মিন্নির জামিন আবেদন গ্রহণ, শুনানি ৩০ জুলাই
দেশজুড়ে আলোচিত বরগুনার যুবক রিফাত শরীফ হত্যা মামলার গ্রেপ্তার হওয়া রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির জামিনের আবেদন গ্রহণ করে তা শুনানির জন্য দিন ধার্য করে দিয়েছে আদালত।
মিন্নির আইনজীবি অ্যাডভোকেট মাহাবুবুল বারী আসলাম মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) সকালে বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ মোঃ আছাদুজ্জামানের আদালতে জামিনের আবেদন করলে বিচারক তা গ্রহণ করে ৩০ জুলাই শুনানির দিন ধার্য করে দেন। দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে ১ টা পর্যন্ত জামিনের শুনানি হয়।
অ্যাডভোকেট মাহাবুবুল বারী আসলাম জানান, রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় ১৫ জন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলেও মামলার প্রধান সাক্ষী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি তার জবানবন্দি প্রত্যাহার করতে চাচ্ছেন।
এই আইনজীবীর দাবী, মিন্নিকে নির্যাতন ও ভয়ভীতি দেখিয়ে, তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেয়া হয়েছে। তিনি জামিন আবেদনের পাশাপাশি পুনরায় মিন্নিকে দিয়ে তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রত্যাহার ও হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি দিতে আবারো আবেদন করবেন।
জামিনের আবেদনটি ‘মিস কেস’ হিসেবে নথিভূক্ত করে বিচারক নিম্ন আদালতে থাকা নথি তলব করেছেন বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ভূবন চন্দ্র হাওলাদার।
তিনি বলেন, “আজ মিন্নির নথি নিম্ন আদালতে থাকায় বিচারক নথি তলব করেছে ৩০ তারিখে শুনানির জন্য। তবে আমরা রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবীরা এই জামিনের বিরোধীতা করবো। মিন্নির জামিন যাতে না হয় সেই ব্যাপারে আমরা রাষ্ট্রের পক্ষে আদালতে লড়বো।”
এদিকে সকালে জজ আদালতের সামনে বসে নিজের মেয়ের জবানবন্দি বাতিল করে বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবী করেছেন মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন।
গত ২৯ জুলাই ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় ‘স্বীকারোক্তিমূলক’ জবানবন্দি দেন নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি। তবে মেয়ের সাথে কথা বলার পর মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন অভিযোগ করেছিলেন, ‘নির্যাতন ও জোরজবরদস্তি করে’ তার মেয়েকে ওই জবানবন্দি দিতে বাধ্য করা হয়েছে।
গত ২৬ জুন স্ত্রীকে নিয়ে কলেজ থেকে ফেরার পথে প্রকাশ্য দিবালোকেই রিফাত শরীফ নামে বরগুনার এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করে একদল সন্ত্রাসী।
হত্যাকান্ডের একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তাতে দেখা যায় রিফাতের স্ত্রী বারবার ঠেকানোর চেষ্টা করলেও সন্ত্রাসীরা তাকে রামদা দিয়ে কোপাতে থাকে। এসময় পাশে অনেককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেলেও রিফাতের স্ত্রী ছাড়া কেউই সন্ত্রাসীদের নিবৃত করার চেষ্টা করেননি। রক্তাক্ত অবস্থায় রিফাতকে বরগুনা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানেই তিনি মারা যান।
এর একদিন পর বাদী হয়ে বরগুনা সদর থানায় ১২ জনকে আসামী করে মামলা করেন রিফাত শরীফের বাবা।
এরমধ্যে ফেসবুক মেসেঞ্জার গ্রুপের কয়েকটি স্ক্রিনশট ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে তাতে দেখা যায়, হত্যার বিষয়টি পূর্বপরিকল্পিত এবং হত্যার মূল নকশা করেন মামলার প্রধান আসামী সাব্বির আহমেদ নয়ন ওরফে নয়ন বন্ড ।
রিফাত শরীফ হত্যার ঘটনায় দেশব্যপী সমালোচনার ঝড়ের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্রুততম সময়ের মধ্যে খুনিদের গ্রেপ্তারে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেন। নির্মম এই হত্যাকান্ডকে ‘জনগণের ব্যর্থতা’ বলে মন্তব্যও আসে হাইকোর্ট থেকে।
ঘটনার পর অভিযুক্ত কয়েক আসামীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করলেও পালিয়ে যান ঘটনার প্রধান আসামী সাব্বির আহমেদ নয়ন ওরফে নয়ন বন্ড। এরপর ২ জুলাই সকালে পুলিশের বরাত দিয়ে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নয়নের নিহত হবার খবর আসে গণমাধ্যমে।
রিফাত শরীফের মৃত্যুর পর তার বাবা আব্দুল হালিম দুলাল শরীফ বাদী হয়ে যে মামলা করেছিলেন তাতে প্রধান স্বাক্ষী ছিলেন রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি।
তবে ১৩ই জুলাই রিফাত হত্যার ঘটনায় মিন্নির সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে বলে রিফাতের বাবা সংবাদ সম্মেলন করলে মামলা নতুন দিকে মোড় নেয়।
দুলাল শরীফ বলেছিলেন, “নয়নের সঙ্গে বিয়ের ঘটনা মিন্নি ও তার পরিবার ‘সুকৌশলে’ গোপন করে গেছে। ওই বিয়ে বহাল থাকা অবস্থায় শরিয়া বহির্ভূতভাবে মিন্নি তার ছেলেকে বিয়ে করেছেন। রিফাতের সঙ্গে বিয়ের পরও মিন্নি নয়নের বাসায় আসা-যাওয়া ও যোগাযোগ রক্ষা করতেন।”
শ্বশুরের এ বক্তব্যকে ‘ষড়যন্ত্রকারীদের প্ররোচণায় পড়ে বানোয়াট ও মনগড়া বক্তব্য’ বলে দাবি করেছিলেন মিন্নি।
এরপর গত মঙ্গলবার সকালে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় ডেকে এনে হত্যাকান্ডের ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার ‘প্রমাণ’ পাওয়ার দাবি করে রাত নয়টার দিকে আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এ মামলায় মিন্নিসহ এ পর্যন্ত ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এখন পর্যন্ত এজাহারভুক্ত তিনজনসহ সাত আসামি হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। বর্তমানে ছয়জনকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।