রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদলের মিয়ানমার সফর: ৬ বছরে প্রথম স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে দাবি পুরনো সেই ঘরবাড়ি, গ্রামের
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডুতে যে গ্রামগুলো থেকে রোহিঙ্গারা পালিয়েছিল তা আর আগের অবস্থায় নেই; কিন্তু রোহিঙ্গাদের দাবি, তারা ঠিক সেখানেই ফিরবে যেখানে একসময় তাদের বাস ছিল।
সূত্র থেকে জানা গেছে, মিয়ানমারের পক্ষ থেকে তাদের জন্য নির্মিত নতুন বাড়ি বা বসতিতে থাকতে চায় না রোহিঙ্গারা।
অনেকটা বাংলাদেশের ভাসানচরের মতোই মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের জন্য বসতি স্থাপন করেছে সেখানে।
তবে রোহিঙ্গারা একে 'কনসেনট্রেশন ক্যাম্প' আখ্যা দিয়ে বলেছে, "আমরা কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে নয়, ঘরে ফিরতে চাই।"
আজ রাখাইন রাজ্য পরিদর্শনের পর ২০ রোহিঙ্গা সহ ২৭ জনের রোহিঙ্গা প্রতিনিধি দলের এটিই হলো প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ।
রোহিঙ্গাদের জন্য এ যাত্রা ছিল প্রায় ছয় বছর পর তাদের স্বদেশে প্রত্যাবর্তন, কিন্তু তাদের বেশিরভাগেরই উপলব্ধি যেন তারা সম্পূর্ণ ভিন্ন এক জগতে চলে এসেছে।
রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদল ও মিয়ানমার সরকারের একটি দলের মধ্যে মংডু শহরে এখন বৈঠক চলছে।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডুতে প্রত্যাবাসনের পরিবেশ-পরিস্থিতি দেখতে বাংলাদেশে বসবাসরত ২০ রোহিঙ্গা সহ ২৭ প্রতিনিধি মিয়ানমারে পৌঁছেন শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে প্রতিনিধি দলটি কক্সবাজারের টেকনাফের জালিয়াপাড়া ঘাট থেকে মিয়ানমারের উদ্দেশে যাত্রা দেয়।
প্রতিনিধি দলের সদস্য এবং কক্সবাজারস্থ শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেছেন, রাখাইনে গিয়ে নিজেদের গ্রাম দেখে রোহিঙ্গারা মত দিয়েছেন, তা আর আগের মতো নেই। যেখানে থাকতেন, আবার ঠিক সেখানেই ফিরতেন চান তারা।
আরআরআরসি জানান, সেক্ষেত্রে মিয়ানমার সরকার বলছে রোহিঙ্গারা তাদের আগের অবস্থানে ফিরতে চাইলে তাদের ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড (এনভিসি) দেখাতে হবে।
প্রতিনিধি দলটিতে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পের ২০ রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতা রয়েছেন, যার মধ্যে ১৭ জন পুরুষ ও ৩ জন নারী। এর বাইরে ৭ কর্মকর্তা রয়েছেন, যারা রোহিঙ্গা সংশ্লিষ্ট কাজে নিয়োজিত।
এর মধ্যে কক্সবাজারস্থ শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (এআরআরআরসি) মো. খালেদ হোসেন, অন্যান্য কর্মকর্তা এবং দোভাষী রয়েছেন।
মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদলটিকে সাথে নিয়ে প্রত্যাবাসনের পরিবেশ-পরিস্থিতি অনুকূল কি-না তা দেখতে এই সফর। বিকাল নাগাদ প্রতিনিধি দলটি টেকনাফে ফিরবেন।
আরআরআরসি বলেন, রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদলের হয়ে যে সব রোহিঙ্গা রাখাইনে যাচ্ছে তারাই মূলত মূখ্য ভূমিকা পালন করবে সেখানে। যেহেতু মিয়ানমারে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন করা হবে, তাই তাদের সরেজমিন অভিজ্ঞতা প্রত্যাবাসন কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ।
আরআরআরসি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ঢল শুরু হওয়ার পর ২০১৮ সালে বাংলাদেশ মিয়ানমারের কাছে প্রত্যাবাসনের জন্য ৮ লাখ ৮২ হাজার রোহিঙ্গার একটি তালিকা দিয়েছিল। সে তালিকা যাচাই-বাছাই করে মাত্র ৬৮ হাজার রোহিঙ্গার একটি তালিকা চূড়ান্ত করে তা বাংলাদেশের কাছে ফেরত পাঠিয়েছিল মিয়ানমার।