বগুড়ায় করতোয়া দখল-দূষণ: ম্যাজিস্ট্রেট নির্দেশ দেওয়ার কে? মন্তব্য পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলীর
রাতের আঁধারে বগুড়ায় করতোয়া নদী ভরাটের ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ দিলেও তা করতে নারাজ জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
ঘটনার দুদিন পেরিয়ে গেলেও মামলা হয়নি। পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলীর ভাষ্য, নদী দখল-দূষণের এ ঘটনায় মামলার করার নির্দেশ ভ্রাম্যমাণ আদালত তাদের দিতে পারেন না।
বিপরীতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক বলছেন, আদেশনামায় নদী ভরাটের সুনির্দিষ্ট অভিযোগে পাউবোকে নিয়মিত মামলা দায়েরের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মামলা না করার কোনো কারণ নেই।
বগুড়ায় করতোয়া নদীর মূল প্রবাহে মাটি ফেলার অভিযোগে, গত সোমবার রাতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে পাঁচটি ট্রাক জব্দ করা হয়। এ সময় কাউকে না পাওয়ায় ট্রাকগুলো বগুড়া সদর থানা পুলিশের জিম্মায় নেওয়া হয়। একইসঙ্গে ভ্রাম্যমাণ আদালত জেলা পাউবোকে নিয়মিত মামলা করার নির্দেশ দেন। তবে আজ বুধবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন জেলা প্রশাসনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার মো. নুরুল ইসলাম। এসময় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল হক ও সদর থানা পুলিশের সদস্যরাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
সিনিয়র সহকারী কমিশনার নুরুল ইসলাম জানান, 'রাতের আঁধারে মম-ইন বিনোদন পার্ক এলাকায় ড্রাম ট্রাকের মাধ্যমে মাটি ফেলার ঘটনায় পাউবোকে নিয়মিত মামলার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের অর্ডার শিটও সংস্থাটির নির্বাহী প্রকৌশলীকে দেওয়া হয়েছে'।
বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আলম সিদ্দিকী জানান, 'করতোয়া নদী ভরাটের ঘটনায় এখনো (বুধবার সন্ধ্যা ৬টা) কোনো মামলা হয়নি'।
এবিষয়ে জানতে চাইলে বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল হক বলেন, 'অভিযানে পাঁচটি ট্রাক জব্দ করা হয়েছে। এগুলো পুলিশের জিম্মায় রয়েছে। নদীর বিষয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে। সব ঘটনা তো আইনের মধ্যেই হয়েছে। কিন্তু, পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নির্দেশ (মামলার নির্দেশ) দেওয়ার উনি (নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট) কে? আইনশৃংখলা বাহিনী তাদের মতো করে ব্যবস্থা নেবে। উনি (নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট) নির্দেশ দেওয়ার কেউ নন'।
বগুড়ার জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, 'অর্ডার শিটে পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলীকে নিয়মিত মামলার করার জন্য বলা আছে। তিনি যেহেতু পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এ কারণে তিনিই প্রসিকিউশন অথরিটি (অভিসংশক) হবেন। যদি তিনি মামলা না করেন তাহলে তার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে'।
মম-ইন ইকোপার্কের বালা কৈগাড়ী কাঁঠালতলা ঈদগাহ মাঠ সংলগ্ন এলাকায় মাটি ও বর্জ্য ফেলে নদীর মূল প্রবাহ বন্ধ ও ভরাটের দায়ে গত ১৮ মার্চ টিএমএসএসকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করেন জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এরপর জেলা প্রশাসক, পাউবোর খসড়া এক জরিপে, শুধুমাত্র ওই এলাকায় নদীর সীমানা জরিপ চালানো হয়। জরিপে নদীর সীমানা নির্ধারণ নিয়ে বেশ সমালোচনা হয়।
এরপর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, 'নদীর সীমানা এভাবে নির্ধারণ হতে পারে না। নদীর মধ্যে সীমানা খুঁটি দিয়ে তার মূল প্রবাহকে মেরে ফেলা হচ্ছে। এটা ভয়ানক অপরাধ'।
বেলার নির্বাহী পরিচালক বগুড়া জেলা প্রশাসকের সাথে দেখা করে একটি স্মারকলিপি দেন। এ সময় রিজওয়ানা হাসান জেলা প্রশাসকে কোর্টের আদেশ অনুযায়ী, নদীর সীমানা নির্ধারণ করেত অনুরোধ করেন। তখন জেলা প্রশাসক বলেন, নদীর সীমানা পুনরায় নির্ধারিত না হওয়া পর্যন্ত ওই এলাকায় টিএমএসএসের ভরাট কাজ বন্ধ রাখার জন্য মৌখিকভাবে বলা হয়েছে।
তবে জেলা প্রশাসনের এই মৌখিক নির্দেশনা মানেনি টিএমএসএস। গত ৩০ এপ্রিল প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে ওই এলাকায় ভরাটের বিষয়টি জানায়। বগুড়ার পরিবেশবাদীরা বলছেন, প্রকাশ্যে পত্রিকায় সংবাদ আকারে বিজ্ঞাপন পাঠিয়ে টিএমএসএস প্রশাসনের ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করছে।
মম-ইন ইকোপার্ক এলাকায় টিএমএসএসের বিরুদ্ধে করতোয়া নদীর ৪ দশমিক ৯ একর জমি দখলের প্রমাণ রয়েছে জেলা প্রশাসকের কাছে। তবে এসব অভিযোগ মানতে নারাজ টিএমএসএস। তাদের দাবি, জেলা প্রশাসনের জরিপে উঠে আসা ৪ দশমিক ৯০ একর জমি সরকারের কাছ থেকে ১৯৯৫ সালে ৯৯ বছরের জন্য ইজারা নেয় তারা।