নভোচারীরা ফিরলেন এক ভিন্ন পৃথিবীতে
ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন (আইএসএস) থেকে তিন নভোচারী ফিরে দেখেন, গত বছর রেখে যাওয়া তাদের চিরচেনা পৃথিবীটা একেবারেই বদলে গেছে!
রুশ অলেগ স্ক্রাইপোচকা ও মার্কিন জেসিকা মায়ার পৃথিবী ছেড়ে মহাশূন্যে পাড়ি জমিয়েছিলেন গত বছরের সেপ্টেম্বরে; তখনো করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯-এর আবির্ভাব ঘটেনি। অন্যদিকে, আরেক মার্কিন নভোচারী অ্যান্ড্রু মরগ্যান মহাকাশ স্টেশনে ছিলেন গত বছরের জুলাই থেকে।
শুক্রবার সকালে তারা তিনজন পৃথিবীর বুকে ফিরে এসে দেখেন, এ এক অন্য পৃথিবী। মহাশূন্য থেকে ফেরা এই নভোচারীদের প্রাত্যহিক রুটিন পাল্টে দিয়েছে করোনাভাইরাস। খবর বিবিসির।
পৃথিবীতে ফেরার আগে এক ভিডিও কলে মিসেস মায়ার জানান, 'মহাশূন্য থেকে পৃথিবীর বুকে তাকিয়ে একদমই যেন পরাবাস্তব কিছুর দেখা পাচ্ছি।' তিনি আরও বলেন, 'এখান থেকে পৃথিবীকে দেখা বরাবরের মতোই মনোমুগ্ধকর। আমরা পৃথিবী থেকে মহাশূন্যে আসার পর পৃথিবীর এত বদল ঘটে গেছে, ভাবতেও অবাক লাগছে।'
এই তিন নভোচারী পৃথিবীর বুকে পা রেখেছেন ১৭ এপ্রিল, শুক্রবার। এর মধ্যে স্ক্রাইপোচকা ও মায়ার কাটিয়ে এসেছেন ২০৫ দিন, এবং মরগ্যান ২৭২ দিন।
আইএসএস-এর অফিসিয়াল টুইটার পেজে একগুচ্ছ পোস্টের মাধ্যমে জানানো হয়েছে, কী দারুণভাবে মহাকাশযান সয়ুজ থেকে পৃথিবীর বুকে নেমে আসেন এই তিন নভোচারী।
মার্কিন মহাকাশসংস্থা নাসার একটি ভিডিওতে দেখা যায়, তাদের বহনকারী ক্যাপসুলটি কাজাখস্তানে সফলভাবে অবতরণ করলে মাস্কপরা একদল উদ্ধারকর্মী এই তিন নভোচারীকে পৃথিবীর বুকে স্বাগত জানান।
এরপর তাদের সোজা কোয়ারেন্টিনে নিয়ে যাওয়া হয় এবং করানো হয় কারোনাভাইরাসের টেস্ট।
সাধারণত, মহাকাশ থেকে ফিরলে নভোচারীদের নিকটবর্তী বিমানবন্দরে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখান থেকে তারা বাড়ি ফেরার বিমান ধরেন। কিন্তু করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে কাজাখস্তান সরকার দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি রেখেছে এবং বেশিরভাগ বিমানবন্দরই বন্ধ করে দিয়েছে।
অবশ্য বাইতোনুর স্পেস লঞ্চ প্যাডের কার্যক্রম এখনো চলছে। এই তিন নভোচারীকে প্রথমে সেখানে নিয়ে যাওয়া হবে। তারপর রাশিয়ান নভোচারীকে সেখান থেকে তুলে দেওয়া হবে দেশে ফেরার বিশেষ বিমানে। অন্যদিকে আমেরিকান নভোচারীদের নিয়ে যাওয়া হবে তিন ঘণ্টার দক্ষিণ-পূর্বের শহর কিজিলোর্দায়; সেখানে থাকা নাসার একটি বিমান তাদের যুক্তরাষ্ট্রে উড়িয়ে নেবেন।
আইএসএস-এ এই নভোচারীদের স্থলাভিষিক্ত হতে মহাশূন্যের উদ্দেশে যে দুই রাশিয়ান ও এক আমেরিকান নভোচারী ৯ এপ্রিল ওড়াল দিয়েছেন, করোনাভাইরাসের ঝুঁকি এড়াতে তাদেরও কঠিন সতর্কতার মধ্যে থাকতে হয়েছে; ওড়াল দেওয়ার আগে দেড় মাস কাটাতে হয়েছে কোয়ারেন্টিনে।
সাধারণত মহাকাশ থেকে ফেরার পর নভোচারীদের কয়েক সপ্তাহ মেয়াদী একটি বিশেষ পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার ভেতর থাকতে হয়। জিরো গ্র্যাভিটিতে দীর্ঘদিন থাকার ফলে পৃথিবীর নিরন্তর গ্র্যাভিটির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য খানিকটা সময় প্রয়োজন পড়েই তাদের।
তবে এ বেলা সেগুলোর সঙ্গে চিকিৎসকরা বাড়তি জুড়ে দিয়েছেন করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষিত থাকার টাস্কও।
পৃথিবীর বুকে পা রাখার আগেই, ভিডিও কলে নভোচারী মায়ার আরও বলেছিলেন, 'সাত মাস মহাশূন্যে কাটিয়ে আসার পর পরিবার ও বন্ধুদের জড়িয়ে ধরতে না পারাটা খুবই কষ্টের কারণ হবে।' গত বছর নাসার আরেক নভোচারী ক্রিস্টিনা কোচের সঙ্গে তিনি যৌথভাবে মহাশূন্যে পদচারণা সম্পন্ন করা প্রথম নারী হিসেবে ইতিহাস গড়েন।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতির ইঙ্গিত করে মায়ার বলেন, 'এবার মহাশূন্যের চেয়ে বরং পৃথিবীর বুকেই সম্ভবত আমাকে বেশি আইসোলেশন অনুভব করতে হবে। মহাশূন্যে আমাদের অনেক রোমাঞ্চকর কাজে ব্যস্ত থাকতে হয় বলে আইসোলেশন অতটা টের পাই না।'
১৯৯৮ সাল থেকে পৃথিবীর কক্ষপথে রয়েছে আইএসএস। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, জাপান, কানাডা ও ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির যৌথ মালিকানা পরিচালিত হয় এটি।