৮৭ দিন অনশনে ইসরায়েলি কারাগারে মারা গেলেন ফিলিস্তিনি নেতা খাদের আদনান
ইসলামিক জিহাদের প্রাক্তন মুখপাত্র খাদের আদনান, যিনি ইসরায়েলের আটক নীতির বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন, ৮৭ দিনের অনশনের পর মঙ্গলবার মারা গেছেন বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। খবর সিএনএন-এর।
ইসরায়েলি প্রিজন সার্ভিস তার মৃত্যু ঘোষণা করে এক বিবৃতিতে জানায়, ৪৫ বছর বয়সী আদনান গত ৫ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে অনশনরত অবস্থায় ছিলেন। বন্দী থাকাকালীন তিনি মেডিকেল পরীক্ষা করাতেও অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। প্রায় ৩ মাসের অনশনের পর মঙ্গলবার ভোরে তাকে নিজ কক্ষে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।
ফিলিস্তিনি প্রিজনার্স সোসাইটিও আদনানের মৃত্যুর খবর জানিয়ে বলেছে, "ইসরায়েলি দখলদারিত্ব শেখ খাদের আদনানকে হত্যা করেছে।"
ইসলামিক জিহাদ তাকে কমান্ডার পদে মরণোত্তর পদোন্নতির ঘোষণা দিয়ে বলেছে, "খাদের আদনান এমন একটি অপরাধে শহীদ হয়েছেন, যার জন্য ইহুদিবাদী দখলদারিত্ব সম্পূর্ণ এবং প্রত্যক্ষভাবে দায়ী।" এই ইরান-সমর্থিত ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী ইসরায়েলে আত্মঘাতী বোমা হামলা এবং রকেট হামলার জন্য দায়ী।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, একটি সন্ত্রাসী সংগঠনের সদস্যপদ, সন্ত্রাসবাদে সমর্থন এবং উস্কানি দেওয়ার সন্দেহে ফেব্রুয়ারিতে তাকে আটক করা হয়েছিল।
এদিকে তার মৃত্যুর খবরের পর ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক দলগুলো আদালত, স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয় এবং দোকানপাট বন্ধ রেখে আদনানের শোকে মঙ্গলবার পশ্চিম তীরে সাধারণ ধর্মঘট ঘোষণা করেছে। পশ্চিম তীরের ইসরায়েলি কারাগার ওফারের ফিলিস্তিনি বন্দীরা মঙ্গলবার তার মৃত্যুর প্রতিবাদে সাধারণ অনশন শুরু করেছে বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনি প্রিজনার্স সোসাইটি।
আদনান ইসরায়েলের দখলকৃত পশ্চিম তীরের শহর জেনিনের বাসিন্দা। মঙ্গলবার জেনিন থেকে পাওয়া একটি ভিডিওতে তার এক ছেলেকে তার মৃত্যুর প্রতিবাদ করতে দেখা যায়।
ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ) অনুসারে, ঘটনার পর গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলের দিকে তিনটি রকেট ছোড়া হয়েছে, যা খোলা জায়গায় বিধ্বস্ত হয়েছে। আইডিএফের তথ্যানুযায়ী, ক্ষেপণাস্ত্রকে আটকানোর জন্য কোনো ইন্টারসেপ্টর চালু করা হয়নি, তবে দক্ষিণ ইসরায়েলের নেগেভ মরুভূমিতে সাদ কিবুতজ নামক এলাকায় সাইরেন বেজে উঠেছিল।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শাতায়েহ ইসরায়েলকে 'ইচ্ছাকৃত হত্যাকাণ্ড চালানোর' দায়ে অভিযুক্ত করেছেন। আদনানকে মুক্তি দেওয়ার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে, তার চিকিৎসায় অবহেলা করে এবং তার স্বাস্থ্যের অবস্থা গুরুতর হওয়া সত্ত্বেও সেলে রাখার মাধ্যমে তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
আদনান এর আগে ২০১২ সালে ৬৬ দিন অনশন চালানোর পর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন, যা সে সময়ে ইসরায়েলি কারাগারে একজন ফিলিস্তিনি বন্দীর দীর্ঘতম অনশন ছিল। ফিলিস্তিনি প্রিজনার্স সোসাইটির তথ্য অনুসারে, ২০০৪ সাল থেকে তিনি কমপক্ষে ১১ বার গ্রেপ্তার হয়েছেন এবং এর মধ্যে পাঁচবারই তিনি অনশন করেছেন। ২০১৫ সালে, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ তাকে মুক্তি দেওয়ার আগে তিনি ৫৫ দিনের জন্য অনশন করেছিলেন।
আদনান মোট আট বছর ইসরায়েলি কারাগারে কাটিয়েছেন, যার বেশিরভাগই প্রশাসনিক বন্দিত্বের অধীনে। একটি বিতর্কিত ইসরায়েলি সামরিক নিয়ম অনুযায়ী, সামরিক কর্তৃপক্ষকে নিরাপত্তার অজুহাতে বন্দীদের অনির্দিষ্টকালের জন্য আটকে রাখার অনুমতি দেওয়া হয়। এই প্রক্রিয়ার ফলে যে কোনো ব্যক্তিকে 'গোপন প্রমাণের' ওপর ভিত্তি করে আটক করা যায় এবং আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করা কিংবা তাদের বিচারের অনুমতি দেওয়ার কোনো প্রয়োজন হয় না।
জেল থেকে তার অনশনের ঘোষণার পর তার মুক্তির দাবিতে ফিলিস্তিনিরা পশ্চিম তীর এবং গাজায় একাধিক সমাবেশ করেছে।
বর্তমানে ইসরায়েলের কারাগারে ৪,৯০০ জন ফিলিস্তিনি বন্দী রয়েছেন, যার মধ্যে ১,০০০ জনকেই কোনো অভিযোগ ছাড়াই প্রশাসনিক বন্দিত্বের মাধ্যমে আটকে রাখা হয়েছে। ফিলিস্তিনি প্রিজনার্স সোসাইটির তথ্যমতে, ২০০৩ সালের পর থেকে এটি সর্বোচ্চ সংখ্যা।