'আমাকে বাঁচাও, এখান থেকে বের করো', ধ্বংসস্তূপে আটকা সিরীয় শিশুর করুণ আকুতি
"আমাকে এখান থেকে বের করো। বিনিময়ে তুমি যা বলবে আমি শুনব, তোমার গোলাম হয়ে থাকব," উদ্ধারকারীদের উদ্দেশ্যে এভাবেই আকুতি ঝরে পড়ে শিশু মারিয়ামের কণ্ঠে।
সিরিয়ার উত্তরাংশে ভূমিকম্পের ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আটকে থাকা দুটি শিশুকে প্রায় ৩৬ ঘণ্টা পর জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। এদেরই একজন মারিয়াম। সঙ্গী শিশুটি মারিয়ামের ছোট ভাই, ইলাফ। কংক্রিটের ভারী দেয়ালের চাপ নিজে সয়ে ভাইকে স্বস্তি দিয়ে গেছে ছোট্ট এই মেয়েটি।
উদ্ধারকর্মীদের করা ভিডিওতে দেখা যায়, মারিয়াম শুধু তার একটি হাত নড়াতে সক্ষম ছিল আর সেটি দিয়েই ধ্বংসস্তূপের ভার, ধুলাবালি প্রভৃতি থেকে নিজের ভাইকে রক্ষা করে গেছে।
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিরিয়ার হারাম অঞ্চলের ছোট্ট একটি গ্রাম, বেসনায়া-বেসাইনাহতে মারিয়ামদের বাড়ি।
মারিয়ামের কান্নার জবাবে উদ্ধারকর্মীরা তাকে অভয় দেন, মন শক্ত করতে বলেন।
সোমবার ভোররাতে স্ত্রী আর তিন সন্তানকে নিয়ে ঘুমাচ্ছিলেন মুস্তাফা জাহির আল-সাইদ। কে জানত, ৭ দশমিক ৮ মাত্রার তীব্র শক্তিশালী এক ভূমিকম্পে আর কিছুক্ষণ পরই কেঁপে উঠবে সবকিছু!
"দেখলাম মাটি কাঁপছে…মাথার উপর সব খসে পড়তে শুরু করলো। ভগ্নাবশেষের মধ্যেই কাটালাম পাক্কা দুই দিন। আমরা যে অনুভূতির মধ্য দিয়ে গেছি, তা যেন আর কারো সাথে না হয়।"
ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে থাকা আল-সাইদ আর তার পরিবার কোরআন তেলাওয়াত করতে থাকেন; উচ্চ স্বরে চিৎকার করেন যেন কেউ তাদের খুঁজে পায়।
"অবশেষে মানুষ আমাদের শোনে, আমাদের উদ্ধার করে- আমি, আমার স্ত্রী, আমার সন্তানেরা- সকলেই বেঁচে আছি।"
ভিডিওতে দেখা গেছে, মারিয়াম এবং ইলাফকে যখন কম্বলে মুড়িয়ে ধ্বংসস্তূপ থেকে বের করা হচ্ছিল, তখন সে আনন্দ কীভাবে ছড়িয়ে যায় সবার মাঝে! শিশু দুটিকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে, সেখানেই তারা চিকিৎসা নিচ্ছে।
কিন্তু সময় যতো গড়াচ্ছে, জীবিতদের উদ্ধারের আশা ততোই ক্ষীণ হয়ে আসছে। হিমেল আবহাওয়া উদ্ধার প্রচেষ্টা ব্যাহত করছে।
সিরিয়ার মানবিক সহায়তাকারী গোষ্ঠী হোয়াইট হেলমেটসের তথ্য মতে, আল-সাইদ যে এলাকার, সেখানে অন্তত ১২০০ লোক নিহত হয়েছে।
ধ্বংসস্তুপের নিচে এখনও শত শত পরিবার চাপা পড়ে আছে, ফলে নিহত এবং আহতের প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি বলেই আশংকা গোষ্ঠীটির।
সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সানার তথ্য অনুযায়ী, মৃতের সংখ্যা ২৫০০ জনের ওপরে ঠেকেছে।
ভূমিকম্প সংঘটনের আগেই জাতিসংঘ বলেছিল, সিরিয়ার ৭০ শতাংশ নাগরিকের মানবিক সহায়তা প্রয়োজন।
ভয়াবহ ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়ায় এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৮,৭০০ ছাড়িয়ে গেছে। বিপর্যয়ের জেরে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ক্ষতিগ্রস্ত ১০টি প্রদেশে তিন মাসের জরুরি অবস্থা জারি করেছেন।