সিলেট সিটি নির্বাচন: নগর উন্নয়ন নিয়ে আ.লীগ-বিএনপির পাল্টাপাল্টি অভিযোগ
এবারের সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের প্রধান ইস্যু হয়ে ইঠতে পারে উন্নয়ন। সিলেটের বর্তমান মেয়র ও বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরীর দাবি টানা ১০ বছর মেয়র থাকাকালে নগরের ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন তিনি। যদিও আওয়ামী লীগ নেতাদের অভিযোগ, সরকার বিপুল পরিমাণ বরাদ্দ দিলেও অপরিকল্পিত উন্নয়ন করেছেন আরিফ, যা নগরবাসীর কোনো উপকারে আসছে না। আরিফের বিরুদ্ধে লুটপাটের অভিযোগও রয়েছে আওয়ামী লীগের।
তবে আরিফুল হক চৌধুরী এবার নির্বাচনে প্রার্থী হবেন কি না তা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তার দল বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তবে আরিফ স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। এ ব্যাপারে শীঘ্রই নিজের অবস্থান স্পষ্ট করার কথা জানিয়েছেন তিনি।
আরিফুল হক প্রার্থী না হলে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ বিরোধ আর 'বহিরাগত' ইস্যু নির্বাচনে প্রধান ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারে। আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী যুক্তরাজ্য প্রবাসী এবং সিলেট নগরের বাসিন্দা নন বলে অভিযোগ করেছেন প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য প্রার্থীরা। এছাড়া বিদ্যুৎ-গ্যাসসহ নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিসহ জাতীয় ইস্যুগুলো প্রভাব ফেলতে পারে স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনে।
এবার নির্বাচন হবে ভরা বর্ষায়। গত বর্ষায়ও বন্যায় তলিয়ে গিয়েছিল পুরো নগর। এছাড়া কয়েকদফা নগরজুড়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। আরিফুল হক ১০ বছর মেয়র থাকাকালে সিলেটের জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রায় হাজার কোটি টাকা ব্যয় করেন। তবুও দুর্ভোগ থেকে রক্ষা মেলেনি নগরবাসীর। এবার বর্ষাকালের নির্বাচনে এটি হয়ে উঠতে পারে প্রধান ইস্যু।
বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) রাতে সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের জরুরি সভায় উঠে আসে উন্নয়নের প্রসঙ্গটি। সভাপতির বক্তৃতায় মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ বিএনপিদলীয় মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সমালোচনা করে বলেন, গত ১০ বছরে সরকার সিলেটে প্রচুর টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের ছিটেফোঁটাও হয়নি, বরং বর্তমান মেয়রের নেতৃত্বে লুটপাটের রাজত্ব কায়েম হয়েছে। দিন দিন জনদুর্ভোগ বেড়েছে। এ সময় তিনি বলেন, নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করতে হলে নগরভবনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব নিশ্চিত করা জরুরি।
মেয়র আরিফের বিরুদ্ধে কেবল সৌন্দর্যবর্ধনের উন্নয়নের অভিযোগ এনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ১০ বছরে বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে সরকার দুই হাজার ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। উনি কাজ করেননি তা আমি বলব না — উনি চেষ্টা করেছেন। উনি যে কাজটা করেছেন, কসমেটিক্স উন্নয়ন হয়েছে। পরিকল্পিত উন্নয়ন হয়নি।'
নির্বাচিত হলে মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে পরিকল্পিত উন্নয়ন করবেন বলে মন্তব্য করেন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।
তবে অপরিকল্পিত উন্নয়নের অভিযোগ নাকচ করে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, 'উন্নয়ন প্রকল্পগুলো পরিকল্পনা করে পাঠালে সরকারের চারটি মন্ত্রণালয় খতিয়ে দেখে তারপরই বরাদ্দ দিয়ে থাকে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীও এসবের অনুমোদন দেন। তাই এত এত মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী-সচিব ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা যা দেখে অনুমোদন দিয়ে থাকেন, সেসব অপরিকল্পিত হয় কীভাবে?'
আওয়ামী লীগের নেতাদের সমালোচনার বিষয়ে আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, 'যারা এমন সমালোচনা করছেন, তাদের উদ্দেশে বলতে চাই, গত বন্যার সময় সিলেটে বন্যাদুর্গতদের দেখতে এসে সার্কিট হাউসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেখানেই এর উত্তর আছে। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় আমার কাজের প্রশংসা করেছিলেন।'
লুটপাটের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, 'আওয়ামী লীগ নেতারা সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এসব বলছেন। সিলেটে কী উন্নয়ন হয়েছে কিংবা জনগণের আকাঙ্ক্ষা কতটুকু পূরণ করতে পেরেছি, সেটা এখানকার জনগণই ভালো জানেন। এর বিচারের ভারও তাই জনগণের কাছেই রইল।'
বিএনপি নির্বাচনে না আসার ঘোষণা দিলেও জাতীয় পার্টি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা জানিয়েছে। এক্ষেত্রে এসব দলের প্রার্থীরাই হতে পারেন আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। আরিফ প্রার্থী না হলে আওয়ামী লীগের কেউ বিদ্রোহী হতে পারেন বলেও গুঞ্জন রয়েছে।
জাতীয় পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশী দলটির সিলেট মহানগর শাখার আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম বাবুল। আনোয়ারুজ্জামানকে বহিরাগত উল্লেখ করে বাবুল বলেন, 'আওয়ামী লীগের যিনি প্রার্থী হয়েছেন, উনি যুক্তরাজ্যে বসবাস করেন। তিনি সিলেট মহানগরের মানুষ নন। উনি সিলেটে তেমন সময় কাটাননি। এজন্য মানুষের সাথে মাঠপর্যায়ে তার কোনো আত্মিক সম্পৃক্ততা নেই।'
এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, যুক্তরাজ্যে থাকলেও আমি সিলেটের রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছি। সব নির্বাচনের আগে দেশে এসে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছি। গত সিটি নির্বাচনেও আমি আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে পুরো নগর চষে বেড়িয়েছি। ফলে নগরের মানুষের সাথে আমার সুসম্পর্ক রয়েছে। এছাড়া যুক্তরাজ্যেও আমি সিলেটের রাজনীতিই করি।
নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী, আগামী ২১ জুন ইভিএমে সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন হবে।