গাজীপুর সিটি নির্বাচন-২০২৩: মেয়র পদে আজমত উল্লাহ, জাহাঙ্গীরসহ ১২ জনের মনোনয়ন দাখিল
গাজীপুর সিটি করপোরেশন (গাসিক) নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান, স্বতন্ত্র প্রার্থী ও গাজীপুর সিটির সাবেক মেয়র (বরখাস্ত) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম ও তার মা জায়েদা খাতুনসহ মোট ১২ জন মেয়র প্রার্থী মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছেন।
অপরদিকে, বিএনপির পক্ষ থেকে এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার ঘোষণা দেওয়া হলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে মেয়র পদে মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন কারাবন্দি বিএনপি নেতা নুরুল ইসলাম সরকারের ছেলে সরকার শাহ নূর ইসলাম রনি।
গাজীপুরে বিএনপিতে সরকার পরিবারের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। ফলে এই পরিবারের কেউ প্রার্থী হলে তিনি নির্বাচনের মাঠ গরম করতে পারবেন বলে মনে করেন বিএনপির তৃণমূলের অনেক নেতাকর্মী।
শাহ নূর ইসলাম রনির বাবা নূরুল ইসলাম সরকার শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যাকাণ্ডের মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি। অপরদিকে, তিনি গাজীপুর মহানগর বিএনপির সভাপতি হাসান উদ্দিন সরকারের ভাতিজা। মনোনয়ন জমাদানের শেষদিনে আজ বৃহষ্পতিবার (২৭ এপ্রিল) গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ফরিদুল ইসলামের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন শাহ নূর ইসলাম রনি।
রনির চাচা হাসান উদ্দিন সরকার গত নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ছিলেন।
বৃহস্পতিবার সকালে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন শেষে সাংবাদিকদের রনি বলেন, 'আমি যেহেতু বিএনপি পরিবারের সন্তান। আমার চাচা, বাবা সবাই বিএনপি করেন। আমি ইতোমধ্যে অনেকগুলো উঠোন বৈঠক করেছি। তৃণমূল কর্মীদের সমর্থন পেয়েছি। যার কারণে আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করব'।
তিনি আরও বলেন, আমার চাচা এই গাজীপুরের রুপকার। আমার বাবা বিএনপি করার কারণে প্রতিহিংসার শিকার হয়ে ১৮ বছর ধরে কারাগারে বন্দি রয়েছেন। বাবা, চাচার উন্নয়নের ধারা অব্যহত রাখতে পরিবারের সদস্যদের ও সাধারণ মানুষের মতামত নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি।
'বিএনপি হয়তো নির্বাচনে আসছে না, কিন্তু তৃণমূল পর্যায়ের বিএনপির আমার প্রতি সমর্থন রয়েছে। আমি বুঝেশুনে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি বিশ্বাস করি, আমার সাথে সবাই থাকবে। আমার মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে নৌকা প্রার্থী আজমত উল্লাহ খানের সাথে' - তিনি যোগ করেন।
গাজীপুরের সাবেক সংসদ সদস্য আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত নুরুল ইসলাম সরকার কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন। তিনি কেন্দ্রীয় বিএনপির যুব বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন বলে জানা গেছে।
অপরদিকে বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে বঙ্গতাজ অডিটোরিয়ামের অস্থায়ী নির্বাচন অফিসে মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী ও গাজীপুর মহানগর আ. লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ খান। এসময় তিনি বলেন, 'আ. লীগের গঠনতন্ত্রের ৪৭ ধারায় প্রাতিষ্ঠানিক একটি অধ্যায় রয়েছে। সেখানে বলা আছে, দলীয় মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে দলের দায়িত্বশীল নেতা সবাইকে সতর্ক করেছে। যদিও আমাদের মহানগর আ. লীগের সবাই এক রয়েছি'।
তিনি আরও বলেন, 'নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন সংস্থা। তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ। সুতরাং আমরা বিশ্বাস করি, নির্বাচন শতভাগ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে'।
জাহাঙ্গীর আলমের মনোনয়নের বিষয়ে তিনি বলেন, 'আওয়ামী লীগের নেতা, কর্মী, শুভাকাঙ্ক্ষীরা একটি স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত সিটি কর্পোরেশন চায়। আমি পত্রপত্রিকায় দেখেছি জাহাঙ্গীর আলম ও তার মা নমিনেশন সংগ্রহ করেছেন। উনি যেহেতু আ. লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন – তাই বিশ্বাস করি দলের নেতৃত্বের প্রতি তার যদি আস্থা থাকে, যদি দেশের উন্নয়নের প্রতি তার আস্থা থাকে – তাহলে তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করবেন।
বৃহষ্পতিবার বিকেল তিনটার দিকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে তার মা জায়েদা খাতুনের মনোনয়নপত্র জমা দেন সাবেক মেয়র (বরখাস্ত) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম। এসময় জায়েদা খাতুন উপস্থিত ছিলেন না।
পরে জাহাঙ্গীর আলমের উপস্থিতিতে তার পক্ষে মেয়র পদে মনোনয়নপত্র জমা দেন তার সঙ্গেই আসা গাজীপুর মহানগর আ. লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সাবেক সদস্য আসকর আলী, সাবেক সহ-দফতর সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম এবং সাবেক গাছা ইউনিয়ন আ. লীগের সভাপতি আব্দুল কাদির। এসময় জাহাঙ্গীর আলম রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়েই বসা ছিলেন।
মনোনয়ন পত্র জমা শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, 'নির্বাচন আইনে যে পদ্ধতিতে নির্বাচন করতে হয়, গণতন্ত্র রক্ষার স্বার্থে যে পদ্ধতিতে নির্বাচন করতে হয়, আমি সেই পদ্ধতিতে একজন নাগরিক হিসেবে আমি আমার মনোনয়ন জমা দিয়েছি। আমি জানি, আমাকে ক্ষতিগ্রস্ত করা হতে পারে। কিন্তু, আমি আমার মায়ের জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত। আমার জীবন থাকতে পারে, নাও থাকতে পারে। কিন্তু, আমার মা আছে। আমি চাই আমার মা সুস্থ থাক, ভাল থাক। আমি ১৮ মাস ধরে মিথ্যার দায় বহন করছি। এটা থেকে আমি মুক্তি পেতে চাই'।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'আপনারা জানেন ২০১৮ সালে আমি লক্ষ লক্ষ ভোটারের ভোটে নির্বাচিত মেয়র। আমার বিরুদ্ধে কী হয়েছে, কী করা হয়েছে - আপনারা সকলেই জানেন। নগরবাসী আমাকে পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত করেছিল। কী ঘটনার মধ্যে, কী অবস্থায় আজকে আমি এখানে এসে দাঁড়িয়েছি, সেটা আপনাদের জানা আছে। সে হিসেবে, আমি নগরের প্রত্যেকটি ভোটারের কাছে বলতে চাই, আমি যদি এই শহরের মানুষের উপকার করে থাকি, যদি ভালো কিছু করে থাকি তাহলে সবার সহযোগিতা চাই'।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সুত্র বলছে, এখন পর্যন্ত গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে মোট ১৩ জন প্রার্থী মনোনয়ন পত্র উত্তোলন করেছেন। এর মধ্যে মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিনে অর্থাৎ আজপর্যন্ত জমা দিয়েছেন মোট ১২ জন।
মেয়র পদে যারা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তারা হলেন– আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, তার মা জায়েদা খাতুন, স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকার শাহ নূর ইসলাম রনি, আব্দুল্লাহ আল মামুন, মো. হারুন অর রশীদ, মো. অলিউর রহমান, মো. আবুল হোসেন, জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী এম.এম নিয়াজ উদ্দিন, গণফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী আতিকুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী গাজী আতাউর রহমান ও জাকের পার্টি মনোনীত প্রার্থী রাজু আহম্মেদ।
এছাড়া সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩৪৩ জন ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৮৯ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র উত্তোলন করেছেন। এবং শেষ দিন পর্যন্ত সাধারণ কাউন্সিলর পদে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন ২৯০ জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন ৮২ জন।