সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণ: সঞ্চালন লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ৫০০০ বাসিন্দা বিদ্যুৎহীন
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার কদমরসুল এলাকায় সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণের ঘটনায় ওই এলাকার বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে বিদ্যুৎহীন অবস্থায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে ৫ হাজারেরও বেশি বাসিন্দাকে।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) ফৌজদারহাট বিপণন ও বিতরণ শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ কাউসার মাসুম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'বিস্ফোরণে ওই এলাকার বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন পুরো নষ্ট হয়ে গেছে। পিন, ক্যাবলসহ যাবতীয় যন্ত্রপাতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। টাকার অঙ্কে ক্ষতির পরিমাণ ১৫ লক্ষ টাকা বলে আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি। বিস্ফোরণের পর ওই এলাকার মূল সঞ্চালন লাইনে শর্টসার্কিট হওয়ায় ট্রান্সফরমারগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কোটি টাকা ছাড়াবে। দুর্ঘটনার পর থেকে ওই এলাকা বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন রয়েছে।'
তিনি বলেন, কেশবপুরের ওই অংশে ৫টি ট্রান্সফরমার আছে। প্রতি ট্রান্সফরমার থেকে ২০০টি করে সংযোগ হিসাব করলে ওই এলাকার ১ হাজার পরিবার ও বেশ কয়েকটি শিল্পকারখানা বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন রয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র পেলে দ্রুতই মেরামতের কাজ শুরু করা হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা। তবে ট্রান্সফরমারগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে বলে জানান তিনি।
এদিকে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় গত তিন দিন ধরে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে ওই এলাকার ৫ হাজারেরও বেশি বাসিন্দাকে।
কেশবপুর এলাকার গৃহিণী সুলতানা রাজিয়া টিবিএসকে বলেন, 'বিদ্যুৎ না থাকায় মোটর পাম্প দিয়ে পানি তোলা যাচ্ছে না। দূরের একটি টিউবওয়েল থেকে পানি এনে কোনোমতে রান্নার কাজ সামাল দিলেও বন্ধ রয়েছে কাপড় ধোয়া ও গোসল করা।'
ওই এলাকার বাসিন্দা আলী আক্কাস জানান, 'তিন দিন ধরে বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন থাকায় ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবন। রাত হলে অন্ধকারে ডুবে থাকি, দিনের বেলায় অসহ্য গরম। বিদ্যুৎ বিভাগের সাথে কয়েক দফা যোগাযোগ করেও কোনো সুরাহা পাইনি।'
নাজমুল হোসেন নামে ওই এলাকার এক শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিক জানান, বিদ্যুতের অভাবে তার কারখানায় উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এতে লোকসান গুনতে হচ্ছে তাকে।
এদিকে শনিবার বিকেলে সীমা অক্সিজেন কারখানায় বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত ৩০ জনের মধ্যে বেশ কয়েকজন দৃষ্টি ও শ্রবণশক্তি হারিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
ঘটনা তদন্তে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের গঠন করা তদন্ত কমিটি রোববার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বেশ কিছু অনিয়ম ও গাফিলতির আলামত পাওয়ার কথা জানিয়েছেন।
দুর্ঘটনায় আহত কয়েকজন শ্রমিক টিবিএসকে বলেন, অতিরিক্ত চাপের কারণে অক্সিজেন সিলিন্ডার বিস্ফোরণ থেকে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।
বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটা বেশি ছিল যে চারপাশের দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে কম্পন অনুভূত হয়। ৩০০ ঘরবাড়ি ও ১০টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ৫০ লাখ টাকার বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়।