তুরস্ক-সিরিয়ায় ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ২৩,৭০০ ছাড়ালো, জীবিত উদ্ধারের আশা কমে আসছে
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2023/02/11/74xz5ur77fmdbb262mg2qx6rne_0.jpg)
৪ দিন আগে বিধ্বংসী ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে তুরস্ক-সিরিয়া। গত দুই দশকের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক এ ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ২৩,৭০০। খবর রয়টার্সের।
তুরস্কের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, শুক্রবার (১০ ফেব্রুয়ারি) তুরস্কে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২০,২১৩ এ পৌঁছেছে। সিরিয়ায় নিহত সাড়ে ৩ হাজারের বেশি। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও চাপা পড়ে আছেন অনেকেই।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভূমিকম্প আঘাত হানার পর একশ ঘণ্টারও বেশি সময় পার হওয়ার কারণে ধ্বংসস্তুপের নিচ থেকে জীবিত কাউকে উদ্ধারের আশা ক্ষীণ হয়ে আসছে।
সিরিয়া এবং তুরস্কের বিধ্বস্ত শহরগুলোতে বহু মানুষ এখনও আশ্রয়হীন। তাদের কাছে নিরাপদ খাবার পানি নেই, বিদ্যুৎ নেই।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আশঙ্কা, এই পরিস্থিতিতে ভূমিকম্পের হাত থেকে বেঁচে যাওয়া আরো অনেক মানুষের মৃত্যু হতে পারে।
বৈরী আবহাওয়া, পর্যাপ্ত সরঞ্জাম ও সহায়তার অভাবে বারবার উদ্ধার অভিযান ব্যর্থ হচ্ছে, বেড়ে চলেছে মৃত্যুর মিছিল।
এদিকে ভূমিকম্প পরবর্তী সময়ে সাড়াদান নিয়ে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের সমালোচনায় মুখর হয়েছেন অনেকেই।
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2023/02/09/_128570783_7e8cc1cad6d93b9320edcffec9c951f19af0db8a0_245_6000_33751000x563.jpg)
তবে এরদোয়ান এসব সমালোচনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। তুর্কি প্রেসিডেন্টের ভাষ্যে, ভয়াবহ ভূমিকম্পে যে বিপুল পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তাতে দ্রুত সাড়াদান সহজ ছিল না।
সমালোচকরা বলছেন, সরকারের জরুরী পরিষেবাগুলো দ্রুত সাড়া প্রদানে ব্যর্থ হয়েছে, প্রস্তুতিরও ছিল যথেষ্ট ঘাটতি।
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2023/02/09/71905410-a780-11ed-8f65-71bfa0525ce3.jpg)
এরদোয়ান স্বীকার করেছেন যে, তাৎক্ষণিকভাবে সাড়াদান সহজ ছিল না। কিন্তু এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে।
তুরস্কের বিরোধীদলীয় নেতা কামাল কিলিচদারোগ্লু অবশ্য প্রেসিডেন্টের বক্তব্যের সাথে একমত নন।
"যদি একজনও দায়ী থেকে থাকেন, তাহলে সে হলো এরদোয়ান", বলেন তিনি।
এরদোয়ান এ দাবি অস্বীকার করে পাল্টা বলেছেন, দুর্যোগের পর দেশে ঐক্যের প্রয়োজন। এমন সময়েও যারা রাজনৈতিক স্বার্থে নেতিবাচক প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন, তাদেরকে দেখে নেবার সময় এখন তার নেই।
ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়াদের বাঁচাতে সময় ফুরিয়ে আসছে দ্রুত; অন্যদিকে হিম হয়ে আসা আবহাওয়ায়, খোলা আকাশের নিচে তৃতীয় দিনের মতো রাত কাটাচ্ছেন হাজারো মানুষ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক কর্মকর্তা ইতিমধ্যে সতর্ক করেছেন, বৈরী আবহাওয়া ভূমিকম্পে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের অধিকতর ক্ষতি করতে পারে।
সংস্থাটির আর্থকোয়েক রেস্পন্স ইনসিডেন্ট ম্যানেজার রবার্ট হোল্ডেন বলেছেন, "এখন আমরা যে সেকেন্ডারি দুর্যোগের মধ্যে আছি, তা প্রাথমিক বিপর্যয়ের চেয়েও বেশি লোকের ক্ষতি করতে পারে। আমাদের দ্রুত এগোতে হবে।"
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2023/02/09/0763abd0-a615-11ed-906a-1194b2258d08.jpg)
অন্যদিকে বহু বছর ধরে চলা সংঘাতের ফলে সিরিয়ার অবকাঠামোগত পরিস্থিতি আগে থেকেই ক্ষয়িষ্ণু। ভূমিকম্পের পরে সেখানে ত্রাণ আর সহায়তা পৌঁছানো এখন আরও জটিল আকার ধারণ করেছে।
ভূমিকম্পে সড়কের অবস্থা খারাপ হওয়ায় তুরস্ক এবং সিরিয়ার মধ্যবর্তী বাব আল-হাওয়া ক্রসিং বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু নিশ্চিত করেছেন, দুর্যোগ পরবর্তী সহায়তা পেতে তারা দুটি সীমান্তে দ্বার খোলার কাজ করছেন।
সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দিনের শুরুতে তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের গাজিয়ানতেপে সিরিয়া সীমান্তের কাছে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। পরে একই দিনে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার আরেকটি ভূকম্পন আঘাত হানে।
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার (ইউএসজিএস) মতে, সোমবার স্থানীয় সময় ভোর ৪টা ১৭ মিনিটের দিকে আঘাত হানে প্রথম ভূমিকম্পটি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমান, তুরস্ক এবং সিরিয়া জুড়ে আড়াই কোটিরও বেশি মানুষ এই ভূমিকম্পের শিকার হয়েছেন।
দুটি দেশেই হাজার হাজার ভবন ধসে পড়েছে এবং ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া মানুষদের বাঁচাতে উদ্ধারকর্মীরা প্রাণপণ প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন।
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2023/02/09/a1f44e10-a6d9-11ed-ac21-1b4349969bdf.jpg)
আফটারশকের আতংকে প্রচুর মানুষ বৃষ্টি ও তুষারপাতের মধ্যে রাত কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন।
উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকায় ত্রাণ সংস্থা হোয়াইট হেলমেটস ইমার্জেন্সি রেসপন্স গ্রুপ বলছে, ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়াদের বাঁচাতে সময় দ্রুত ফুরিয়ে আসছে।
ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন নিশ্চিত করেছে, সরকারী অনুরোধে সিরিয়ায় সহায়তার জন্য তারা ৩.১ মিলিয়ন পাউন্ড অর্থ সহায়তা প্রেরণ করবে। সাথে শর্ত জুড়ে দিয়েছে, এইড বা সহায়তাটি অবশ্যই সরকারশাসিত এবং বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত, উভয় এলাকায় পৌঁছে দিতে হবে।
তুরস্ক পৃথিবীর অন্যতম সক্রিয় ভূমিকম্প প্রবণ অঞ্চলগুলোর একটিতে অবস্থিত।
বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এর আগে ১৯৯৯ সালে দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে একটি শক্তিশালী ভূমিকম্পে ১৭ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছিল।
সর্বশেষ ভূমিকম্পটি ঘটেছে তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তের কাছে দক্ষিণ-পশ্চিম থেকে উত্তর-পশ্চিমমুখী 'পূর্ব আনাতোলিয়ান ফল্ট'-এর চারপাশে।
ভূতত্ত্ববিদরা বহুদিন ধরে বলে আসছিলেন যে, এই ফল্টটি অত্যন্ত বিপজ্জনক।
(এটি একটি ডেভেলপিং স্টোরি এবং কিছুক্ষণ পরপর আপডেট করা হচ্ছে)