আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সমন্বয় করে রড ও কয়লার দাম নির্ধারণ করবে সরকার
আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সমন্বয় করে দেশের বাজারে এমএস রড ও কয়লার দাম নির্ধারণ করা হবে। কারণ আমদানি নির্ভর এ দুটো পণ্যই বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় বেশি দামে দেশের বাজারে বিক্রি হচ্ছে। এজন্য রড ও কয়লার কাঁচামালসহ অন্যান্য উৎপাদন সামগ্রীর দাম পর্যালোচনা করে যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করা হবে। বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনকে (বিটিটিসি) এই পর্যালোচনা করার দায়িত্ব দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বৃহস্পতিবার কয়লা ও এমএস পণ্যের মূল্য এবং বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত এক সভায় ট্যারিফ কমিশনকে এ দায়িত্ব দেওয়া হয়। কমিশন আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পর্যালোচনা করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে রড ও কয়লার দাম কী হওয়া উচিত তা জানাবে।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভাটি সঞ্চালনা করেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ। সভায় রড প্রস্তুতকারক সমিতি স্টীল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সহ সভাপতি সুমন চৌধুরী, জিপিএইচ ইস্পাতের পরিচালক কামরুল ইসলাম, বাংলাদেশ ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতির সভাপতি খলিলুর রহমান, আবাস খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাবের সহ সভাপতি সোহেল রানাসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
সম্প্রতি কয়লা ও এমএস রডের দাম অনেক বেড়ে গেছে। ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, গতকাল রাজধানীর বাজারগুলোতে খুচরা পর্যায়ে প্রতি টন ৬০ গ্রেডের এমএস রড কোম্পানি ভেদে ৯০ থেকে ৯৫ হাজার ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এক সপ্তাহ আগেও এই মানের রড সর্বনিম্ন ৮৫ হাজার ৫০০ টাকায় পাওয়া গেছে। আর এক মাস আগে পাওয়া গেছে ৮৩ হাজার থেকে ৯১ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত দরে।
একইভাবে আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় দেশের বাজারে কয়লার দাম বেশি। গত কয়েকমাস ধরে বেশি দাম দিয়ে এই জ্বালানি পণ্য কিনতে হচ্ছে গ্রাহকদের। দেশে কয়লার বড় গ্রাহক ইটভাটাগুলো। পরিবেশ সম্মত উপায়ে ইট উৎপাদনের জন্য ভাটায় জ্বালানি হিসেবে কয়লার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। কয়লা ব্যবসায়ীরা এর সুবিধা নিচ্ছে। বছরে প্রায় ৭৫ লাখ টন কয়লার চাহিদা রয়েছে দেশে।
বৈঠকে এমএস পণ্য ও কয়লার চাহিদা, সরবরাহ, আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বাজার পরিস্থিতি নিয়ে একটি প্রেজেনটেশন করে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন।
কমিশন জানিয়েছে, গত বছরের জুলাই থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে রডের কাঁচামাল এমএস স্ক্র্যাপের দাম ধারাবাহিকভাবে কমছে। জানুয়ারি মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন এমএস স্ক্র্যাপের গড় দর ছিলো ৪৫৯.১১ মার্কিন ডলার। গত জুলাইয়ে প্রতি টন স্ক্র্যাপের দাম ছিলো ৫৯০.৭৫ ডলার। এই হিসেবে ছয় মাসের ব্যবধানে স্ক্র্যাপের আন্তর্জাতিক দর ২২ শতাংশের বেশি কমেছে। বাংলাদেশের আমদানিকারকরাও স্ক্র্যাপ আমদানিতে এলসি খোলার ক্ষেত্রে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে কম দামে খুলে এসেছে। জানুয়ারি মাসে এসে ডিসেম্বরের তুলনায় বেশি দামে এলসি খুলেছে বলে জানিয়েছে ট্যারিফ কমিশন।
জানুয়াতিতে প্রতি টন স্ক্র্যাপ আমদানিতে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা ৪৪৯.১৪ ডলারে এলসি খুলেছেন, যা ডিসেম্বরে ছিলো ৪৩৪.৯৮ ডলার। রড তৈরির খরচের প্রায় ৬৫ শতাংশ হয় স্ক্র্যাপ বাবদ। কমিশন জানিয়েছে, ছোট, বড় ও মাঝারি মিলিয়ে প্রায় ৪০০ স্টিল মিল রয়েছে। বর্তমানে এমএস পণ্যের চাহিদা প্রায় ৭.২ মিলিয়ন টন। দেশের মিলগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ৯ মিলিয়ন টন। কয়েকটি বড় মিল মোট চাহিদার ৫০% সরবরাহ করে থাকে। মিলগুলো টি.এম.টি বার, ফ্লাস স্টিল ও স্টেইনলেস স্টিল তৈরি করে। দেশে সর্বাধিক ব্যবহৃত স্টিল হচ্ছে টি.এম.টি বার। স্টিলের চাহিদার ৬০% সরকারি খাতে, ২৫% হাউজহোল্ডে এবং ১৫% বাণিজ্যিকভাবে নির্মাণ খাতে ব্যবহার হয়। ট্যারিফ কমিশন মনে করে এই অত্যাবশ্যকীয় পণ্যটির দাম নির্ধারণ করে দেওয়া উচিত।
একইভাবে কয়লা বিষয়ে কমিশনের বক্তব্য হচ্ছে, আন্তর্জাতিক বাজারে কয়লার দাম কমছে। কিন্তু দেশের বাজারে তার যথাযথ প্রতিফলন হচ্ছে না।
গত নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা প্রতি টন কয়লার দাম ১১৫ থেকে ১১৯ ডলার ধরে এলসি খুলেছেন। ফলে দেশের বাজারে কয়লার দাম বৃদ্ধির যুক্তি নেই। ফলে কয়লার দিাম নির্ধারণ করে দেওয়া যেতে পারে। পাশাপাশি কয়লাকে বিকল্প জ্বালানি হিসেবে বিবেচনা করে সুনির্দিষ্ট ভ্যাট আরোপ করারও সুপারিশ করেছে কমিশন। এতে কয়লার দাম কিছুটা কমতে পারে। পাশাপাশি প্রতি ৩ মাস পরপর আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে কয়লার দাম নির্ধারণের সুপারিশ করেছে কমিশন।
বৈঠক সূত্র জানায়, কয়লা ও এমএস রডের দাম স্বাভাবিক পর্যায়ে রাখতে ব্যবসায়ীদের অনুরোধ করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি অস্বাভাবিকতা প্রমাণিত হলে সরকার কঠোর পদক্ষেপ নেবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
স্টিল মিল মালিকদের প্রতিনিধিরা বৈঠকে গ্যাসের দাম বাড়ানো, ডলারের বেশি দামের কারণে রডের দাম বাড়ছে বলে জানিয়েছেন।
তবে ট্যারিফ কমিশনের প্রতিনিধি বৈঠকে জানিয়েছেন, গ্যাসের দাম বাড়ানোর কারণে রডের দাম যতটা বাড়তে পারে তার চেয়ে বেশি বেড়েছে।