আরাভ খানের বিরুদ্ধে হত্যা মামলার ব্যাপারে সাকিবকে জানিয়েছিল পুলিশ: ডিবিপ্রধান
পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) ইন্সপেক্টর মামুন ইমরান খান হত্যা মামলার পলাতক আসামি রবিউল ইসলাম ওরফের আরাভ খানের ব্যাপারে পুলিশ সাকিব আল হাসানকে জানিয়েছিল। পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) প্রধান হারুন-অর-রশিদ আজ এ তথ্য জানান।
বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) ডিবিপ্রধান সাংবাদিকদের বলেন, 'আমরা সাকিবকে আরাভ খানের কথা জানিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি যেভাবেই হোক সেখানে গেছে। প্রয়োজনে আমরা সাকিবকে জিজ্ঞাসাবাদ করব। আমরা আরাভ খানকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করছি। তিনি কীভাবে দেশ থেকে পালিয়েছেন, তা-ও তদন্ত করা হবে।'
দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর সম্প্রতি আলোচনায় আসেন আরাভ। ক্রিকেটবিশ্বের এক নম্বর অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান বুধবার (১৫ মার্চ) দুবাইয়ে তার গহনার দোকান উদ্বোধনে যোগ দেন। ফেসবুকে আরাভকে দেখে অনেকেই তাকে হত্যা মামলার পলাতক আসামি রবিউল ইসলাম বলে শনাক্ত করেন। একজন পলাতক আসামি কীভাবে দুবাইয়ে গিয়ে বিপুল টাকার মালিক হলেন, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।
এর জেরে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সাবেক এক সিনিয়র অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তার আর্থিক সহায়তায় রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান দুবাইয়ে স্বর্ণব্যবসা শুরু করেন।
ডিবির অতিরিক্ত উপকমিশনার (মতিঝিল বিভাগ) শহিদুর রহমান রিপন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'গয়না ব্যবসায়ী আরাভ খান এসবি পুলিশের ইন্সপেক্টর মামুন হত্যার আসামি। তার আসল নাম রবিউল ইসলাম। তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।'
ডিবির আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, 'যে লোকটি এখনও ওয়ান্টেড এবং দীর্ঘদিন ধরেই ওয়ান্টেড ছিলেন, তিনি দুবাইয়ে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে যাচ্ছেন এবং "আরাভ জুয়েলার্স" নামে একটি সোনার দোকান খুলেছেন। বিলাসবহুল বাড়ি ও গাড়ি কিনেছেন। দুবাইয়ে এখন তার কয়েক মিলিয়ন ডলারের ব্যবসা আছে। কিন্তু একসময় তিনি প্রতারক ছিলেন।'
২০১৮ সালের ৮ জুলাই রাজধানীর বনানীর একটি বাসায় খুন হন এসবির পরিদর্শক মামুন ইমরান খান। পরদিন তার লাশ বস্তায় ভরে গাজীপুরের উলুখোলার একটি জঙ্গলে নিয়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
মামলাটি তদন্ত করে পরের বছরের এপ্রিলে অভিযোগপত্র দাখিল করে ডিবি। অভিযোগপত্রে পুলিশ উল্লেখ করে, রবিউল ইসলামের নেতৃত্বে একটি চক্র ধনী ব্যক্তিদের ফাঁদে ফেলে ব্ল্যাকমেইল করত। তাদের লক্ষ্য ছিল অশ্লীল ছবি তুলে ধনী ব্যক্তিদের ব্ল্যাকমেইল ও চাঁদাবাজি করা।
২০১৯ সালের এপ্রিলে পুলিশ মামুন ইমরান খান হত্যা মামলায় রবিউলসহ ১০ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে।
অভিযোগপত্রে রবিউল ছাড়াও তার স্ত্রী সুরাইয়া আক্তার কেয়াকেও আসামি করা হয়। মামলায় মামুনের বন্ধু রহমত উল্লাহ, স্বপন সরকার, দিদার পাঠান, মিজান শেখ, আতিক হাসান, সারোয়ার হোসেনসহ আরও দুই তরুণীকে আসামি করা হয়।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, রবিউল গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার আশুটিয়া গ্রামের মতিউর রহমান মোল্লা ও লাকী বেগমের ছেলে।
২০২০ সালের ২০ অক্টোবর মামুন হত্যা মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর রবিউল ইসলাম পরিচয় দিয়ে একজন ব্যক্তি আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। আদালত তাকে কারাগারে পাঠান। প্রায় ৯ মাস কারাভোগের পর ওই যুবক দাবি করেন, তিনি আসল রবিউল ইসলাম নন, তার প্রকৃত নাম আবু ইউসুফ। রবিউল ইসলামের কাছ থেকে মাসিক নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা পাওয়ার প্রতিশ্রুতি পেয়ে আসামির পরিচয়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করেন তিনি।
আদালত বিষয়টি তদন্ত করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ডিবিকে প্রতিবেদন দিতে বলেছেন।