কেরু কোম্পানি মদ বিক্রির মুনাফায় দ্যুতিময়!
চিনি উৎপাদন ইউনিটে ব্যাপক লোকসানের মুখ দেখলেও, ২০২১-২২ অর্থবছরে ডিস্টিলারি বা মদ তৈরির ইউনিটে রেকর্ড আয় ও মুনাফা বৃদ্ধির রেকর্ড করেছে কেরু অ্যান্ড কোম্পানি। কোম্পানির সাম্প্রতিকতম অডিট প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
২০২১-২২ অর্থবছরে কেরু অ্যান্ড কোং আয় করেছে ৪২৯.৩৬ কোটি টাকা, অর্থাৎ আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৬ শতাংশ। একইসঙ্গে, ওই সময়ের তুলনায় মুনাফায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৩৬ শতাংশ বা ৪৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা, যা কোম্পানির ইতিহাসে এক রেকর্ড।
বিগত অর্থবছরে কেরুর ডিস্টিলারি ইউনিটের আয় ছিল ৩৬৮ কোটি ৫১ লাখ টাকা, আর মুনাফা হয়েছে ১১৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা। এর আগের অর্থবছরে ডিস্টিলারি থেকে ২৬৭ কোটি ১৮ লাখ টাকা আয় এবং ৮৯ কোটি টাকা মুনাফা হয় কেরুর।
এসময় চিনি উৎপাদন ইউনিট থেকে ৫২ কোটি ৫৯ লাখ টাকা আয় করলেও, লোকসান হয়েছে ৬১ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। আগের অর্থবছরে এ ইউনিটের আয় ছিল ৩৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা, আর লোকসান হয় ৭০ কোটি ৮২ লাখ টাকা।
এছাড়া, চলতি অর্থবছরের জুলাই- ডিসেম্বর সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত মদ প্রস্তুতকারকটির আয় বেড়েছে ২১ শতাংশ বা ২৩২ কোটি ৯৬ লাখ টাকা, এর ৯০ শতাংশই এসেছে ডিস্টিলারি খাত থেকে।
করফাঁকি বন্ধ করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিদেশ থেকে অ্যালোকোহল আমদানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করার পর, ২০২১ সাল থেকেই কেরুর লিকার (মদ) বিক্রি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়তে শুরু করে।
বর্তমানে কেরু অ্যান্ড কোং- এর ছয়টি ইউনিট রয়েছে, এগুলো হলো– চিনি, ডিস্টিলারি, ফার্মাসিউটিক্যাল, বাণিজ্যিক খামার, (পরীক্ষামূলক) আকন্দবাড়িয়া খামার এবং জৈবসার। এগুলোর মধ্যে, ডিস্টিলারি, ফার্মাসিউটিক্যাল এবং জৈবসারের ইউনিটগুলোই শুধু মুনাফা করছে।
কাঁচামালের সরবরাহ নিয়ে উদ্বেগ
কেরু বর্তমানে কাঁচামাল নিয়ে কোনো সংকটে না থাকলেও, লিকারের চাহিদা এভাবে বাড়তে থাকলে– চলতি বছরের শেষদিকে তারা কাঁচামাল সংকটে পড়বে বলে অবহিত সূত্রগুলো জানিয়েছে।
বর্তমানে অ্যালকোহল উৎপাদনের জন্য বার্ষিক ২০ হাজার টন কাঁচামালের প্রয়োজন হয় কোম্পানিটির। এসব কাঁচামালের যোগান দেয় রাষ্ট্রায়ত্ত চিনির মিলগুলো।
কেরু আন্ড কোম্পানিসহ বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন (বিএসএফআইসি) এর ১৫টি চিনিকল রয়েছে। তবে ২০২০ সালে বিপুল লোকসানের কারণে সরকার ছয়টি চিনিকল বন্ধ করে দেয়।
কেরু অ্যান্ড কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক (অর্থায়ন) সাইফুল ইসলাম বলেন, 'নিজস্ব এবং আশেপাশের অন্যান্য চিনিকল থেকে আমরা কাঁচামাল সংগ্রহ করি। কিন্তু, বাড়তি চাহিদা মেটানোর জন্য এখন বিএসএফআইসির আওতাধীন সকল চিনিকল থেকেই সংগ্রহ করছি'।
ভবিষ্যতে কাঁচামালের সংকট দেখা দেওয়ার যে উদ্বেগ রয়েছে, সে প্রসঙ্গে কোম্পানির কর্মকর্তারা জানান, চাষের খরচের চেয়ে বাজারমূল্য কম হওয়ায় সাম্প্রতিক সময়ে আখ চাষ কমেছে। বিএসএফআইসি এবং কেরু আখ চাষ বৃদ্ধির চেষ্টা করছে।
একইসঙ্গে কৃষকদের উচ্চ ফলনশীল জাত চাষে উৎসাহ দিতে আখের দাম বাড়ানোর বিষয়েও ভাবছে বিএসএফআইসি।
কেরুর ডিস্টিলারি ইউনিটের প্রধান মো. ফিদা হাসান বলেন, 'বর্তমানে আখ মাড়াইয়ের কাজ চলছে। এই মুহূর্তে কাঁচামালের কোনো সংকট নেই। তবে এভাবে চাহিদা বাড়তেই থাকলে চলতি বছরের শেষদিকে একটা সংকট দেখা দিতে পারে'।
তিনি আরও বলেন, দাম কম পাওয়ায় কৃষকরা আখ চাষ কমিয়েছেন। বর্তমানে এক মণ আখের দাম মাত্র ১৮০ টাকা।
'তাই আখ চাষ বাড়াতে, মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সরকারও মূল্যবৃদ্ধির পক্ষে। খুব শিগগিরই এবিষয়ে একটা সিদ্ধান্ত আসবে'।