মালানের কাছে হেরে গেল বাংলাদেশ
অল্প পুঁজি গড়ায় দারুণ কিছু না করলে হতো না। বাংলাদেশ সেটা করলো, বল হাতে দুর্বার থাকলেন সাকিব আল হাসান, তাসকিন আহমেদ, তাইজুল ইসলাম, মেহেদী হাসান মিরাজরা। ক্ষণে ক্ষণে উঁকি দিতে লাগলো আশার সূর্য। কিন্তু ইংল্যান্ডের উইকেট বৃষ্টির মাঝেও একজন থাকলেন দৃঢ়চেতা, ব্যাট চালালেন বুক চিতিয়ে। বাংলাদেশের স্পিন আক্রমণকে বিবর্ণ বানিয়ে অসাধারণ ব্যাটিং করলেন ডেভিড মালান, অনবদ্য সেঞ্চুরিতে খাদের কিনারে চলে যাওয়া দলকে এনে দিলেন রোমাঞ্চকর জয়।
বুধবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩ উইকেটে হেরে গেছে বাংলাদেশ। ওয়ানডেতে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ ঘরের মাঠে আরও বেশি শক্তিশালী। কিন্তু কেবল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তা খাটে না। এর আগে ১৪টি সিরিজের মধ্যে ১৩টিতে জিতেছে বাংলাদেশ, একমাত্র সিরিজ হার এই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। ২০১৬ সালে ঘরের মাঠে ইংলিশদের বিপক্ষে সিরিজ হারের আগে টানা ছয় সিরিজ জেতে বাংলাদেশ, পরে জেতে সাতটা। আবারও সেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই হার দিয়ে সিরিজ শুরু হলো তামিমদের।
টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে নামে বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের সামনে নাজমুল হোসেন শান্ত ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ছাড়া কেউ-ই লড়াই করতে পারেননি। শান্তর হাফ সেঞ্চুরি ও কয়েকটি ছোট ছোট ইনিংসে ৪৭.২ ওভারে ২০৯ রানে অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ। জবাবে প্রথম ওভারেই উইকেট হারানো ইংল্যান্ড আরও ৬টি উইকেট হারায়। কিন্তু ম্যাচসেরা মালান দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ওয়ানডের চতুর্থ সেঞ্চুরি পূর্ণ করে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন।
জয়ের লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুতেই হোঁচট খায় ইংল্যান্ড। প্রথম ওভারেই জেসন রয়কে ফিরিয়ে দেন সাকিব। রান তোলার গতি না বাড়াতে পারলেও দ্বিতীয় উইকেটে চাপ অনেকটাই কাটিয়ে তোলেন ফিল সল্ট ও মালান। এই জুটি গড়ার সময়ে থিতু হয়ে যাওয়া মালানকে আর ফেরাতে পারেনি বাংলাদেশ। অন্য প্রান্তে ব্যাটসম্যান বদল হতে থাকলেও প্রতিকূল পরিবেশে মানিয়ে নিয়ে দলকে জয়ের পথে এগিয়ে নিতে থাকেন তিনি।
দলীয় ৩৫ রানে সল্ট-মালান জুটি ভাঙেন তাইজুল, ১২ রান করে বিদায় নেন সল্ট। ১০ রান পর জেমস ভিন্সকেও ফিরিয়েও দেন বাংলাদেশের বাঁহাতি এই স্পিনার। অধিনায়ক জস বাটলারও পারেননি উইকেটে টিকতে, তাকে সাজঘর চেনান তাসকিন। অভিষিক্ত উইল জ্যাকস কিছুটা সময় লড়াই করেন। মালান-জ্যাকস জুটি থেকে ৩৮ রান পায় ইংল্যান্ড।
দলীয় সংগ্রহ ১০০ পেরোনোর পর জ্যাকসকে থামান মিরাজ, এর আগে ৩১ বলে ৩টি চার ও একটি ছক্কায় ৩১ রান করেন তিনি। উইকেটে অনেকক্ষণ থেকে ইনিংস বড় করতে পারেননি মঈন আলীও। ৩২ বলে ১৪ রান করা ইংলিশ এই অলরাউন্ডারকে ফেরান মিরাজ। ক্রিস ওকস ৭ রান করে আউট হলে আদিল রশিদকে নিয়ে জয় তুলে নেওয়ার কাজটি সারেন মালান।
তিনে নেমে শেষ পর্যন্ত ব্যাটিং করা মালান ১৪৫ বলে ৮টি চার ও ৪টি ছক্কায় ১১৪ রানে অপরাজিত থাকেন। আদিল ২৯ বলে একটি চারে ১৪ রানে অপরাজিত থাকেন। তাইজুল ১০ ওভারে ৫৪ রানে ৩টি উইকেট নেন। ১০ ওভারে ৩৫ রানে ২টি উইকেট পান মিরাজ। সাকিব ৪৫ রানে নেন একটি উইকেট। সবচেয়ে কম রান খরচা করেন তাসকিন। ৯ ওভারে একটি মেডেনসহ ২৬ রানে একটি উইকেট পান তিনি। মুস্তাফিজুর রহমান ৮ ওভারে ৪২ রানে উইকেটশূন্য থাকেন।
এর আগে ব্যাটিং করা বাংলাদেশের হতাশায় শুরু হয়, শেষও হয় হতাশায়।মাঝে কেবল নাজমুল হোসেন শান্ত ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের লড়াই। অনেক বল খরচায় শান্ত পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস খেললেও মাহমুদউল্লাহ তা পারেননি। তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিমরা অনেকক্ষণ উইকেটে থেকেও হতাশ করেছেন। শেষ দিকে বোলার হয়েও তাসকিন আহমেদ, তাইজুল ইসলামরা বরং ভালো করেছেন। তবে মোটা দাগে বাংলাদেশের পুরো ইনিংসজুড়ে ভাঙনের সুর বেজে গেছে। সংগ্রহ থেকে গেছে সামান্যই।
শান্ত ৮২ বলে ৬টি চারে ইনিংস সেরা ৫৮ রান করলেও স্বস্তিতে ছিলেন না। ১৬তম ম্যাচে এসে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ সেঞ্চুরি পাওয়া বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানকে রান তুলতে সংগ্রাম করতে হয়েছে। মাহমুদউল্লাহ ৪৮ বলে ৩টি চারে ৩১ রান করেন। শান্ত ও মাহমুদউল্লাহ জুটি থেকে সর্বোচ্চ ৫৩ রান পায় বাংলাদেশ। সাত মাস পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে নামা অধিনায়ক তামিম ৩২ বলে ৪টি চারে ২৩ রান করেন। সবার মতো ধীর-স্থির ব্যাটিং করে সফল হতে পারেননি মুশফিক। অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান ৩৪ বলে একটি ছক্কায় ১৬ রান করেন।
২০০ রানও পেরোনো হতো না তামিম ইকবালের দলের। শেষ দিকে দুই বোলার তাসকিন ও তাইজুলের কল্যাণে সেটা সম্ভব হয়েছে। সর্বোচ্চ ৭৭.৭৭ স্ট্রাইক রেটে তাসকিন ১৮ বলে একটি করে চার ও ছক্কায় ১৪ রান করেন। ১৩ বলে একটি চারে ১০ রান করেন তাইজুল। বাংলাদেশের পাঁচজন ব্যাটসম্যান দুই অঙ্কের ঘরে যেতে পারেননি। লিটন কুমার দাস ৭, সাকিব আল হাসান ৮, আফিফ হোসেন ধ্রুব ৯, মেহেদী হাসান মিরাজ ৭ ও মুস্তাফিজুর রহমান শূন্য রান করেন। নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে বাংলাদেশকে কোণঠাসা করে রাখা ইংলিশ বোলারদের মধ্যে কেবল একজন পাঁচের বেশি ইকোনমিতে রান দেন, বাকিরা সবাই কিপ্টে বোলিং করেন।
১০ ওভারে ৩৭ রানে ২ উইকেট নেন তারকা পেসার জফরা আর্চার। আরেক পেসার মার্ক উড ৮ ওভারে ৩৪ রানে নেন ২ উইকেট। ডানহাতি অফ স্পিনার মঈন আলী ৭.২ ওভারে ৩৫ রানে ২ উইকেট পান। লেগ স্পিনার আদিল রশিদের শিকারও ২ উইকেট, ৯ ওভারে তার খরচা ৪৭ রান। এক উইকেট পাওয়া ক্রিস ওকস সবচেয়ে কম রান দেন, ৮ ওভারে তার খরচা মাত্র ২৮। অভিষিক্ত উইল জ্যাকস ৫ ওভারে ১৮ রানে পান একটি উইকেট।