বিএম ডিপোর বিস্ফোরণে ৫১ মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়: পুলিশ
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে ৫১ জন নিহতের ঘটনায় দায়ের মামলায় কারও দায় পায়নি পুলিশ। অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বিএম কনটেইনার ডিপোর ৮ কর্মকর্তাকে।
গত বুধবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পরিদর্শক মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী আদালতে মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদন গ্রহণের শুনানির জন্য আগামী সোমবার দিন ধার্য রয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা কোর্ট পরিদর্শক জাকের হোসাইন মাহমুদ।
গত বছরের ৪ জুন রাতে সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপোতে বিস্ফোরণে ৫১ জন নিহত হন। আহত হন দুই শতাধিক। আহতদের চট্টগ্রাম ও ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এ ঘটনায় ৭ জুন রাতে সীতাকুণ্ড থানার এসআই আশরাফ সিদ্দিকী বাদী হয়ে ডিপোর আট কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করে মামলা করেন।
আসামিরা হলেন, উপমহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) নুরুল আক্তার; ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) খালেদুর রহমান; সহকারী প্রশাসন কর্মকর্তা আব্বাস উল্লাহ; সিনিয়র নির্বাহী (প্রশাসন ও অভিযোগ) মো. নাসির উদ্দিন; সহকারী ব্যবস্থাপক (অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার ডিপো) মো. আব্দুল আজিজ; ইনচার্জ (কন্টেইনার মালবাহী স্টেশন) সাইদুল ইসলাম; কনটেইনার ও মালবাহী স্টেশনের নজরুল ইসলাম এবং উপ-মহাব্যবস্থাপক (বিক্রয় ও বিপণন) নাজমুল আক্তার খান।
ডিপোতে অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনায় করা মামলার এজাহারে বলা হয়, ডিপোতে কেমিক্যাল ভর্তি কনটেইনার থাকার কথা ফায়ার সার্ভিসকে জানায়নি মালিকপক্ষ। এ কারণে কেমিক্যাল ভর্তি কনটেইনারের আগুন পানিতে নেভানো সম্ভব হয়নি। কেমিক্যালের কারণে এক কনটেইনার থেকে আরেক কনটেইনারে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। সেই সঙ্গে হতাহতের ঘটনা ঘটে।
কিন্তু ১১ মাস পর পুলিশের দেওয়া চূড়ান্ত রিপোর্টে বলা হচ্ছে, মামলাটিতে 'তথ্যগত ভুল' করা হয়েছে; বলা হচ্ছে এটি একটি দুর্ঘটনা ছিল।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ বলেন, "প্রতিবেদনে এটিকে একটি 'মিস্টেক অব ফ্যাক্ট' বলে বলা হয়েছে। ঘটনার জন্য ৮ জন কর্মকর্তা দায়ী নয়। তাদের দায়িত্বেও কোনো অবহেলা ছিল না। এটা একটা দুর্ঘটনা।"
অথচ ঘটনার পর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় থেকে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মালিকপক্ষ ও তদারকির দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরগুলো দায় এড়াতে পারে না। আবার চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের গঠিত তদন্ত কমিটি দায়িত্বে অবহেলার জন্য ডিপো কর্তৃপক্ষকে দায়ী করে।
পুলিশের চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সম্পাদক আখতার কবির বলেন, "অর্ধশতাধিক মানুষ মারা গেলো। দুইশ এর বেশি আহত। রপ্তানি পণ্যসহ কয়েক শত কোটি টাকার সম্পদের ক্ষতি হলো। কিন্তু ঘটনার জন্য কেউ দায়ী নয়?"
তিনি আরো বলেন, "দায়িত্বশীলদের এমন প্রতিবেদনের কারণে মূল অপরাধীরা পার পেয়ে যায়। এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়।"
নেদারল্যান্ডস ও বাংলাদেশের দুটি প্রতিষ্ঠানের যৌথ বিনিয়োগে বিএম কনটেইনার ডিপো গড়ে ওঠে। এখানে বাংলাদেশের স্মার্ট গ্রুপের অংশীদারি রয়েছে। গত বছরের ৪ জুন রাতে সীতাকুণ্ডের কদমরসুল এলাকায় অবস্থিত বিএম ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড হয়। আগুন লাগার ঘণ্টাখানেকের মধ্যে সেখানে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হয়। এরপর টানা ৮৬ ঘণ্টা আগুন জ্বলতে থাকে।
একপর্যায়ে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। ওই দুর্ঘটনায় আশপাশে থাকা ফায়ার সার্ভিসের কর্মী ও শ্রমিকসহ ৫১ জন নিহত হন। এ ছাড়া আহত হন দুই শতাধিক। বিস্ফোরণে রপ্তানির অপেক্ষায় থাকা ১ কোটি ৯৩ লাখ ডলার মূল্যের (১৬৭ কোটি টাকা, ডলারের তৎকালীন মূল্য অনুযায়ী) পণ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়।