আজ হুমায়ুন আহমেদের ৭ম মৃত্যুবার্ষিকী
আজ কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১২ সালের এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। ক্যানসারের চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন তিনি।
দিবসটি উপলক্ষে পরিবারের পক্ষ থেকে নুহাশ পল্লীতে নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।
শুক্রবার (১৯ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টায় লেখকের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন হুমায়ুন আহমেদের ছোট ভাই কার্টুনিস্ট এবং মাসিক উন্মাদের সম্পাদক ও প্রকাশক আহসান হাবীব ও তার স্ত্রী আফরোজা আমিন, বোন সুফিয়া হায়দার, রোকসানা আহমেদ, অন্যপ্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম, আগামী প্রকাশনীর ওসমান গনি, অভিনেতা সৈয়দ হাসান সোহেলসহ প্রমুখ ।
এ বছর দেশের বাইরে থাকায় লেখকের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন এবং তার দুই ছেলে নিশান ও নিনিদ তার ৭ম মৃত্যুবার্ষিকীর কর্মসূচিতে অংশগ্রহন করতে পারেননি।
লেখক হুমায়ূন আহমেদের ছোটভাই আহসান হাবিব জানান, হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে পারিবারিকভাবে একটি মিউজিয়াম স্থাপনেরও পরিকল্পনা রয়েছে। তাকে নিয়ে একটি আর্কাইভ নির্মাণ করা হয়েছে। অনেকে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে গবেষণা করছেন। এ আর্কাইভ গবেষণা কাজে সহায়তা করবে।
তিনি আরও বলেন, হুমায়ূন আহমেদের সকল স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। তবে তার অনেক স্বপ্নই বাস্তবায়িত হয়েছে। ক্যান্সার হাসপাতাল নির্মাণসহ অনেক স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে রয়েছে। তিনি প্রকাশক ও সংশ্লিষ্টদের প্রতি হুমায়ূন আহমেদের লেখাগুলো নির্ভুলভাবে প্রকাশের অনুরোধ করেন।
হিমু পরিবহনের সভাপতি আসলাম হোসেন জানান, সকালে নরসিংদী, গাজীপুর ফরিদপুর ও ঢাকা থেকে হিমু পরিবহনের ৬০ জন সদস্য নুহাশ পল্লীর কর্মসূচিতে যোগ দেন। তারা একযোগে ৪০ জেলায় প্রিয় লেখকের স্মরণে নানা কর্মসূচি পালন করছেন। তার মধ্যে বৃক্ষরোপণ, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী ও বইমেলা রয়েছে। হিমুদের উদ্যোগে ইতোমধ্যে ১০ জেলায় পাঠাগার স্থাপন করা হয়েছে।
হুমায়ূন আহমেদ ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুরে মামাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। ডাক নাম কাজল। বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ও মা আয়েশা ফয়েজের প্রথম সন্তান তিনি। বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা আর মা ছিলেন গৃহিণী।
তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়ো। কথাসাহিত্যিক জাফর ইকবাল তার ছোটো ভাই। সবার ছোটো ভাই আহসান হাবীব নামকরা কার্টুনিস্ট ও রম্যলেখক।
উপন্যাসে নিজের প্রতিভার বিস্তার ঘটলেও হুমায়ুন আহমেদের লেখালেখির শুরুটা ছিল কবিতা দিয়ে। এরপর নাটক, শিশুসাহিত্য, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী, উপন্যাস লিখেছেন,পরিচালনা করেছেন বেশ কিছু চলচ্চিত্র।
১৯৭২ সালে প্রকাশিত হয় তার প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’। উপন্যাসে ও নাটকে তার সৃষ্ট চরিত্রগুলো বিশেষ করে ‘হিমু’, ‘মিসির আলী’, ‘শুভ্র’ তরুণ-তরুণীদের কাছে হয়ে ওঠে জনপ্রিয়।
তার পরিচালিত চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে আগুনের পরশমণি, শ্যামল ছায়া, শ্রাবণ মেঘের দিন, দুই দুয়ারী, চন্দ্রকথা ও নয় নম্বর বিপদসংকেত, ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ প্রভৃতি।
বাংলা সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পদক ‘একুশে পদক’ লাভ করেন। এছাড়া তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮১), হুমায়ুন কাদির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯০), লেখক শিবির পুরস্কার (১৯৭৩), জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৯৩ ও ১৯৯৪), বাচসাস পুরস্কার (১৯৮৮) লাভ করেন।
দেশের বাইরেও তার জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়েছে। জাপান টেলিভিশন ‘এনএইচকে’ তাকে নিয়ে নির্মাণ করেছে ১৫ মিনিটের তথ্যচিত্র ‘হু ইজ হু ইন এশিয়া’।
হুমায়ূন আহমেদের শরীরে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মরণব্যাধি ক্যানসার ধরা পড়ে। এরপর তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে যান। সেখানে ২০১২ সালের জুলাই মাসের ১৬ তারিখে তিনি চলে যান লাইফ সাপোর্টে। সেই অবস্থাতেই ১৯ জুলাই বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১১টায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। নিউইয়র্ক থেকে ২০১২ সালের ২৩ জুন দেশে ফিরিয়ে আনা হয় হুমায়ূন আহমেদের মরদেহ। ২৪ জুন তাকে সমাহিত করা হয় তার গড়ে তোলা গাজীপুরের নুহাশপল্লীর লিচুতলায়।