রোজায় পণ্যবাহী ট্রাকে চাঁদাবাজি বন্ধের আহবান ব্যবসায়ীদের
রোজায় পণ্যবাহী ট্রাকে পুলিশের চাঁদাবাজি ও ডলার রেটের 'লুকোচুরি' বন্ধ করার দাবি করে ব্যবসায়ীরা বলেছেন, অন্যথায় পণ্যমূল্যে স্থিতিশীলতা সম্ভব হবে না। রোজা এলেই রাস্তায় চাঁদাবাজি বেড়ে যায় উল্লেখ করে তারা বলেছেন, চাঁদাবাজি বাড়লে দামও বাড়বে।
রবিবার (১৯ মার্চ) বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সভাপতিত্বে দ্রব্যমূল্য সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের সভায় ব্যবসায়ীরা এ তথ্য জানানোর প্রেক্ষিতে জননিরাপত্তা বিভাগের একজন কর্মকর্তা নিশ্চিত করেন যে, এবার রমজানে পণ্যবাহী ট্রাকে টহল পুলিশ, শিল্প পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কোন ধরণের চাঁদাবাজি করবে না।
এ বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ব্যবসায়ীদের আশ্বস্ত করে বলেন, 'রোজায় পণ্যবাহী কোন ট্রাক রাস্তায় থামানো যাবে না। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে, প্রয়োজনে আরও কথা বলবো।'
মন্ত্রী বলেন, 'রোজায় ভোজ্যতেল ও চিনির যে চাহিদা রয়েছে, তার দেড়গুণ পণ্য মজুদ আছে। পাইপলাইনে আরও পণ্য আছে। সেগুলো দ্রুত খালাস করার জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষসহ এনবিআরকে চিঠি পাঠানো হবে। ক্রেতারা প্যানিক বায়িং না করলে রমজানে কোন পণ্যের সংকট হবে না এবং দামও স্থিতিশীল থাকবে।'
তিনি বলেন, কিছুদিন আগে চিনি আমদানির শুল্ক কমানোর কারণে প্রতি কেজি চিনির দাম কমবে ৫ টাকা। দাম কমানোর বিষয়ে ব্যবসায়ীরাও সম্মতি দিয়েছে। তবে কম দামের এই চিনি বাজারে সরবরাহ হতে সাত দিন সময় লাগবে। এবারের রোজায় আমদানি মূল্যের চেয়ে কম দামে ছোলা বিক্রি হবে বলেও জানান মন্ত্রী।
'রোজায় পণ্য নিয়ে ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই। তেল-চিনি যা আছে, তাতে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বাড়ার কোন কারণ নেই। এবার ইফতার পার্টির কারণে এসব পণ্যের চাহিদা কিছুটা বাড়তে পারে, তবে তাতে কোন সংকট হবে না।'
তিনি বলেন, চাষীদের ন্যায্যমূল্য দিতে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রাখা হয়েছে। দাম বাড়তে থাকলে আমদানি উন্মুক্ত করা হবে। বেগুন, শসা, পোল্ট্রি, লেবুর দাম রোজায় বেড়ে যায়। এসব পণ্যবাহী কোন ট্রাক রাস্তায় থামানো যাবে না।
'সার্বিকভাবে রোজায় প্যানিকড হওয়ার কোন কারণ নেই। প্যানিকড হয়ে কেউ যাতে একসঙ্গে বেশি পণ্য না কিনে, সে অনুরোধ করছি', জানান মন্ত্রী।
তিনি বলেন, কোন ব্যবসায়ী অবৈধ সুযোগ নিতে চেষ্টা করলে সরকার সে সুযোগ দেবে না। সোমবার থেকেই সরকারের বিভিন্ন সংস্থা বাজার মনিটরিং শুরু করবে।
বাজারে মুরগি ও ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, 'এগুলো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিষয় নয়। পোল্ট্রি ও মুরগির দাম নির্ধারণ এবং নিয়ন্ত্রণ করা মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব।'
সভায় বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, রোজা এলেই রাস্তায় চাঁদাবাজি বেড়ে যায়। আর চাঁদাবাজি বাড়লে দামও বাড়বে।
তিনি বলেন, 'সরকারের হিসাবে ডলারের রেট ১০৬ টাকা। কিন্তু ব্যবসায়ীদের ১১০ টাকা করে ডলার কিনে পণ্য আমদানি করতে হচ্ছে। প্রতি ডলারে বাড়তি ৪ টাকা বাড়তি দিতে হচ্ছে, যা ভোক্তাদের কাছ থেকেই নেওয়া হচ্ছে।'
বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, 'রোজায় ভ্রাম্যমাণ আদালত ব্যবসায়ীদের হয়রানি করবে না। তবে কোন ব্যবসায়ী অনিয়ম করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দেশের সকল বিভাগীয় কমিশনারদের বাজার পর্যবেক্ষণ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।'
জননিরাপত্তা বিভাগের প্রতিনিধি জানান, পাইপলাইনে যেসব পণ্য রয়েছে, সেগুলো যাতে দ্রুত বাজারে আসে, সে উদ্যোগ নিতে হবে। ২০ রমজানের পর বাজারে পণ্যের সরবরাহ বাড়লে কোন সুফল মিলবে না।
সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি সভায় জানান, কোভিডের কারণে গত দু'বছর রমজানে ইফতার রাজনীতি হয়নি। ফলে পণ্যের চাহিদা কমে গেছিল। এবার ইফতার-কেন্দ্রিক রাজনীতি জমে উঠবে। ফলে পণ্যের চাহিদাও বেড়ে যাবে। তাই চাহিদা অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানান তিনি।
সভায় বিভিন্ন কোম্পানির প্রতিনিধি ও সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।