বাংলাদেশ কখনো ঋণের ফাঁদে পড়েনি: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ ঋণ পরিশোধে কখনও খেলাপি হয়নি এবং "ঋণের ফাঁদে" পড়েনি। তিনি বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে একটি স্মার্ট দেশে রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে ডিজিটাল ও ভৌত অবকাঠামোতে বিশ্বব্যাংকসহ বৈশ্বিক উন্নয়ন সহযোগীদের বিনিয়োগ অব্যাহত রাখার আহ্বানও করেন।
তিনি বলেন, "বর্তমান পরিস্থিতি আমাদের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির সুযোগ এবং খাপ খাইয়ে নেয়ার সক্ষমতার ইঙ্গিত দেয়। বাংলাদেশ কখনই তার ঋণ পরিশোধে খেলাপি হয়নি বা তথাকথিত 'ঋণের ফাঁদে' পড়েনি।"
আজ সোমবার (১ মে) বিশ্বব্যাংকের সদর দফতরের শিহাতা সম্মেলন কক্ষে বৈশ্বিক ঋণদাতাটির নির্বাহী পরিচালক পর্ষদের সঙ্গে বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের মধ্যে ৫০ বছরের অংশীদারত্ব উপলক্ষ্যে অনানুষ্ঠানিক মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন।
তার সরকার বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আরো অধিক অংশীদারত্ব গড়ে তুলতে চাইছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "আমরা এখন আমাদের অংশীদারত্বের ভবিষ্যতের দিকে তাকাতে চাই। বিশ্বব্যাংককে অবশ্যই দারিদ্র্য বিমোচন এবং উন্নয়ন অর্থায়নের মূল লক্ষ্যের বিষয়ে মনোযোগী থাকতে হবে।"
"বিশ্বব্যাংক সক্রিয়ভাবে আমাদের ডিজিটাল রূপান্তরে সম্পৃক্ত রয়েছে। আমাদের সরকার ২০২১ সালের মধ্যে 'ডিজিটাল বাংলাদেশ' গড়ে তোলার মাধ্যমে আমাদের জনগণের কাছে তার কথা রেখেছে। আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে জ্ঞানভিত্তিক 'স্মার্ট বাংলাদেশ' হওয়ার জন্য পরবর্তী লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি"।
শেখ হাসিনা দুঃখপ্রকাশ করে বলেন যে, বাইরের চাপের কারণে বিশ্বব্যাংক সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে (পদ্মা বহুমুখী সেতু) অর্থায়ন থেকে সরে গিয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী বিশ্বব্যাংকের মতো উন্নয়ন সহযোগীদের আমাদের ডিজিটাল ও ভৌত অবকাঠামোতে বিনিয়োগ অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, "আমরা বাণিজ্য বহুমুখীকরণ, বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং অভ্যন্তরীণ সম্পদ উৎপাদনের জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা চাই।"
বিশ্বব্যাংক এখন বাংলাদেশে ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় সাপেক্ষ ৫৩টি বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং তা এপর্যন্ত ঋণদাতাটির দেয়া ৩৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অনুদান ও ঋণের অংশ।
"মানব পুঁজি গঠনে আমাদের কর্মক্ষমতা অবকাঠামো মেগা-প্রকল্পে আমাদের বিনিয়োগের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। বাংলাদেশের নিজস্ব আর্থিক ও কারিগরি সংস্থান দিয়ে ৬.১ কিলোমিটার পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ আমাদের অর্থনৈতিক পরিপক্কতার লক্ষণ। বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা, বিনামূল্যে ও সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসন, কমিউনিটি স্বাস্থ্যসেবা, বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি, বিদ্যুৎ সুবিধা এবং দুর্যোগ প্রস্তুতিতে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে।
"আমরা সার্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা, মানসম্পন্ন শিক্ষা, শিশু কল্যাণ, দক্ষতা বৃদ্ধি, নগর উন্নয়ন, টেকসই শিল্পায়ন, পরিবেশ সুরক্ষা এবং কার্যকর প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে চাই" যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা মতপ্রকাশ করেন যে, উন্নয়নশীল দেশগুলোকে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের সুযোগ দেওয়ার জন্য বিশ্বব্যাংককে অর্থায়ন বাড়াতে হবে।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের এসডিজি সম্মেলনে বিশ্বব্যাংক এ বিষয়ে তার সুনির্দিষ্ট ধারণা তুলে ধরবে।
প্রধানমন্ত্রী পরে বিশ্বব্যাংকের ইস্ট ডাইনিং রুমে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট, এমডি এবং ভিপিদের সাথে পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনের পর একটি উচ্চ পর্যায়ের মধ্যাহ্নভোজে যোগ দেন।
পরে তিনি বিশ্বব্যাংকের প্রেস্টন অডিটোরিয়ামে "বিশ্বব্যাংক-বাংলাদেশ অংশীদারত্বের ৫০ বছর বিষয়ে প্রতিফলন" শীর্ষক বক্তৃতা দেন।
ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্বব্যাংকের সদর দফতরে পৌঁছালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেক এবং তার এসএআর ভিপি মার্টিন রাইজার ফুলের তোড়া দিয়ে স্বাগত জানান।
অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাসের সঙ্গে যৌথভাবে একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন এবং প্রদর্শনীর কিছু অংশ ঘুরে দেখেন।
বিশ্বব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক পরমেশ্বরন আইয়ার, পরিচালক জুনাইদ আহমেদ কামাল, ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনা বিয়েরদে, বিকল্প নির্বাহী পরিচালক ডক্টর আহমেদ কায়কাউস এবং অন্যান্য পরিচালকরাও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী সেখানে একটি নৃত্য পরিবেশনাও উপভোগ করেন।