রোমান উৎসব নাকি মৃত্যুদণ্ড উদযাপন- ভালোবাসা দিবসের উৎপত্তি আসলে কীভাবে?
বছর ঘুরে আবারও এল ভালোবাসা দিবস। কেউ সঙ্গীকে নিয়ে দিনটাকে বিশেষভাবে কাটাবেন, কেউবা আবার মনে একা থাকার মিছে আনন্দ বা নিঃসঙ্গতার একটু দুঃখ নিয়ে দিন পার করবেন।
ভালোবাসা দিবস উদযাপনের চমৎকার একটি দিন। কিন্তু এ দিনটি এল কোত্থেকে? আর আমরাই বা দিনটার জন্য এত উন্মুক্ত হয়ে থাকি কেন?
দীর্ঘসময় ধরেই মানুষ এ প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছে। ১৮৫৩ সালে মার্কিন পত্রিকা দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস এ দিনটির উৎপত্তি অনুসন্ধানের চেষ্টা করেছিল। কিন্তু এ রহস্যের কোনো উত্তর সে সময় জানাতে পারেনি এটি।
২০২৩ সালে এসে আবারও ভালোবাসা দিবসের উৎস জানার চেষ্টা করেছে দেশটি। জানিয়েছে এ দিবস নিয়ে প্রচলিত কিছু তত্ত্বের কথা।
রোমান উৎপত্তি
ভালোবাসা দিবসের উৎপত্তির সবচেয়ে প্রচলিত ব্যাখ্যাটি হচ্ছে, এর শুরুটা হয়েছিল প্রচীন রোমান উৎসব লুপারকালিয়ার মাধ্যমে। একে অপরের সঙ্গে জুটি বেঁধে মদ্যপানের মাধ্যমে এ উৎসব পালন করতেন রোমান নারী ও পুরুষেরা।
দশকের পর দশক ধরে সংবাদপত্রগুলো ভালোবাসা দিবসের সূচনার কথা জানাতে এ গল্পের কথাই জানিয়েছে।
কয়েক শতাব্দী ধরে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে লুপারকালিয়া উৎসবের আয়োজন করা হতো। পরে রোমান সাম্রাজ্য পৌত্তলিকতা ছেড়ে খ্রিস্টান ধর্মের দিকে ঝোঁকার পর এ উৎসবটি সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের সম্মানে উদযাপন করা শুরু হয়।
২০১১ সালে ন্যাশনাল পাবলিক রেডিওকে নোয়েল লেন্সকি নামক ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন ইতিহাসবিদ বলেন, পঞ্চদশ শতকে প্রথম পোপ গেলাসিয়াস এ উৎসবকে খ্রিস্টান ছুটির দিন ঘোষণার আগে এটি অমিতাচার ও নগ্নতার জন্য পরিচিত ছিল।
সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের জীবন নিয়ে খুব বেশি বিশ্বাসযোগ্য তথ্য নেই। ১৯২৩ সালে দ্য টাইমস এক প্রতিবেদনে জানায়, ভ্যালেন্টাইন্স ডে সম্ভবত ভ্যালেন্টাইন নামক দুইজন সেন্টকে একটি চরিত্র হিসেবে স্মরণ করে উদযাপন করা হয়।
১৯৬৫ সালে দ্য বোস্টন গ্লোব-এ প্রকাশিত জনপ্রিয় একটি গল্প থেকে জানা যায়, রোমান সেনাদেরকে বিয়ে থেকে বিরত রাখতে সম্রাট ক্লডিয়াস একটি আদেশ জারি করেছিলেন। সে আদেশ লঙ্ঘন করে গ্রেপ্তার হন সেন্ট ভ্যালেন্টাইন।
ধর্ম বিষয়ে অতিরিক্ত উৎসাহের দরুন শিরশ্ছেদের শিকার হন সেন্ট ভ্যালেন্টাইন। তার মৃত্যুকে উদযাপন করতে রোমান পুরুষেরা একটি ভাণ্ড থেকে উপযুক্ত বয়সের নারীদের নাম বেছে নেওয়ার এক উৎসবের আয়োজন করেছিলেন।
'এ প্রথা দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত জার্মানি ও ইংল্যান্ডে প্রবেশ করে,' দ্য গ্লোব এর প্রতিবেদনে জানায়।
অথবা ফেব্রুয়ারিতে বসন্ত উদযাপনের সুযোগ
এ তত্ত্ব অবশ্য সবাই মানতে চান না।
কানসাস বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়াত অধ্যাপক জ্যাক বি. অরুচ জেফ্রি চসারকে নিয়ে গবেষণার অংশ হিসেবে ভ্যালেন্টাইন্স ডে নিয়ে গবেষণা করেন। তিনি নিশ্চিত ছিলেন, সেন্ট ভ্যালেন্টাইন সম্পর্কে আমাদের আধুনিক ধারণগুলোর উৎস চসার।
১৯৮১ সালে 'সেন্ট ভ্যালেন্টাইন, চসার, অ্যান্ড স্প্রিং ইন ফেব্রুয়ারি' শীর্ষক একটি অ্যাকাডেমিক রচনায় অরুচ দাবি করেন, ১৪ শতকের শেষে চসার তার 'পার্লামেন্ট অব ফাউলস' এবং 'দ্য কম্পলেইন্ট অব মার্স' কবিতা দুটো লেখার আগে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে নিয়ে কোনো রোমান্টিক ঐতিহ্য বিষয়ে কোনো নথিভুক্ত প্রমাণ ছিল না।
হয়তো উপযুক্ত বলে চসার রোমাঞ্চের সঙ্গে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে যুক্ত করেছিলেন: ভ্যালেন্টাইনের সেইন্ট'স ডে ১৪ ফেব্রুয়ারি তারিখকেই ১৪ শতকের ব্রিটিশেরা বসন্ত শুরু হওয়ার তারিখ হিসেবে মানত, লেখেন অরুচ।
চসারের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে ব্যাপারটির আরেকটি দিকও ধরা পড়ে। ওই সময়ের ইউরোপীয়রা 'ভ্যালেন্টাইন'কে একটি শ্রুতিমধুর নাম হিসেবে বিবেচনা করত। আর ফেব্রুয়ারিতে অন্য যেসব সেন্টদের উদযাপন করা হতো, তাদের নামে খুব বেশি কাব্যিক আবেদন ছিল না।
তবে অরুচের এ তত্ত্ব খুব বেশি হালে পানি পায়নি। ২০১১ সালে ওই লেখাটি সম্পর্কে তিনি বলেন, 'আর্টিকেলটি কোনো পার্থক্য তৈরি করেনি। ভ্যালেন্টাইন ডে নিয়ে প্রতিবছর সব লেখাতেই একই মিথ বারবার আওড়ানো হয়।'
তবে উৎপত্তি নিয়ে যতই মতভেদ থাকুক, ভালোবাসা দিবস এখন উদযাপনের বড় উপলক্ষ; বসন্তের আমেজ গায়ে মেখে আপনিও মেতে উঠুন এর আনন্দে।