গৌতম আদানির বড় ভাই বিনোদের অফশোর কোম্পানির সাম্রাজ্যের অন্দরে
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক শর্ট সেলার কোম্পানি হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের জানুয়ারি মাসের শেষে প্রকাশিত হওয়া প্রতিবেদনে আদানি গ্রুপের ৬০ বছর বয়সী চেয়ারম্যান ভারতীয় বিলিয়নেয়ার গৌতম আদানির নাম ৫৪ বার উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনটিতে আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে অ্যাকাউন্টিং জালিয়াতি এবং স্টক ম্যানিপুলেশনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
অন্যদিকে, ঐ একই প্রতিবেদনে চেয়ারম্যানের তুলনামূলক কম পরিচিত ভাই বিনোদ আদানির নাম উল্লেখ করা হয়েছে ১৫১ বার, যা অন্য যেকোনো ব্যক্তির তুলনায় বেশি। কারণ তাদের দাবি অনুযায়ী, যে কেলেঙ্কারি গৌতম আদানিকে সাম্প্রতিক সময়ে খবরের শিরোনাম বানিয়েছে, সে কেলেঙ্কারির একেবারে কেন্দ্রে গৌতম আদানি নন, রয়েছেন বিনোদ আদানি।
হিন্ডেনবার্গ রিপোর্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিনোদ 'অনেকগুলো অফশোর কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করে সেগুলোর সাহায্যে এক গোলকধাঁধা তৈরি করেছেন', যার সাহায্যে 'ভারতে থাকা আদানি গ্রুপের কোম্পানিগুলো থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার সরানো হয়েছে, আর এর বেশিরভাগ লেনদেনই হয়েছে গোপনে'। এর ফলে আদানি গ্রুপ ভারতীয় আইনকে ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ পেয়েছে। এই আইন অনুযায়ী, কোনো পাবলিক-ট্রেডিং স্টকে থাকা কোম্পানির কমপক্ষে ২৫ শতাংশ শেয়ার ঐ কোম্পানির মালিকের সাথে জড়িত কারো অধীনে থাকতে পারবে না।
তবে আদানি গ্রুপ তাদের চেয়ারম্যানের ভাইয়ের সাথে মালিকানার সম্পর্ক অস্বীকার করেছেন। হিন্ডেনবার্গ প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পাঁচ দিন পর এর পাল্টা প্রত্যুত্তরে লেখা ৪১৩ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে আদানি গ্রুপ দাবি করে, "বিনোদ আদানি পাবলিক লিস্টে থাকা আদানি গ্রুপের কোনো প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার পদে নেই, এমনকি এসব প্রতিষ্ঠানের নিয়মিত কার্যক্রমেও তার কোনো অংশগ্রহণ নেই।"
তবে ফোর্বস এর আগেও বিনোদ আদানির সাথে সম্পর্কযুক অফশোর কোম্পানির সাথে আদানি গ্রুপের অপ্রকাশিত লেনদেনের খবর পেয়েছে, যেগুলোকে আদানি গ্রুপের লাভের জন্যই তৈরি করা হয়েছে বলে মনে হয়। এই চুক্তিগুলো হিন্ডেনবার্গ প্রতিবেদনে থাকা গোপন লিভারেজ এবং অ্যাকাউন্টিংয়ে অনিয়মের অভিযোগকেও আরও শক্ত ভিত দিয়েছে।
অস্ট্রেলিয়া-ভিত্তিক বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান ক্লাইমেট এনার্জি ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপক টিম বাকলি জানান, "আমি সবসময়েই ভেবেছি এটা একটা যৌথ উদ্যোগ। গৌতম বন্ধুত্বপূর্ণ উষ্ণ ব্যক্তিত্ব যিনি সবার সামনে নিজেকে প্রকাশ করেন। অন্যদিকে বিনোদ এর সবকিছুর পেছনে থাকা ব্যক্তি, ট্যাক্স হ্যাভেনের মাস্টারমাইন্ড। আসল পাপেট মাস্টার।"
ফোর্বসের অনুরোধ সত্ত্বেও আদানি গ্রুপ এবং বিনোদ আদানি কোনো প্রত্যুত্তর দেননি। (বিনোদের ইমেইল ঠিকানা আদানি গ্লোবাল ডোমেইনের অন্তর্ভুক্ত, যে নামে দুবাইয়ে বেশ কিছু সম্পত্তি রয়েছে।)
আদানি গ্রুপের সাথে বিনোদের যে লেনদেন রয়েছে তা বেশ কয়েকবার সাধারণ চোখেই ধরা পড়েছে। গত বছরেই বিনোদের এনডেভার ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড কোম্পানিটি আদানি গ্রুপের সিমেন্ট ব্যবসার সাথে সরাসরি জড়িত ছিল। ভারতীয় সিমেন্ট উৎপাদনকারী কোম্পানি আম্বুজা সিমেন্ট এবং এসিসি লিমিটেডে সুইস প্রতিষ্ঠান হোলসিমের মালিকানা ১০.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিময়ে কিনে নেয় আদানি গ্রুপ, যা তাদেরকে পরিণত করে ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম সিমেন্ট উৎপাদনকারী গ্রুপ হিসেবে। আম্বুজা সিমেন্টের ডকুমেন্টেই আদানি গ্রুপের প্রতিনিধি হিসেবে বিনোদের প্রতিষ্ঠানটির নাম উল্লেখ করা হয়েছিল।
আরও কিছু লেনদেন রয়েছে, যেগুলো বেশ অস্পষ্ট। যেমন: সিঙ্গাপুরে থাকা পিনাকল ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট পিটিই কোম্পানিটি পরোক্ষভাবে বিনোদের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়। ২০২০ সালে কোম্পানিটি রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ভিটিবি ব্যাংকের সাথে একটি ঋণ চুক্তি করে। ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে পিনাকল কোম্পানি ব্যাংকটি থেকে ২৬৩ মিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়ে আরেকটি নামহীন সংশ্লিষ্ট পক্ষকে ২৫৮ মিলিয়ন ডলার ধার দেয়। সিঙ্গাপুরের ডকুমেন্ট অনুযায়ী, ঐ বছরের শেষের দিকে পিনাকল তাদের ঋণ নেওয়ার গ্যারান্টর হিসেবে দুটি ফান্ড কোম্পানির নাম লিপিবদ্ধ করে: আফ্রো এশিয়া ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেড এবং ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইমার্জিং মার্কেট হোল্ডিং লিমিটেড। তবে ভারতীয় স্টক এক্সচেঞ্জের ফাইল অনুযায়ী, বিনোদ মরিশাস-ভিত্তিক অ্যাক্রোপলিস ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেডের চূড়ান্ত সুবিধাভোগী মালিক, যে কোম্পানিটি আবার ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইমার্জিং মার্কেট হোল্ডিং লিমিটেডের পুরোটুকু নিয়ন্ত্রণ করে।
এদিকে আফ্রো এশিয়া ট্রেড এবং ওয়ার্ল্ডওয়াইড উভয়ই আদানি গ্রুপের বড় শেয়ারহোল্ডার। এই দুটি তহবিল একত্রে আদানি এন্টারপ্রাইজ, আদানি ট্রান্সমিশন, আদানি পোর্টস এবং আদানি পাওয়ারের ৪ বিলিয়ন ডলার স্টকের মালিক।
বিনিয়োগ ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট ট্রেন্ডলাইনের মতে আফ্রো এশিয়া ট্রেড এবং ওয়ার্ল্ডওয়াইডের কাছে অন্য কোনো সিকিউরিটিজ নেই। তার মানে পিনাকলের ঋণ মূলত আদানি কোম্পানির শেয়ারের ওপর নির্ভর করছে! একইসাথে এই দুইটি ফান্ডের কোনোটিই ভারতীয় স্টক এক্সচেঞ্জের ফাইলে আদানি গ্রুপের কোম্পানিগুলোতে তাদের শেয়ারের কথা প্রকাশ করেনি।
আদানি সাম্রাজ্যের পাবলিক ফেস হলেন গৌতম আদানি, অন্যদিকে বিনোদ আদানি কাজ করেন পর্দার আড়ালে। তার খুব কম ছবিই ইন্টারনেটে পাওয়া যায়। সাইপ্রাসের পাসপোর্টধারী এবং সিঙ্গাপুরের স্থায়ী বাসিন্দা বিনোদের বেশ কিছু নাম রয়েছে, যার মধ্যে একটি হলো বিনোদ শান্তিলাল শাহ। যদিও তার জন্মসাল কবে তা এখনো একটি রহস্য রয়ে গিয়েছে।
তবে বিনোদের ব্যাপারে একটি বিষয় নিশ্চিত, আর তা হলো তিনিও একজন বিলিয়নেয়ার। ফোর্বসের হিসাব অনুযায়ী, বিনোদের সম্পদের পরিমাণ কমপক্ষে ১.৩ বিলিয়ন ডলার। এই হিসাব করা হয়েছে মূলত ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইমার্জিং মার্কেট হোল্ডিং লিমিটেড এবং এনডেভার ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের ওপর তার মালিকানাকে ভিত্তি করে। এই দুটি কোম্পানিই আম্বুজা এবং এসিসি সিমেন্ট কোম্পানিসহ বেশ কিছু আদানি গ্রুপ কোম্পানির শেয়ারেরও মালিক। (ফোর্বসের হিসাব অনুযায়ী, গৌতম আদানির সম্পদ কমে ৫০.৭ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে, কারণ এর আগে বেশ কিছু সম্পদ তার নামে হিসাব করা হয়েছিল, যেগুলোর প্রকৃত মালিক তার বড় ভাই বিনোদ।)
তবে গৌতমের কার্যক্রমের সাথে বিনোদ কতটুকু জড়িয়ে আছেন তা এখন পুরোপুরি খোলাসা করা যায়নি, যে কারণে ধারণা করা হচ্ছে, বিনোসের সম্পদের পরিমাণ আরও বেশি। ওয়াশিংটন ডিসি-ভিত্তিক ননপ্রফিট প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড ডিফেন্স স্টাডিজের রিয়েল এস্টেট সম্পর্কিত ডেটা অনুযায়ী, দুবাইয়ে বিনোদের ১০টি সম্পত্তি রয়েছে। তাছাড়া সিঙ্গাপুরে তার অ্যপার্টমেন্টের দামও প্রায় ৪ মিলিয়ন ডলার। ফোর্বস তদন্ত করে বের করেছে বিনোদ অন্তত ৬০টি অফশোর কোম্পানির সাথে জড়িত, যেগুলো ছড়িয়ে আছে বাহামাস, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড, কেইম্যান আইল্যান্ড, সাইপ্রাস, মরিশাস, সিঙ্গাপুর এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে।
বিনোদ ভারতের বাইরে তিন দশকেরও বেশি সময় কাটিয়েছেন। ভারতের ইকোনমিক টাইমসের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিনোদ যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ওপর মাস্টার্স ডিগ্রি নেন এবং ১৯৭৬ সালে মুম্বাইয়ে টেক্সটাইলের ব্যবসা শুরু করেন। ১৯৮০-এর দশকে ১ হাজার ডলারের বিনিময়ে একটি ছোট প্লাস্টিক প্যাকেজিং কারখানা কিনে নেন তিনি। সেটিও নিজের বহুদিনের টাকা জমিয়ে এবং ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে করেছিলেন তিনি। এরপর সেটি চালানোর ভার দিয়ে দেন ছোট ভাই গৌতমের হাতে। ২০০৯ সালে ফোর্বসের সাথে এক সাক্ষাৎকারে গৌতম জানান, "তারা দুইজন একেবারে শূণ্য থেকে সবকিছু শুরু করেছিলেন।"
১৯৮৯ সালের মধ্যে বিনোদ তার কোম্পানি আরও বড় করেন, শুরু করেন অন্যান্য পণ্যের ব্যবসা। সিঙ্গাপুরে একটি নতুন অফিস খুলে সেখানে চলে যান তিনি। এরপর ১৯৯৪ সালে দুবাইতে গিয়ে চিনি, তেল এবং ধাতুর ব্যবসা শুরু করেন, যার পরিব্যাপ্তি ছিল দুবাই, সিঙ্গাপুর এবং ইন্দোনেশিয়ায়।
ঐ সময়ে থেকেই তিনি অফশোর কোম্পানির সাম্রাজ্য গড়ে তুলতে শুরু করেন। ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অফ ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্ট থেকে প্রকাশিত পানামা পেপার্স অনুযায়ী, বিনোদ ১৯৯৪ সালের জানুয়ারিতে বাহামাসে একটি কোম্পানি তৈরি করেন। দুই মাস পরে তিনি কোম্পানিটির ডকুমেন্টে তার নাম বিনোদ শান্তিলাল আদানি থেকে পরিবর্তন করে বিনোদ শান্তিলাল শাহ করার অনুরোধ করেন।
বিনোদের ব্যবসা যখন দুবাইতে বেড়ে চলছিল, ঐ সময়ে গৌতমও তার ব্যবসা শুরু করেন। ১৯৮৮ সালে আদানি গ্রুপের প্রতিষ্ঠার পর ১৯৯৪ সালে একে পাবলিক কোম্পানি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। বছরের পর বছর বিনোদ তার ভাইয়ের ব্যবসার সাথে গভীরভাবে জড়িত ছিলেন। হিন্ডেনবার্গ রিপোর্ট অনুযায়ী, তিনি অন্তত ২০১১ সাল পর্যন্ত আদানি গ্রুপের কোম্পানিগুলোর বিভিন্ন নির্বাহী পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। বিনোদের ৪৪ বছর বয়সী ছেলে প্রণব এখনও আদানি এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজিং ডিরেক্টর।
২০১৪ সালের একটি কেলেঙ্কারিতে বিনোদ জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। সে বছর আদানি গ্রুপ পাওয়ার প্ল্যান্টের সরঞ্জাম কেনার জন্য অতিরিক্ত ওভার-ইনভয়েসিং করে সেটিকে ৮০০ মিলিয়ন ডলারে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ করে ভারতের ডিরেক্টরেট অফ রেভিনিউ ইন্টেলিজেন্স। তাদের অভিযোগ, বিনোদ 'বিদেশে বৈদেশিক মুদ্রা পাচারের জন্য আদানি গ্রুপের কর্মীদের সাথে সক্রিয়ভাবে কাজ করেছেন।' মামলাটি প্রাথমিকভাবে বাতিল করা হলেও সেই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়েছে এবং এখনও ভারতের কাস্টমস কর্তৃপক্ষের হাতে বিচারাধীন রয়েছে। আদানি গ্রুপ অবশ্য সমস্ত অনিয়মের কথা অস্বীকার করেছে।
মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক বিক্রমাদিত্য খান্নার মতে, "পারিবারিক ব্যবসায় একজন দৃশ্যমান ভাই, আর আরেকজন কম দৃশ্যমান ভাই থাকা মোটেই অস্বাভাবিক কিছু নয়। এটার অনেকটাই ব্যক্তিত্বের ওপর নির্ভর করে। কেউ কেউ উজ্জ্বল আলোতে থাকতে চায়, আবার কেউ কেউ নীরবে ছায়ায় থেকে কাজ করে যেতে চায়।"
২০১২ সালে আরেকটি ধারাবাহিক লেনদেনের সময়, সাইপ্রাসে থাকা ভাকোডার ইনভেস্টমেন্টস নামে বিনোদ আদানির আরেকটি কোম্পানি দুবাইয়ের একটি অফশোর ফার্মের কাছ থেকে ২৩২ মিলিয়ন ডলার ঋণ নেয়। ভাকোডার এরপর ডিবেঞ্চার কেনার জন্য ২২০ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছে আদানি এস্টেটস এবং আদানি ল্যান্ড ডেভেলপারস নামের দুটো প্রতিষ্ঠানে, যেগুলো আদানি ইনফ্রাস্ট্রাকচার অ্যান্ড ডেভেলপার্সের অন্তর্ভুক্ত। এই ডিবেঞ্চারগুলোর মেয়াদ পরে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়, যার অর্থ বিনোদ এখনো এগুলোর মালিক।
২০১২ সাল পর্যন্ত, আদানি ইনফ্রাস্ট্রাকচার অ্যান্ড ডেভেলপার্স আদানি এন্টারপ্রাইজের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান ছিল। কিন্তু ২০১২ সালে হওয়া এই লেনদেনের সময় আদানি এন্টারপ্রাইজ আদানি ইনফ্রাস্ট্রাকচার অ্যান্ড ডেভেলপার্স প্রতিষ্ঠানকে বিক্রি করে দেয়। আদানি এন্টারপ্রাইজের ২০১৩ সালের বার্ষিক রিপোর্ট অনুযায়ী ৮১.৫ মিলিয়ন ডলার লাভ করে তারা। চার বছর পর কোম্পানিটি আদানি এন্টারপ্রাইজের বার্ষিক প্রতিবেদনে পুনরায় আবির্ভূত হয়, এবার একটি 'রিলেটেড এন্টারপ্রাইজ' হিসেবে।
নিউ সাউথ ওয়েলস বিজনেস স্কুলের সহকারী অধ্যাপক মার্ক হামফ্রে-জেনার বলেন, "আদানি এন্টারপ্রাইজের ব্যালান্স শিটে আদানি ইনফ্রাস্ট্রাকচার অ্যান্ড ডেভেলপার্সের এই পুনরায় আবির্ভূত হওয়ার ফলে বেশ কিছু প্রশ্ন রয়ে যায়। কোম্পানিটি কি আসলেই বিক্রি হয়েছিল? যারা আদানি গ্রুপে বিনিয়োগ করেছেন তাদের জন্য আসলেই চিন্তার বিষয় যে, কোম্পানিটি আদৌ লাভ করেছে নাকি তাদের চোখে লাভ দেখানোর ধুলো দেওয়া হয়েছে।"
২০১২ সালের তথাকথিত 'বিক্রি'র পরও ফোর্বস খুঁজে পেয়েছে যে ২০১৭ সালেও আদানি পরিবার তাদের আরেকটি কোম্পানি আদানি প্রপার্টিজের মাধ্যমে আদানি ইনফ্রাস্টাকচার অ্যান্ড ডেভেলপার্সের মালিকানা ধরে রেখেছে। এই আদানি প্রপার্টিজের শেয়ারহোল্ডার আবার তিনটি: আদানি ফ্যামিলি ট্রাস্ট, আদানি এন্টারপ্রাইজের অধীনে থাকা আদানি কমোডিটিজ এলএলপি এবং গৌতম আদানির ছেলে কারান আদানি।
হোয়ার্টন স্কুলের অ্যকাউন্টিংয়ের অধ্যাপক ড্যান টেইলর জানান, "এটা দেখে মনে হচ্ছে আয় বাড়িয়ে দেখানোর জন্য অথবা ঋণ কমানোর জন্য এই [ভুয়া বিক্রি] করা হয়েছে। আর তাই প্রশ্ন চলেই আসে, এই লেনদেনের সাথে বাস্তব ব্যবসায়িক কারণ কী ছিল?"
এই লেনদেনের আরেকটি কারণ থাকতে পারে, আর তা হলো পারিবারিক রাজনীতি। খান্নারের মতে, "আপনি কখনও কখনও আপনার পরিবারের একজন সদস্যকে কোম্পানির একটি বিশেষ শাখার মালিকানা সম্পূর্ণরূপে দিতে চাইতে পারেন। ভারতীয় পারিবারিক ব্যবসার ক্ষেত্রে এটা বেশ প্রচলিত।"
হিন্ডেনবার্গ রিপোর্ট যেভাবে বিনোদকে 'মাল্টি-বিলিয়ন ডলার জালিয়াতির মূল খেলোয়াড়' হিসেবে তুলে ধরেছে, তাতে বিনোদ নিঃসন্দেহেই অপমানিত বোধ করবেন। কারণ তিনি বা তার কোনো পরামর্শদাতা ২০১৬ সালে একটি পত্রিকায় স্পনসর্ড সম্পাদকীয় প্রকাশ করেছিলেন, যেখানে লেখা হয়েছিল, "মিথ্যা ও দুর্নীতিতে ছেয়ে থাকা এক সময়ে এমন লোকের সংখ্যা বিরল যারা তাদের কথা অনুযায়ী চয়ালফেরা করে এবং স্বার্থপরতার মাধ্যমে লাভ করার চেয়ে সততা এবং আনুগত্যকে বেছে নেয়। বিনোদ শান্তিলাল আদানি এমনই মূল্যবোধ সমৃদ্ধ একজন মানুষ, যা তিনি তার পরিবার থেকে পেয়েছেন এবং নিজেও অনুশীলন করেছেন।"