নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে চলছে মেহেরপুর পৌরসভার উন্নয়ন কাজ: আইএমইডি
নকশা পরিবর্তন করে নিম্নমানের ইট, বালি ও নিম্নমানের ঢালাই দিয়ে চলছে মেহেরপুর উপজেলার উন্নয়ন কার্যক্রম। আর এতে করে কাজ চলামান থাকা অবস্থায়ই বিভিন্ন নির্মাণকাজে ত্রুটি দেখা দিয়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের এক পরিদর্শন শেষে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
তাছাড়া, ঠিকদার প্রতিষ্ঠানকে কাজের অগ্রগতির তুলনায় বেশি বিল পরিশোধ করা হচ্ছে।
১১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয়ে মেহেরপুর পৌরসভার গোড় পুকুরের (লেক) সৌন্দর্যবর্ধনের নির্মাণকাজে এই অনিয়ম পেয়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠান বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)।
গোড় পুকুরের (লেক) সৌন্দর্যবর্ধনে নির্মাণ করা হচ্ছে একাধিক ঘাট, পাবলিক টয়লেট, কপিহাউজ, গাইড ওয়াল, অ্যাম্ফিথিয়েটার।
আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পরিদর্শনের সময় ইট বালি, পাথর ও রডের স্যাম্পল সংগ্রহ করে এলজিইডি এবং রুয়েটে পাঠানো হয়। এতে দেখা যায়, ঢালাইয়ের কাজে বালুর মান ফাইননেস মডুলাস অব স্যান্ড (এফএম) ২.৩ থেকে ২.৫ থাকার কথা থাকলেও ল্যাব টেস্টে পাওয়া গেছে ১.৬৬ এফএম।
এছাড়া প্রকল্প প্রস্তাবে নির্দেশনা ছিল প্রথম শ্রেণীর ইট ব্যবহার করার। এ ধরনের ইটের স্ট্রেস্থ হবে কমপক্ষে ২৪৬৫ পিএসআই। কিন্ত মেহেরপুর এলজিইডির অফিসে ল্যাব টেষ্ট করে এখানকার ইটের স্ট্রেন্থ পাওয়া গেছে ১৯৭৫ পিএসআই, যা নিম্নমানের ইট বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে ।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নগর পরিচালন ও অবকাঠামো উন্নীতকরণ প্রকল্পের আওতায় দেশের অন্যান্য পৌরসভার মতো মেহেরপুর পৌরসভার উন্নয়নেও বরাদ্দ রাখা হয়।
আইএমইডির প্রতিবেদনে কর্মকর্তারা জানান, মেহেরপুরের এই নির্মাণকাজের দরপত্রে অংশ নিয়ে কাজ পেয়েছে মাসুমা বেগম নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্ত প্রকল্পে এলাকায় কাজ করছে ঠিকাদার গোলাম সাওয়ার, যা পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন ২০০৮ সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
এছাড়া, সাব-কন্ট্রাক্টর প্রতিষ্ঠানটির লেক উন্নয়ন সংক্রান্ত কাজ করার অভিজ্ঞতার যথেষ্ট অভাব রয়েছে বলেও উল্লেখ করে আইএমইডি। এই কাজে ঠিকাদার কার্যাদেশ পায় ২০২১ সালের মার্চে। এক বছরে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি মাত্র ১৬%।
আইএমইডি জানিয়েছে, নির্মাণকাজের গুণগতমান বজায় না রাখা এবং ডিজাইন ও স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী নির্মাণ কাজ না করার জন্য দায়ী বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ পৌরসভা প্রকৌশল দপ্তর।
এই অনিয়মের সঙ্গে জড়িতে বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে আইএমইডি।
মেহেরপুর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মসিউর রহমান বলেন, "এই প্রকল্পে সাব-কন্ট্রাক্টর হিসেবে কাজ করছে স্থানীয় প্রভাবশালী এক ব্যক্তি। বর্তমানে তিনি আর্থিক সংকটে আছেন বলে প্রকল্পের বাস্তবায়ন ধীরগতিতে রয়েছে।"
তবে এই প্রকল্পে মানসম্মত নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার হচ্ছে বলে উল্লেখ করে তিনি।
আইএমইডি আরো জানিয়েছে, পরিদর্শনের সময় ঠিকাদার নির্মাণ কাজে যে জনবল নিয়োগ দিয়েছে তা নিতান্তই নগণ্য।