উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য ১.৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিচ্ছে জাইকা, তবে বাড়ছে সুদহার
তিনটি গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য বাংলাদেশকে ১.৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে সম্মত হয়েছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। তবে এবার ঋণের সুদের হার আগের প্যাকেজের চেয়ে বেশি হবে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
জাইকার এ ঋণ ৪৩তম সরকারি উন্নয়ন সহায়তা (ওডিএ) প্যাকেজের অংশ হিসেবে আসবে। বাংলাদেশের উন্নয়নে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে উল্লেখ করেন তারা।
জাপানের ঋণে যে তিনটি প্রকল্পে অর্থায়ন করা হবে তা হলো কক্সবাজারের বহুল প্রত্যাশিত মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দর, জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী ডুয়েলগেজ রেললাইন এবং চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের মানোন্নয়ন।
ইআরডি কর্মকর্তারা জানান, ঋণ চুক্তিটি বর্তমানে আলোচনার চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে এবং তা শীঘ্রই স্বাক্ষরিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তবে, ৪৩তম ওডিএ প্যাকেজের প্রথম ব্যাচের তুলনায় এবারের ঋণে সুদের হার থাকবে বেশি। ২০২২ সালের জুনে স্বাক্ষরিত হয়েছিল সেটি।
দ্বিতীয় ব্যাচে সুদের হার হবে ১.২%, তবে কনসালটেন্সি ফি এবং ফ্রন্ট-এন্ড ফি যথাক্রমে ০.০১% এবং ০.২% এই অপরিবর্তিত রাখা হবে। এই ঋণ পরিশোধের সময়সীমা ৩০ বছর, গ্রেস পিরিয়ড ১০ বছর।
২.৭ বিলিয়ন ডলারের ৪৩তম প্যাকেজের প্রথম ব্যাচটি ছিল ১.৪ বিলিয়ন ডলারের।
উন্নয়ন যাত্রায় বাংলাদেশকে সহায়তা করার জন্য জাইকার প্রতিশ্রুতি হিসেবে আসছে এই ঋণ।
এর আগে ২০২১ সালে ৪২তম ওডিএ প্যাকেজের অধীনে ২.৬৬ বিলিয়ন ডলার ও ২০২০ সালে ৪১তম ওডিএ প্যাকেজের অধীনে বাংলাদেশকে ৩.১৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেয় জাইকা।
তবে ইআরডি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ৪৩তম ঋণ প্যাকেজের শর্তাবলীতে কিছু পরিবর্তন আসতে পারে।
বাংলাদেশের কার্গো হ্যান্ডলিং বাড়াতে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণে জাইকার ঋণ
৪৩তম ঋণ প্যাকেজের আওতায় মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য ৮০০.৭৫ মিলিয়ন ডলার দেবে জাইকা।
মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ী ও কক্সবাজারের ধলঘাটা এলাকায় এ গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ করা হচ্ছে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
কন্টেইনার এবং সাধারণ কার্গোর জন্য একটি বহুমুখী গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের মাধ্যমে বাংলাদেশের কার্গো হ্যান্ডলিং ক্ষমতাকে জোরদার করবে এ প্রকল্প। তাছাড়া, অভ্যন্তরীণভাবে পণ্যের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে পণ্যের সরবরাহ বাড়াতেও সহায়তা করবে প্রকল্পটি।
বন্দরে ৩০০-মিটার এবং ৪৬০-মিটার দীর্ঘ দুটি পৃথক টার্মিনাল থাকবে যেখানে ৮,০০০ টিইইউ (বিশ ফুট সমতুল্য ইউনিট) কন্টেইনার বোঝাই জাহাজ ভিড়তে পারবে, চট্টগ্রাম বন্দরের তুলনায় এটি চার গুণ বেশি। ১৬ মিটার গভীর ড্রাফট থাকায় মাতারবাড়ীতে এ পরিমাণ কন্টেইনার হ্যান্ডেলিং সম্ভব হবে।
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ২০২০ সালের মার্চে মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন করে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাদের মতে, কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী টেন্ডার প্রক্রিয়া, ঠিকাদার নিয়োগ ও কার্যাদেশ সম্পন্ন না হওয়ায় প্রকল্পের অগ্রগতি এখনো বাস্তবায়ন পরিকল্পনা থেকে পিছিয়ে রয়েছে।
কক্সবাজারে ট্রাফিক ব্যবস্থা উন্নয়নে জাইকার ঋণ
জাইকার অর্থায়নে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের জন্য চারটি বহির্মুখী সড়ক এবং একটি এলিভেটেড বাইপাস নির্মাণ করতে যাচ্ছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ।
মাতারবাড়ী বন্দরে পণ্যবাহী যান চলাচল এবং এই রুটকে যানজটমুক্ত করা এই প্রকল্পের লক্ষ্য।
৪৩তম ঋণ প্যাকেজের আওতায়, চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের এ প্রকল্পে ২০২৩ অর্থবছরে ৪২৩.৫৪ মিলিয়ন ডলার দেবে জাপান।
চট্টগ্রামের পটিয়া, দোহাজারী, আমিরাবাদ ও কক্সবাজারের চকরিয়া এলাকায় বাইপাস সড়ক নির্মাণ করা হবে, পাশাপাশি চট্টগ্রামের কেরানীহাট এলাকায় এলিভেটেড সাইড রোড নির্মাণ করা হবে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, জাইকা এখন প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাই করছে। প্রকল্প প্রস্তাবনার কাজ চলমান থাকায় আগামী দুই মাসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।
অনুমোদনের পর আগামী ছয় থেকে আট মাসের মধ্যে প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ শুরু হবে বলে জানান তারা। জাইকার অর্থায়ন নিশ্চিতকরণ প্রক্রিয়াটিকে ত্বরান্বিত করবে।
চীনের প্রত্যাহারের পর ডুয়েলগেজ প্রকল্পে ঋণ দিচ্ছে জাইকা
চীন মাঝপথে সরে আসায়, জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী ডুয়েলগেজ রেললাইন প্রকল্পের জরিপ ও নকশার অর্থায়ন করছে জাপান।
প্রাথমিকভাবে জাইকা এই প্রকল্পে ৩২.১৩ মিলিয়ন ডলার ঋণ দেবে। প্রকল্পের মূল নির্মাণকাজের অর্থায়নেও সম্মত হয়েছে তারা।
২০১৮ সালে চীনা অর্থায়নে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন শুরু হয়। পরবর্তীতে বাংলাদেশ ১৪,২৫০ কোটি টাকার আনুমানিক ব্যয় কমিয়ে আনার প্রস্তাব দিলে মাঝপথে এ প্রকল্প থেকে সরে আসে চীন।
প্রকল্প পরিচালক গোলাম মোস্তফা বলেন, চীন অর্থায়ন প্রত্যাহার করার পর জাপানের সঙ্গে যোগাযোগ করে সরকার।
"জাপান এ প্রকল্প অর্থায়নে সম্মত হয়েছে। তবে এখানে তারা নতুন করে জরিপ চালাবে বলে জানিয়েছে। শুরুতে প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারণ বিষয়ে অধ্যয়ন এবং নকশার জন্য অর্থায়ন করছে জাইকা
"এ প্রকল্পের মূল নির্মাণকাজের জন্য বাংলাদেশকে ঋণ দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে তারা," যোগ করেন তিনি।