদান করেছে।
আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী নিউইয়র্কে নিয়োজিত বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনি প্রতিষ্ঠান মধ্যস্থতার বিষয়টি পর্যালোচনা করবে।
বিএফআইইউ প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, রিজার্ভ থেকে অর্থ চুরির ঘটনা ২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট ফর দি সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট অব নিউইয়র্কে (ফেডারেল কোর্ট) মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেই মামলায় আরসিবিসিসহ ২০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়।
পরে আরসিবিসিসহ ৬ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের মামলা বাতিল করার (মোশন টু ডিসমিস) আবেদন করে। পরবর্তীতে বিভিন্ন আইনি প্রক্রিয়ার পর গত ২০২০ সালের ২০ মার্চ ফেডারেল আদালত ফিলিপাইনের বিভিন্ন বিবাদী কর্তৃক দায়েরকৃত আবেদন খারিজ করে দিয়ে মামলাটি ফেডারেল কোর্টের পরিবর্তে স্টেট কোর্টে পরিচালনার নির্দেশ দেয়।
সেই রায়ের প্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ২৭ মে বাংলাদেশ ব্যাংক যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সুপ্রিম কোর্ট (স্টেট কোর্ট) -এ আরসিবিসিসহ ফিলিপাইনের ২০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে।
ওই মামলা দায়েরের পর ছয় বিবাদী- আরসিবিসি, লরেঞ্জো ভি. ট্যান, রাউল ভিক্টর বি. ট্যান, ব্লুমবেরি (সোলের), ইস্টার্ন হাওয়াই ও কিম অং ফেডারেল কোর্টে মোশন টু ডিসমিস আবেদন করে।
উক্ত আবেদনের বিষয়ে ২০২১ এর ১৪ জুলাই ও ১৪ অক্টোবর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
নিউইয়র্ক কাউন্টি সুপ্রীম কোর্ট ৮ এপ্রিল ২০২২ তারিখে আলোচ্য মামলার আংশিক রায়ে ব্লুমবেরি (সোলের) ও ইস্টার্ন হাওয়াই এর মোশন টু ডিসমিস আবেদন এখতিয়ারে গ্রহণ করে মামলা হতে প্রতিষ্ঠান দুটিকে অব্যাহতি দেয়। পরবর্তিতে রায়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক আপিল আবেদন করে, যা শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।
সর্বশেষ এই ১৩ জানুয়ারি স্টেট কোর্ট আরসিবিসি ও অন্যান্য বিবাদীদের আবেদনে খারিজ করে দিয়েছে। যার ফলে বিবাদীদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে (জুরিসডিকশনাল গ্রাউন্ডে) বাংলাদেশ ব্যাংকের মামলা পরিচালনায় আর কোন বাধা থাকলো না।
আদালত তার রায়ে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন যে, নিউইয়র্ক হতে বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ চুরির ক্ষেত্রে আরসিবিসির উদ্দেশ্যপ্রণোদিত যোগসাজস ছিলো। আদালত রায়ে আরো উল্লেখ করেছেন, আরসিবিসির নিউইয়র্কের হিসাব ব্যবহার না হলে এবং ফিলিপাইনের আরসিবিসি অভিযুক্তদের সহযোগিতা না করলে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক হতে উক্ত অর্থ অন্য কোথাও যাওয়ার সুযোগ ছিল না।
বাংলাদেশের ইতিহাসে রিজার্ভ চুরির সবচেয়ে বড় এই ঘটনা ঘটেছিল ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে। সেই রাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়।
কম্পিউটার হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে পাচার হওয়া এই অর্থ প্রথমে গিয়েছিল ফিলিপাইনের মাকাতি শহরের রিজাল ব্যাংকের ৪টি ভুয়া অ্যাকাউন্টে। তারপর সেখান থেকে দ্রুত এই অর্থ উত্তোলন করেন হ্যাকাররা।
শেষ পর্যন্ত মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের সহযোগিতায় মাত্র দেড় কোটি ডলার উদ্ধারে সমর্থ হয়েছে বাংলাদেশ। বাকি অর্থের ফেরত প্রক্রিয়া মামলায় ঝুলে রয়েছে।