বিমা খাতে আস্থা ফেরাতে সমস্যা চিহ্নিতকরণে কাজ করছে আইডিআরএ
কয়েকটি কোম্পানির অনিয়মের কারণে বিমা খাতে গ্রাহকের আস্থা নষ্ট হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারী। তবে বিরাজমান সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে তা নিরসনের উদ্দেশ্যে সরকারের সাথে সমন্বয় করে কাজ করছে আইডিআরএ।
আগামী ১ মার্চ, বুধবার জাতীয় বিমা দিবস উদযাপন উপলক্ষে সোমবার সংস্থাটির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বিমা দিবসে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
আইডিআরএ চেয়ারম্যান বলেন, "বিমা খাতে দাবি পরিশোধের হার ৩০% এর বেশি। তবে ৪/৫টি কোম্পানি বাদ দিলে এ হার প্রায় ৯০% এ পৌঁছাবে। এই কয়েকটি কোম্পানির অনিয়মের কারণে বিমা খাতের আস্থা নষ্ট হচ্ছে। এসব কোম্পানির অভিযুক্ত পরিচালকদের বোর্ড থেকে সরিয়ে দিয়েছি; যা প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রায় ধ্বংস করে দিয়েছে।"
"আমরা এসব কোম্পানিকে নিয়ে কাজ শুরু করেছি। ইতোমধ্যে তাদের নতুন পরিচালনা পর্ষদকে ডেকে বিমা দাবি পরিশোধের জন্য নির্দেশনা দিয়েছি। প্রয়োজনে সম্পত্তি বিক্রি করে হলেও তারা যেন বিমা দাবি পরিশোধ করে," যোগ করেন তিনি।
'আমার জীবন আমার সম্পদ, বিমা করলে থাকবে নিরাপদ' এই প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে এ বছর ঢাকাসহ সারাদেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতীয় বিমা দিবস উদযাপন করা হবে বলে জানান আইডিআরএ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারী।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, এ বছর জাতীয় বিমা দিবসের অনুষ্ঠানে কোন ব্যক্তিকে পুরস্কৃত করা হচ্ছে না। বিমা দাবি পরিশোধের ভিত্তিতে লাইফ বিমা খাতের দু'টি এবং নন-লাইফ বিমা খাতের দু'টি কোম্পানিকে পুরস্কার দেয়া হবে।
আইডিআরএ চেয়ারম্যান বলেন, 'বিমা খাতে অনেক সমস্যার মধ্যেও প্রতি বছরই আমাদের প্রিমিয়াম আয়ের হার বাড়ছে। বিমা দাবি পরিশোধের সংখ্যাও বাড়ছে। আমাদের লাইফ ফান্ড বাড়ছে। কোম্পানিগুলোর সম্পদও বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু দেশের সার্বিক অর্থনীতির তুলনায় আমরা যেহেতু পিছিয়ে আছি, সেক্ষেত্রে আমাদের আরো এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।'
বিমা বিষয়ে মানুষের সচেতনতার অভাব রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'আমরা মানুষের সামনে বিমাখাতের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরতে পারিনি। বিমা দাবিও সঠিকভাবে পরিশোধ করতে পারিনি। তাই বিমা নিয়ে মানুষের মাঝে অনাস্থা সৃষ্টি হয়েছে।'
বিমার বিকল্প খোঁজার প্রবণতা আছে উল্লেখ করে আইডিআরএ চেয়ারম্যান বলেন, 'সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে আমরা বিমা পরিকল্পনা তৈরি করতে পারিনি। আমাদের বিমা শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল কম। এজেন্টরা কোড অব কন্ডাক্ট জানে না। এখন কোম্পানিগুলোকে ডিজিটাল প্লাটফর্মে মার্কেটিং করতে হবে। কারণ ইয়ং জেনারেশন এজেন্টদের গ্রহণ করছে না।'
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, স্বাধীনতার ৫২ বছরে দেশে বিমা কোম্পানির সংখ্যা এখন ৮১টি। এর মধ্যে লাইফ বিমা কোম্পানি আছে ৩৫টি। আর নন-লাইফ বিমা ৪৬টি। গেল কয়েক বছরে নানামুখী সঙ্কটের মাঝেও জীবন বিমার তহবিল ও সাধারণ বিমার সম্পদ দুটোই বেড়েছে।
২০২১ সালে করোনা মহামারির সঙ্কটের মাঝে বিশ্বব্যাপী মোট বিমা প্রিমিয়ামের প্রকৃত প্রবৃদ্ধি যেখানে ৩.৪% নেমে এসেছিল, সেখানে বাংলাদেশে বিমা প্রিমিয়ামের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮.৩%, যা ২০২২ সালে আরও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২.০৪%।
দেশে প্রায় ১ কোটি মানুষ বিমার সাথে সম্পৃক্ত এবং কর্মসংস্থান হয়েছে কয়েক লাখ মানুষের। আর এই সাফল্যে বড় অবদান রেখেছে এ খাতের নতুন নতুন সব জনবান্ধব ও কল্যাণমুখী বিমা।
কর্তৃপক্ষের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২২ সালের শেষে গ্রস প্রিমিয়ামের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৬,৮১২.৬৫ কোটি টাকা। যার মধ্যে লাইফ বিমার গ্রস প্রিমিয়ামের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১,৩৯৯.৫১ কোটি টাকা। আর নন-লাইফে এই পরিমাণ ৫৪১৩.১৪ কোটি টাকা।
২০২২ সালে লাইফ ও নন-লাইফ বিমা কোম্পানির অর্জিত প্রিমিয়ামের ওপর ১৩০৫.৭৩ কোটি টাকার ভ্যাট ও ট্যাক্স সরকারের কোষাগারে জমা দেয়া হয়েছে।
২০২১ সালে মোট বিমা দাবির সংখ্যা ছিল ৩০,৬২,৪৬৮টি। তন্মধ্যে লাইফ ১৮,৯২,৯৯২টি এবং নন-লাইফ ১৯, ৮৭৭টি। বিমা কোম্পানিগুলো সর্বমোট ১৯,১২,৮৬৯ টি বিমা দাবি নিষ্পত্তি করেছে। আর অনাদায়ী দাবির পরিমাণ হলো ৬৫৫৯.৮১ কোটি টাকা।
উক্ত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ, বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জনাব মোহাম্মদ জয়নুল বারী এবং বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ কবির হোসেন।