প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবা দিবে সৌদি অর্থায়নের ৫ ভাসমান হাসপাতাল
সৌদি অর্থায়নে ৫টি ভাসমান হাসপাতাল বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দিবে।
আগামী জুনে দুটি ভাসমান হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হতে পারে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
বাংলাদেশের সুনামগঞ্জের তাহিরপুর, চাঁদপুরের হাইমচর, ভোলার চরফ্যাশন, গাইবান্ধার ফুলছড়ি, কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার মানুষকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি অপারেশন ও ল্যাবরেটরি সার্ভিস দিবে এই পাঁচটি হাসপাতাল।
একেকটি উপজেলায় জাহাজগুলো তিন মাস করে থাকবে। এর ফলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া আরো সহজ হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. মো. মাহমুদুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, প্রয়াত সৌদি বাদশাহ আবদুল্লাহর নামে নামকরণ করা হাসপাতালগুলোর অর্থায়ন করবে কিং আবদুল্লাহ বিন আব্দুল আজিজ প্রোগ্রামের (কেএএপি) অধীনে থাকা ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক।
২০১৭ সালে ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের স্বাক্ষরিত একটি চুক্তির অধীনে ভাসমান হাসপাতালগুলো প্রাথমিকভাবে 'ফ্রেন্ডশিপ' এনজিওর মাধ্যমে পরিচালিত হবে। গত দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে জাহাজে চালিত হাসপাতাল পরিচালনা করে আসছে তারা।।
"গত বছরের ২১ মার্চ ডিজিএইচএসের তৎকালীন অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা সংশ্লিষ্ট অন্য দুটি পক্ষের সাথে একটি বৈঠক করেছিলেন," জানান ড. মাহমুদুর রহমান।
"এটি একটি ত্রিপক্ষীয় প্রকল্প। প্রথম ৫ বছর জাহাজ হাসপাতালগুলো ফ্রেন্ডশিপ পরিচালনা করবে। জাহাজগুলো যখন যে এলাকায় যাবে, সেখানে অবস্থিত আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীরা তাদের ইপিআই ভ্যাকসিনেশন, এন্টিনেটাল কেয়ার, যক্ষার টেস্ট, সার্ভিক্যাল ক্যান্সারের ভায়া টেস্টসহ সব ধরনের কার্যক্রমে সহায়তা করবে," বলেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, "৫ বছর পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে শিপ হাসপাতালের কার্যক্রম তুলে দিবে ফ্রেন্ডশিপ। আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীরা সাধারণত কমিউনিটি ক্লিনিক, হাসপাতালে কাজ করে। এই ৫ বছরে তারা শিপ হাসপাতালে কাজ শিখে যাবে।"
আরব নিউজের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, জাহাজ নির্মাণ এবং প্রথম পাঁচ বছরের অপারেশন খরচ প্রায় ২০ মিলিয়ন ডলার। জাহাজগুলোর নাম হবে কিং আবদুল্লাহ ফ্রেন্ডশিপ হসপিটাল (১-৫)।
সবচেয়ে বড় জাহাজ 'কিং আবদুল্লাহ ফ্রেন্ডশিপ হসপিটাল ১' লম্বায় ৩১ মিটার দীর্ঘ। সাধারণ অস্ত্রোপচারের জন্য এই জাহাজে একটি অপারেশন থিয়েটার এবং চোখের অস্ত্রোপচারের জন্য একটি পৃথক অপারেশন থিয়েটার রয়েছে। অন্য চারটি জাহাজ ২৫ মিটার দীর্ঘ হবে। সেগুলোতে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা এবং ছোট অস্ত্রোপচার করা হবে।
উত্তর-পূর্বের জেলা সুনামগঞ্জের পদ্মা ও মেঘনা নদীতে এবং হাতিয়ার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে জাহাজগুলো চলাচল করবে।
প্রতিটি জাহাজে ৩০ জন ক্রু থাকবে। তাদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি থাকবেন মেডিকেল পেশাদার এবং বাকিরা জাহাজ চালানো ও প্রশাসনের দায়িত্বে থাকবেন। ডিউটি চলাকালীন সময়ে সকলেই জাহাজে তাদের আবাসিক কেবিনে থাকবেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, শিপ হাসপাতাল ৫টির রেজিস্ট্রেশন হবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নামে। হাসপাতালে যত রোগী সেবা নিবে তাদের তথ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমে পাঠানো হবে।
ড. মাহমুদুর রহমান বলেন, "সুনামগঞ্জের হাওর এলাকা বা কুড়িগ্রামের দুর্গম এলাকার গর্ভবতী নারী ও শিশুদের যাতায়াত সমস্যার কারণে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে সেবা নেওয়া কঠিন হয়ে যায়। এই শিপ হাসপাতালগুলো দুর্গম এলাকার মানুষের কাছে যাবে এবং তারা বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা পাবে।"
"জাহাজগুলোতে অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটর আছে। সিজারিয়ান অপারেশনসহ জেনারেল সব ধরনের অপারেশন করতে পারবে রোগীরা। এতে প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ উপকৃত হবে," যোগ করেন তিনি।