মিয়ানমারের দুই মডেল গ্রামে কী আছে রোহিঙ্গাদের জন্য?
বাংলাদেশের কক্সবাজারে থাকা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দেশে ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার দুটি মডেল গ্রাম নির্মাণ করেছে। 'পাইলট রিটার্ন প্রজেক্ট'-এর অধীনে নির্মিত এ গ্রাম দুটি ইতোমধ্যেই বাংলাদশের কর্মকর্তারা পরিদর্শন করেছেন।
পরিদর্শন শেষে কর্মকর্তারা জানান, গ্রামগুলো বাংলাদেশের 'আশ্রায়ন প্রজেক্ট' এর আদলে তৈরি করা হয়েছে।
রিফিউজি রিলিফ অ্যান্ড রিপেট্রিয়েশন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে রোহিঙ্গা নেতারা শুক্রবার (৫ মে) গ্রাম দুটি ভ্রমণ করেন।
মিজানুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "একটি গ্রামে ২১৫টি ঘর রয়েছে, আর অন্যটিতে রয়েছে ৯৯টি। চার থেকে পাঁচজন একটি বাড়িতে থাকতে পারবেন। তবে এসব বাড়িতে বসবাসকারীদের নিজস্ব রান্নাঘর কিংবা শৌচালয় নেই।"
মিজানুর রহমানের মতে, "ঘরগুলো বেশ ছোট। রোহিঙ্গা পরিবারের স্বাভাবিক সদস্য সংখ্যা চিন্তা করলে একটি পরিবারের জন্য দুটি করে ঘর প্রয়োজন হবে। বাইরে থাকা পাবলিক রেস্টরুমগুলো তাদেরকে ব্যবহার করতে হবে।"
মিজানুর রহমান আরও বলেন, "আমরা তাদের জিজ্ঞাসা করেছিলাম রোহিঙ্গারাদের খাবারের জোগাড়টা কীভাবে হবে; কেননা ঘরের ভেতরে খাবারের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ বলেছে, রোহিঙ্গাদের নিজেদেরই খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে।"
অন্যদিকে, মিয়ানমার সরকারের পক্ষ থেকে পরিবারগুলোকে এক মাসের জন্য চুলা ও জ্বালানি সুবিধা প্রদান করা হবে বলে জানা গেছে।
রোহিঙ্গা শিশুরা স্থানীয় কয়েকটি স্কুলে পড়াশোনার সুযোগ পাবে। একইসঙ্গে নিকটবর্তী ক্লিনিকগুলোতে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করতে পারবে।
মিজানুর রহমান বলেন, "রোহিঙ্গাদের মধ্যে যারা আগে মিয়ানমারে ফিরে যাবে, তারাই এখানে বসবাসের সুযোগ পাবেন। পরবর্তীতে তারা ধীরে ধীরে অন্যস্থানেও বাড়ি কেনার সুযোগ পাবেন।"
তবে রোহিঙ্গারা রাখাইন রাজ্যে নিজেদের জন্মভূমিতে ফিরে যেতে চান। কিন্তু মিয়ানমার সরকারের মতে, বর্তমানে সেটি সম্ভব নয়।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে কয়েক দশক ধরেই রোহিঙ্গাদের ওপর প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নির্মম নৃশংসতা চালানো হয়েছে। যার ফলে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ২০১৮ সালে ঢাকা ও নেপিদোর মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। কিন্তু এরপর রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে বেশ কয়েকবার সংলাপ হলেও কোনো শরণার্থীকে রাখাইনে পাঠানো সম্ভব হয়নি।
তবে গ্রাম দুটি পরিদর্শনের পর মিজানুর রহমান বেশ ইতিবাচক। তিনি বলেন, "আমরা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করতে চাই। আগামী সপ্তাহে মিয়ানমারের একটি প্রতিনিধি দল প্রত্যাবাসনের কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে বাংলাদেশ সফর করবেন।"
তবে পরিদর্শন শেষে রোহিঙ্গা নেতারা গ্রাম দুটিকে 'জেলখানা' হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
মিজানুর রহমান জানান, ঢাকা-নেপিদো চুক্তি অনুযায়ী, জন্মভূমির আশেপাশেই রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন করা হবে। তিনি বলেন, "প্রত্যাবাসন শুরু করতে আমাদের অবশ্যই বেশ ভালোভাবে যোগাযোগ করতে হবে।"