‘অ্যাপোক্যালিপসে’র অস্ত্র পেল রুশ নৌবাহিনী, বাড়ল পশ্চিমা দেশে পুতিনের পারমাণবিক হামলার হুমকি
বিশ্বের প্রথম পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন ড্রোনের ডেলিভারি পেয়েছে রাশিয়ান নৌবাহিনী। এর নাম 'পোসাইডন'। রুশ গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, মনুষ্যহীন জলতলে চলাচলকারী যানটির (ইউইউভি) সব ধরনের পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে, খুব শিগগিরই এটি রাশিয়ার পরবর্তী প্রজন্মের সাবমেরিনগুলোয় যুক্ত করা হবে। খবর এল পাইসের
এর আগে ২০১৮ সালে পোসাইডন ড্রোন কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে মুখোমুখি রাশিয়া ও ন্যাটো জোট। ইউক্রেনে রাশিয়ার সঙ্গে তাদের ছায়াযুদ্ধ চলছে বলেই জানাচ্ছেন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা। এই বাস্তবতায়, পোসাইডন ড্রোনের সার্ভিসে আসার ঘটনায় উদ্বেগ ব্যক্ত করেছে ন্যাটো। কারণ, এই ড্রোন প্রচলিত ও পারমাণবিক উভয় ধরনের ওয়ারহেড বা বোমা বহনে সক্ষম। সাগরতলে বহু দূরত্ব পাড়ি দিয়ে এটি গোপনে এসে হামলা চালাতে পারে শত্রুর উপকূলীয় এলাকায়। এই বিস্ফোরণ পারমাণবিক বোমার হলে, তাতে তৈরি হবে শক্তিশালী সুনামি, তাতে ধবংস হবে উপকূলের জনপদ বা সামরিক স্থাপনা। একইসঙ্গে, সাগরের ব্যাপক অংশ তেজস্কিয় উপাদানের দূষণ কবলিত হবে।
পাঁচ বছর আগে পোসাইডন অস্ত্র কর্মসুচির ঘোষণাকালে পুতিন পশ্চিমা দুনিয়াকে হুঁশিয়ার করে বলেছিলেন, 'বিশ্বে সবচেয়ে বেশি পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী রাশিয়া, কিন্তু কেউ আমাদের কথা শুনছে না। এবার তাহলে শুনুন'। একথা বলেই প্রস্তাবিত নতুন অস্ত্র ব্যবস্থাগুলোর বিশ্বের সামনে তুলে ধরেন পুতিন, যারমধ্যে ছিল পোসাইডন-ও।
তিনি বলেন, এই অস্ত্র হবে কার্যত অপরাজেয়, যাকে ধ্বংস করা যাবে না। জলের তলায় প্রায় নিঃশব্দে চলাচল ও গতিপথ বদলাতেও সক্ষম এটি। এসময় পুতিন কিনজ্বাল হাইপারসনিক মিসাইল তৈরির ঘোষণাও দেন। ইতোমধ্যেই মিসাইলটি ইউক্রেনে ব্যবহার করেছে রাশিয়া। তার সাথে পোসাইডন যুক্ত হওয়ায়, পশ্চিমাদের প্রতি রাশিয়ার পারমাণবিক হুমকি নতুন মাত্রা পেতে চলেছে।
পারমাণবিক শক্তিচালিত মোটরসহ পোসাইডনের মৌলিক যন্ত্রপাতিগুলোর পরীক্ষানিরীক্ষা ইতোমধ্যেই সম্পন্ন করেছে রাশিয়ার সামরিক শিল্প। নিকট ভবিষ্যতে রাশিয়ার অস্কার-২ শ্রেণির পারমাণবিক সাবমেরিনে এই অস্ত্র যুক্ত হবে বলে সংশ্লিষ্টদের বরাতে জানিয়েছে রুশ বার্তাসংস্থা তাস নিউজ এজেন্সি।
পোসাইডন কেন মারাত্মক এক অস্ত্র? কারণ এটি মনুষ্যহীন এমন এক জলচর ড্রোন সাবমেরিন, যেটি অনায়সে এক মহাদেশ থেকে অন্য মহাদেশের উপকূলে হানা দিতে পারবে। যাত্রাপথে ছুটতে পারবে প্রচলিত যেকোনো নৌযান বা টর্পেডোর চেয়ে দ্রুতগতিতে। পারমাণবিক অস্ত্রসজ্জিত পোসাইডন অস্ত্রের মূল লক্ষ্য হবে শত্রুপক্ষের উপকূলীয় শহর বা তাদের নৌবহর। স্টিলথ প্রযুক্তি যুক্ত থাকায় গভীর জলের তলায় এটি শনাক্ত করাও হবে অত্যন্ত কঠিন।
রুশ গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, প্রথম যখন পোসাইডন অস্ত্রের প্রস্তাব করা হয়, তখন এটি যেন ১০০ মেগাটন ধ্বংসক্ষমতার সক্ষমতার পারমাণবিক বোমা বহন করতে পারে সে অনুসারে নির্মাণের প্রস্তাব দেওয়া হয়। প্রস্তাবিত বোমার ধ্বংসক্ষমতা ছিল এপর্যন্ত সবচেয়ে শক্তিশালী পারমাণবিক বোমা– সাবেক সোভিয়েত আমলে পরীক্ষিত জার বোমার চেয়ে দ্বিগুণ শক্তিশালী। পরে এই সক্ষমতা কমিয়ে ২ মেগাটন করা হয়েছে বলে জানায় তাস এজেন্সি। তারপরও এটা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে ফেলা পারমাণবিক বোমার চেয়েও বেশি শক্তিশালী।
এই ধ্বংসক্ষমতার জন্যই পোসাইডনকে 'অয়েপন অব অ্যাপোক্যালিপস' বা শুভ-অশুভের মধ্যে শেষ যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ডাকা হয়। ২০২০ সালের নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও পারমাণবিক অস্ত্র-নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টোফার ফোর্ড বলেছিলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রের শহরগুলিকে তেজস্ক্রিয় জলের সুনামিতে ভাসিয়ে দিতেই এই অস্ত্র তৈরি করেছে রাশিয়া'।