৮৭% গৃহকর্মী সাপ্তাহিক ছুটি পান না: গবেষণা
প্রায় ৮৭% গৃহকর্মীর সাপ্তাহিক ছুটি কাটানোর কোন অভিজ্ঞতা নেই। তবে তাদের মধ্যে একটি ছোট অংশ প্রায় ১.৫% অর্জিত ছুটি, প্রায় ৩% বেতনসহ মাতৃত্বকালীন ছুটি ও প্রায় ৬% বিনা বেতনে মাতৃত্বকালীন ছুটি কাটানোর সুযোগ পেয়ে থাকেন।
এছাড়াও দক্ষতা উন্নয়ন বিষয়ে জরিপকৃত গৃহকর্মীদের প্রায় ৯৯% কোন ধরণের দক্ষতা উন্নয়ন সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ পায়নি।
রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে 'শোভনকাজ ও কর্মক্ষেত্রে জেন্ডার সহিংসতা: বাংলাদেশের নারী গৃহকর্মীদের উপর পরিচালিত গবেষণা' শীর্ষক প্রতিবেদন উপস্থাপন কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ লেবার স্টাডিজ (বিলস) এবং সুনীতি (সিকিউরিং রাইটস অফ উইমেন ডমেস্টিক ওয়াকার্স ইন বাংলাদেশ) প্রকল্পের পক্ষে ডিনেট গবেষণাটি পরিচালনা করেছে।
৪৫৬ জন আবাসিক, ৩৭০ জন খন্ডকালীন ও ১৫০ জন নিয়োগকর্তা এর পরিমাণগত এবং গুণগত উভয় পদ্ধতির তথ্য ব্যবহার করে এবং গুণগত তথ্য প্রাসঙ্গিক স্টেকহোল্ডারদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল এ গবেষণার জন্য।
তবে প্রায় ৮৫% নিয়োগকর্তা মনে করেন যে, জীবন দক্ষতা সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ দিলে তাদের মাঝে অধিকার সচেতনতা ও কাজের স্বীকৃতি বৃদ্ধি পাবে।
প্রায় ৯৯% গৃহকর্মীদের কোন ধরণের পেশাকালীন ঝুঁকি বা বিপদকালীন সুরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয় না। গৃহকর্মীরা বিবিধ সামাজিক সুরক্ষা যেমনঃ চাকরি থেকে বহিষ্কার, বহিষ্কার পরবর্তী সুবিধাদি দান, প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্রাচুইটি, পেনশন, দুর্ঘটনা সম্পর্কিত সুবিধাদি, চিকিৎসা ভাতা ইত্যাদি কখনো পান না।
শতভাগ ক্ষেত্রে গৃহকর্মীর নিয়োগের আনুষ্ঠানিক চুক্তিপত্র নেই। তাদেরকে নিয়োগকর্তা মৌখিক চুক্তিপত্রের মাধ্যমে নিয়োগ দিয়েছে। অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়, প্রায় ২৬% গৃহকর্মীর কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিতি কিংবা বিলম্বের কারণে বেতন কাটা হয়েছে। বাসায় থাকা গৃহকর্মীদের ক্ষেত্রবিশেষে দৈনিক ১০ থেকে ১৪ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। অন্যদিকে দৈনিক গৃহকর্মীরা কাজের চুক্তি অনুযায়ী স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে। বাংলাদেশের গৃহকর্মীদের সাপ্তাহিক কিংবা উৎসবকালীন ছুটি কাটানোর প্রচলন নেই।
শ্রম অধিদপ্তরের পরিচালক বিল্লাল হোসেন শেখ বলেন, "গৃহকর্মীদের সুরক্ষার জন্য সুনির্দিষ্ট আইন যেমন থাকতে হবে, তেমনি সাজাও থাকতে হবে। শুধু সচেতনতা দ্বারা আসলে খুব বেশি কাজ হয় না।"
জাতীয় মানবাধিকার কমিশন বাংলাদেশের উপপরিচালক সুস্মিতা পাইক বলেন, "ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সহ সমাজের পিছিয়ে পড়া সবার কথা ভাবি কিন্ত গৃহকর্মীদের কথা ভাবি না আমরা। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে কাউকে পিছনে না ফেলে এদেরকে নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে।"
ডিনেটের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক এম শাহাদাৎ হোসাইন বলেন, "গবেষণার ফলাফল বলছে, বাংলাদেশে গৃহকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এখনো অনেক কিছু করতে হবে। তাদের অনানুষ্ঠানিক থেকে আনুষ্ঠানিক খাতে স্থানান্তর করার জন্য সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে। সরকার এক্ষেত্রে তা নিশ্চিত করতে ভূমিকা পালন করতে পারে।"
কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন বিলস এর যুগ্ম মহাসচিব ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খান, অক্সফাম বাংলাদেশ এর প্রকল্প সমন্বয়কারী তারেক আজিজ, আইএলও এর জাতীয় প্রকল্প সমন্বয়কারী এনি দ্রং, লেবার রাইটস সাংবাদিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান, চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের গবেষক ও প্রধান নির্বাহী মোঃ জাকির হোসেন খান, গ্লোবাল এফেয়ারস কানাডা এর সিনিয়র ডেভেলপমেন্ট অ্যাডভাইজার সিলভিয়া ইসলাম, গ্লোবাল এফেয়ারস কানাডা এর হেড অব কর্পোরেশন জো গুডিংস, বিশ্ব ব্যাংকের পরামর্শক এ বি এম খোরশেদ সহ আরও অনেকে।