রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন তরান্বিত করতে ‘অবিচলভাবে মধ্যস্থতা করছে’ চীন: রাষ্ট্রদূত ইয়াও
বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন শনিবার (৬ মে) বলেছেন যে, চীন — একটি দায়িত্বশীল প্রধান দেশ হিসেবে — রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসন তরান্বিত করতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে 'অবিচলভাবে মধ্যস্থতা করছে'।
তিনি বলেন, 'স্থানীয় এক বন্ধু একবার আমাকে আন্তরিকভাবে বলেছিলেন যে অনেক লোক মুখে মুখে সাহায্যের কথা বলে, তবে কেবল চীন প্রত্যাবাসনকে তরান্বিত করতে বাস্তবিক পদক্ষেপ নিচ্ছে।'
রাজধানীর একটি হোটেলে কসমস ডায়ালগ অ্যাম্বাসেডরস' লেকচার সিরিজের অংশ হিসেবে 'বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক: ভবিষ্যতের পূর্বাভাস' (বাংলাদেশ-চায়না রিলেশনস: প্রগ্নসিস ফর দ্য ফিউচার)-শীর্ষক এক সিম্পোজিয়ামে মূল বক্তব্য দেওয়ার সময় রাষ্ট্রদূত এসব কথা বলেন।
কসমস ফাউন্ডেশনের সভাপতি ও প্রাক্তন পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী এতে সভাপতিত্ব করেন।
এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কসমস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এনায়েতউল্লাহ খান।
বাংলাদেশ কক্সবাজার ও ভাসানচরে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে।
পুনর্বাসনের প্রস্তুতি দেখতে শুক্রবার ২০ জন রোহিঙ্গাসহ ২৭ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল মিয়ানমারের রাখাইন পরিদর্শন করেছে। তারা রোহিঙ্গাদের জন্য নির্মিত ১৫টি গ্রাম ও অন্যান্য অবকাঠামো পরিদর্শন করেন।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, প্রতিনিধি দলের নেতাও বলেছেন, 'আমরা মংডু শহরের চারপাশে তাদের জন্য করা ব্যবস্থা পরিদর্শন করে ২০ জন রোহিঙ্গাকে নিয়ে ফিরে এসেছি। প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে মিয়ানমার সরকারের সদিচ্ছা দেখেছি। আমরা প্রত্যাবাসন শুরু করতে চাই।'
এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত ইয়াও বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যু একটি মানবিক ট্র্যাজেডি এবং এটি আর কখনোই হওয়া উচিত নয়।
রাষ্ট্রদূত বলেন, চীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করে, কারণ তিনি বাংলাদেশের মাটিতে এই রোহিঙ্গাদের স্থান দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ১২ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাদের আতিথেয়তার জন্য বাংলাদেশ বিশাল ত্যাগ স্বীকার করেছে।
রাষ্ট্রদূত ইয়াও বলেছেন, কম আগ্রহ এবং আন্তর্জাতিক দাতাদের কম অনুদানের কারণে তারা রোহিঙ্গাদের খুব খারাপ পরিস্থিতিতে থাকতে দেখছেন এবং এর একমাত্র উপায় হলো প্রত্যাবাসন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার দীর্ঘদিন ধরে একে অপরের সঙ্গে আলোচনা করে আসছে এবং আশা প্রকাশ করেন যে দুই দেশ ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারবে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, 'অবশ্যই রোহিঙ্গা চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সমস্যা নয়।'
তিনি বলেন, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচটি স্থায়ী সদস্যের মধ্যে একটি হিসেবে চীন মধ্যস্থতাকারী ও সহায়তাকারীর ভূমিকা পালনের জন্য কঠোর পরিশ্রম করছে। আশা করছি, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থনে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের যৌথ প্রচেষ্টায় প্রত্যাবাসন হবে। 'এটি একটি টেকসই প্রক্রিয়া হবে এবং হওয়া উচিত।'
রাষ্ট্রদূত ইয়াও বলেন, বাংলাদেশ ও চীন সবসময়ই মূল স্বার্থের ইস্যুতে একে অপরকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করেছে।
তিনি বলেন, 'আমরা উভয়েই শান্তির জন্য স্বাধীন কূটনীতি অনুসরণ করি। আমরা সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা, আঞ্চলিক অখণ্ডতা এবং জাতীয় মর্যাদা রক্ষায় একে অপরকে সমর্থন করি।'
চীনা রাষ্ট্রদূত বলেছেন যে তারা আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে সমন্বয় ও সহযোগিতা করে এবং যৌথভাবে বহিরাগত হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করে।
তিনি বলেন, 'গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের মতো ইস্যুতে আমরা কখনই একে অপরকে অভিযুক্ত করিনি। চীন এক-চীন নীতির জন্য বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদী এবং দৃঢ় সমর্থনের প্রশংসা করে।'
ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরের লি কুয়ান ইউ স্কুল অব পাবলিক পলিসি রিসার্চ-এর ভাইস ডিন ও প্রফেসর কান্তি বাজপেই, চীনের সেন্টার সাংহাই ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ (এসআইআইএস)-এর সিনিয়র ফেলো এবং চীন ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক মহাসচিব লিউ জংয়ি, চীনের ফুদান ইউনিভার্সিটি'র ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ-এর অধ্যাপক লিন মিনওয়াং অনুষ্ঠানে আলোচনা করেন।
এছাড়া চীনের সেন্টার সাংহাই ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ (এসআইআইএস)-এর ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ-এর সহকারী রিসার্চ ফেলো এল আই হংমেই এবং ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত তারিক এ করিম সংলাপে আলোচক হিসেবে অংশ নেন।