এক বছরে সিএমএসএমই খাতে আউটস্ট্যান্ডিং লোনের প্রবৃদ্ধি দ্বিগুণ
২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে আগের বছরের তুলনায় দ্বিগুণ গতিতে বেড়েছে সিএমএসএমই খাতের লোনের আউটস্ট্যান্ডিং।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বলছে, ২০২২ সালে এই খাতে ব্যাংক ও এনবিএফআই এর আউটস্ট্যান্ডিং লোন গ্রোথ ১২.২২%। এই বছর আউটস্ট্যান্ডিং লোন বেড়েছে প্রায় ৩১,০০০ কোটি টাকা।
২০২১ সালে আউটস্ট্যান্ডিং লোন গ্রোথ ছিল মাত্র ৬.১%। সে বছর লোন বেড়েছিল ১৪,০০০ কোটি টাকার মতো।
তবে, ২০১৫ সাল থেকে গতবছর পর্যন্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আউটস্ট্যান্ডিং লোন গ্রোথ করোনা মহামারির আগে বেশি হারে বেড়েছে।
২০১৭ সালে এই গ্রোথ ১৭% এরও বেশি ছিল। সেখানে ২০২০ সালে মহামারির কারণে ঋণ বিতরণ কম হওয়ায় আউটস্ট্যান্ডিং লোনের গ্রোথও কম হয়েছে। তবে ২০২২ সালে এসে এই গ্রোথ মহামারির আগের মতো না বাড়লেও আগের দুই বছরের তুলনায় অনেক বেড়েছে।
ইন্টারেস্ট রেট ক্যাপ থাকার কারণে ব্যাংকগুলো সিএমএসএমই ঋণ বিতরণ করতে আগ্রহ কম পাচ্ছে উল্লেখ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা টিবিএসকে বলেন, "বর্তমানে নিয়ম অনুযায়ী যেকোনো লোনের জন্য সর্বোচ্চ ৯% ইন্টারেস্ট চার্জ করা যায়। তবে অন্য বড় লোনের তুলনায় এই খাতে অপারেটিং কস্ট বেশি হওয়ায় ব্যাংকের লাভ করা কঠিন হয়ে পড়ে। এসব কারণে অনেক ব্যাংকই সিএমএসএমই খাতে লোন দিতে আগ্রহ কম পায়।"
করোনা মহামারি এই খাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে মন্তব্য করে এ কর্মকর্তা বলেন, "অনেক ঋণগ্রহীতা প্যান্ডেমিকের শক থেকে বের হতে পারেননি। লার্জ লোন গ্রহীতাদের রিকভারির যে সক্ষমতা আছে, ছোট লোনের গ্রহীতাদের সে সক্ষমতা নেই। এছাড়া ব্যাংকগুলোও ছোট এসব গ্রাহকদের লোনের পেমেন্টের জন্য যেখানে চাপ বেশি দিতে পারে, সেখানে বড় ঋণগ্রহীতারা কিছুটা রিলাক্স ফিল করে।"
"সেইসঙ্গে সিএমএসএমই খাতে ১৪% এর বেশি এনপিএল আছে, কারণ তারা বড় ঋণগ্রহীতাদের মতো রিশিডিউল করার পর্যাপ্ত সুযোগ পায় না," যোগ করেন তিনি।
ম্যানেজমেন্ট ভালো হলে এনপিএল নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব বলে মনে করেন সিএমএসএমই খাতে ঋণ বিতরণে অগ্রগন্য ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি ও সিইও সেলিম আর এফ হোসেন।
তিনি বলেন, "আমাদের ব্যাংকে এই খাতে এনপিএল ২% এর কিছুটা বেশি। অন্য সাধারণ লোনের তুলনায় এটি অনেক কম। মূলত বেশিরভাগ ব্যাংকই সিএমএসএমই খাতে লোন ডিসবার্সের ব্যবসাটি ঠিকমতো আয়ত্ব করতে পারেনি।"
"ব্র্যাক ব্যাংক এই ব্যবসাটিতে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে অন্তত ৭-৮ বছর ইনভেস্ট করেছে। অন্য ব্যাংকগুলোকেও এভাবেই নিজেদের পরিকল্পনা দাঁড় করাতে হবে। কেউ যদি ভাবে ব্যবসায় নামার সঙ্গে সঙ্গেই সফল হয়ে যাবো, সেটা ভুল। কেন্দ্রীয় ব্যাংককেও সে অনুযায়ী পরিকল্পনা করে বাস্তবায়ন করতে হবে," বলেন তিনি।
সিএমএসএমই খাতে ঋণ বিতরণের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ১৮.৯১%
২০২২ সালে সিএমএসএমই খাতে ঋণ বিতরণ আগের বছরের তুলনায় ১৮.৯১% বাড়িয়েছে ব্যাংক ও এনবিএফআই গুলো।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২২ সালে এই খাতে ২.২০ লাখ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে। আগের বছরে বিতরণ করা হয়েছিল ১.৮৫ লাখ কোটি টাকা। সে হিসাবে ২০২১ সালের তুলনায় ঋণ বিতরণ বেড়েছে ৩৫,০০০ কোটি টাকা।
অবশ্য এই খাতে ঋণ বিতরণ আগের প্রান্তিকের তুলনায় গত অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে ১৭.২৯% বেড়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের শেষ প্রান্তিকে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ৬০,৬১১ কোটি টাকা। জুলাই-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ৫১,৬৭৭ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছিল।
ঋণ বিতরণ আগের বছরের তুলনায় বাড়ার কারণ জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, কোভিডকালীন সময়ে অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী নতুন করে বিনিয়োগ করা থেকে বিরত থেকেছেন। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় ব্যবসায়ীরাও বিনিয়োগ বাড়াচ্ছেন।