শেয়ার কমলেই মুনাফা! ‘শর্ট পজিশন' কী? যে কৌশলে বিপুল অর্থ হাতিয়েছে আদানি গ্রুপ
মার্কিন সংস্থা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ-এর প্রতিবেদন প্রকাশের পর বিপুল পতন ঘটেছে আদানি গ্রুপের সাতটি সংস্থার শেয়ারে। এর ফলে মার্কেট ভ্যালুতে ৪৮ বিলিয়ন ডলার খুইয়েছে গ্রুপটি। এই বিপর্যয়ের সাথে সাথে একটি পরিভাষা ব্যাপকভাবে সামনে এসেছে। সেটি হলো 'শর্ট পজিশন।'
হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, আদানি গ্রুপের ওপর বিপুল পরিমাণ ঋণের বোঝা রয়েছে। সেই ঋণের নিরাপত্তা হিসেবে সংস্থারই শেয়ারই বন্ধক রাখা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।
শর্ট পজিশন এমন একটি কৌশল যেখানে একজন বিনিয়োগকারী আগে থেকেই অনুমান করে ফেলেন যে কোনো নির্দিষ্ট স্টকের দাম কমবে। আর সেটা কাজে লাগিয়েই মুনাফা করেন। বিশ্লেষণ কাজে লাগিয়ে এই ধরনের বিনিয়োগকারীরা আন্দাজ করেন; বুঝে যান যে আগামী কয়েক দিন বা সপ্তাহের মধ্যেই সেই শেয়ারের দামে পতনের সম্ভাবনা রয়েছে। এরপর বিনিয়োগকারী কোনো ইনভেস্টমেন্ট ফার্মের থেকে সেই শেয়ারগুলো ধার করেন- অন্য কারো কাছে বিক্রির জন্য। অর্থাৎ শেয়ার না কিনেই বিক্রি!
এ ধরনের ইনভেস্টমেন্ট ফার্ম বা বিনিয়োগ সংস্থার হাতে সাধারণত বিপুল পরিমাণে স্টকের ভাণ্ডার থাকে; অথবা অনেক সময় তারা ঋণ দেওয়ার জন্য অন্য ফার্ম থেকেও স্টক ধার করে। অর্থাৎ, বিনিয়োগকারী স্টক ফেরত দেবেন, কিন্তু তার জন্য কিছুটা সময় পাবেন তারা।
ধরা যাক, কেউ যখন কোনো শেয়ার ধার নিয়েছে, তখন তার দাম ছিল ১০০ টাকা করে। আপনি জানেন সেই কোম্পানির অবস্থা ভালো নয়, আগামী ২ সপ্তাহে শেয়ার দর অনেক কমতে পারে। সেই অনুমান বা ভিত্তিতে আপনি শর্ট পজিশনে শেয়ার নিলেন।
দুই সপ্তাহ পর সত্যিই সেই শেয়ারের দাম কমে ৬০ টাকা হয়ে গেল। এবার সেই শেয়ার যখন বিক্রি হবে, আপনি ৪০ টাকা লাভ করবেন। একটা উদাহরণ দিয়ে বোঝানো যাক। ধরুন, আপনার এলাকার কারো একটি জমি রয়েছে, যেটির দাম ১৫ লাখ টাকা। আপনি অনুমান করলেন যে- এই জমির দাম মোটেও এত বেশি নয়, ভ্যালুয়েশন করালেই কমবে। সে অনুযায়ী আপনি জমি মালিককে বললেন এক সপ্তাহ সময় দিতে।
এরপর কোনো ক্রেতা খুঁজে তাকে জমি দেখালেন এবং তাকে বললেন যে, আপনি ১৫ লাখ টাকায় একটি জমি বেচবেন, কিন্তু এক সপ্তাহ পরে সেই জমি হস্তান্তর করবেন। আপাতত ১৫ লাখের সেই জমির দাম হিসাবে ১০ লাখ টাকা দিলেই হবে। হস্তান্তরের দিন বাকি ৫ লাখ দিতে হবে। ক্রেতাও তিনি চুক্তিতে রাজি হয়ে গেলেন।
এক সপ্তাহ পর দেখা গেল জমির আসল মূল্য সত্যিই কম, ধরা যাক ১০ লাখ টাকা। এদিকে আপনার কাছে তো ওই ক্রেতার দেওয়া ১০ লাখ টাকা আছেই। আপনি সেটা দিয়েই জমি মালিকের থেকে জমিটা কিনে নিলেন। এদিকে সেই অতিরিক্ত ৫ লাখ টাকাও ক্রেতার থেকে পেয়ে গেলেন। সেটি পেতেই তার হাতে জমিটি তুলে দিলেন। অর্থাৎ, আপনার মুনাফা হল ৫ লাখ টাকা। আপনার পকেট থেকে কোনো টাকা বিনিয়োগ না করেই এই মুনাফা করলেন।
আদানি নিয়ে রিপোর্ট
চলতি মাসে হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে তারা জানায়, আদানি গ্রুপে শর্ট পজিশনে বাজি ধরেছে তারা। তাদের দাবি, আদানি গোষ্ঠীর ঘাড়ে বিপুল পরিমাণে ঋণের বোঝা রয়েছে এবং তাদের অ্যাকাউন্টিং ঠিক নেই। এর পাশাপাশি তারা দাবি করেছে, আদানি গ্রুপ কয়েক দশক ধরেই নির্লজ্জের মতো স্টক ম্যানিপুলেশন এবং অ্যাকাউন্টিং জালিয়াতিতে জড়িত।
মার্কিন সংস্থাটির রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, আর্থিক দিক থেকে বেশ চাপের মধ্যে আছে আদানি গ্রুপ। আদানি গ্রুপের যে সাতটি সংস্থা শেয়ার বাজারে নথিভুক্ত আছে, সেগুলোর মধ্যে প্রায় ৮৫ শতাংশ নেতিবাচক প্রভাব আছে। তাই আদানি গ্রুপ আর্থিকভাবে স্পর্শকাতর জায়গায় আছে।
রিপোর্ট প্রকাশের সাথেসাথেই আদানি গ্রুপের কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দামে বিশাল পতন হয়। আদানি গোষ্ঠী যদিও এই রিপোর্টকে 'ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত' বলে উল্লেখ করেছে। এদিকে হিন্ডেনবার্গ তার প্রেক্ষিতে পাল্টা চ্যালেঞ্জ করেছে। তারা এক বিবৃতিতে বলেছে, 'রিপোর্ট যদি সত্যিই ভুল হয়, আদানি গ্রুপ আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করে আদালতে তা প্রমাণ করুক।'