কালুরঘাট সেতুতে কক্সবাজারের ট্রেন চলবে সেপ্টেম্বরে
চট্টগ্রামের কালুরঘাট রেল সেতুর ওপর দিয়ে কক্সবাজারের ট্রেন চলবে আগামী সেপ্টেম্বর মাস থেকে। জুন মাসে সেতুটি সংস্কারের কাজ শুরু হবে। মানুষের চলাচলের জন্য ওয়াকওয়েসহ পুরো কাজ শেষ হতে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় লাগবে। তবে ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ট্রেন চলাচলের উপযোগী করা হবে। সেতু সংস্কারের সময় বিকল্প হিসেবে কর্ণফুলী নদীতে দুটি ফেরী চালু করা হবে।
শনিবার (৬ মে) চট্টগ্রাম নগরীর সার্কিট হাউজে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য জানিয়েছেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীর। কালুরঘাট সেতুর সংস্কার কাজ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ফেরী সার্ভিস চালু সংক্রান্ত এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের সঞ্চালনায় সভায় রেলওয়ে, সড়ক ও জনপদ বিভাগ, বিদ্যুৎ, বিআইডব্লিউটিএ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় প্রশাসনসহ সকল অংশীজনের প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন।
সভার শুরুতে কালুরঘাট সেতুর বর্তমান অবস্থার চিত্র তুলে ধরা হয় একটি প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে। এতে বলা হয়- ১২ টন বহনে সক্ষম এই রেলসেতুটি ১৯৩১ সালে চালু করা হয়েছিল। ১৯৬২ সালে রেলের পাশাপাশি সড়কও চালু করা হয়। ৯০ বছরের পুরনো এ সেতুটি বর্তমানে ১০ টন বহনে সক্ষম। ব্রীজের স্প্যানগুলো পুরাতন হয়ে গেছে। পরামর্শক সংস্থা বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বিশেষজ্ঞ দল ব্রীজটির স্প্যান, পাটাতনসহ সব অংশের চিত্র তুলে আনে। এতে দেখা গেছে, ব্রীজটির মূল ১৯টি স্প্যানের মধ্যে ৮টির অবস্থা খুবই খারাপ। এগুলো অনেকটা ক্ষয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত সংস্কার করা প্রয়োজন। সংস্কারের সময় সেতুটি বন্ধ রাখতে হবে।
রেল সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, 'দ্রুত সময়ের মধ্যে সেতুটি সংস্কার করতে আমরা সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছি। কক্সবাজারের ট্রেন চলবে এই সেতুর ওপর দিয়ে। তাই এটি সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত ট্রেন চালানো যাবে না।'
বোয়ালখালীর প্রায় ৩ লাখ মানুষের চট্টগ্রাম শহরে যাতায়াতের প্রধান পথ কালুরঘাট সেতু। ৯০ বছরের পুরনো সেতুটির অনেক জায়গায় ক্ষয়ে গেছে। পাটাতনে ফুটো হয়ে গেছে। এ সেতুর উপর দিয়ে দক্ষিণ চট্টগ্রামে ট্রেন ও গাড়িও চলাচল করে। একপাশ থেকে গাড়ি পার হলে অন্যপাশের গাড়ি ও মানুষ থেমে থাকে। এজন্য হাসপাতালে নিতে দেরি হওয়ায় অনেক অসুস্থ রোগী মারা গেছে। এই আসনের সংসদ সদস্য প্রয়াত জাসদ নেতা মইন উদ্দীন খান বাদলও জাতীয় সংসদে বিষয়টি নিয়ে অনেকবার আলোচনা করেন। এরপরও সমাধান আসেনি। তার মৃত্যুর পর নতুন সংসদ সদস্যও মোছলেম উদ্দিন আহমদ নতুন সেতু নির্মাণের দাবি তোলেন। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল যোগাযোগ শুরুর বিষয়টি সামনে এলে প্রধান প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দাঁড়ায় সেতুটি। এরপর নতুন সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তবে নতুন সেতু নির্মাণ যেহেতু সময়সাপেক্ষ, তাই বর্তমান সেতুটিকে সংস্কার করা হবে।
স্থানীয়দের মধ্যে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল করিম, ভাইস চেয়ারম্যান এসএম সেলিম, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শামীম আরা বেগম, পৌরসভার মেয়র মো. জহুরুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। তারা বলেন, বোয়ালখালীর মানুষ দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করেছেন নতুন সেতু নির্মাণের জন্য। নতুন সেতু নির্মাণ সময়সাপেক্ষ। তাই সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
অংশীজনেরা আরো বলেন, দুটি ফেরী চালু করে সেতুর বিকল্প সম্ভব নয়। এছাড়া সামনে বর্ষাকাল। তখন জোয়ার-ভাটার সময় ফেরী চলাচল বন্ধ রাখতে হবে। এজন্য জুনে না শুরু করে জুলাই মাসে সংস্কারের কাজ শুরু হোক।
জবাবে রেল সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, নতুন সেতু নির্মাণের নকশা চূড়ান্ত হয়ে গেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুরো বিষয়টি দেখে নকশা চূড়ান্ত করেছেন।
তিনি আরো বলেন, 'সেতু সংস্কারের সময় কিছু যানবাহনকে শাহ আমানত সেতুর দিকে পাঠানো গেলে আর সমস্যা হবে না। ফেরী সংখ্যা দুটির পরিবর্তে চারটি করা যায় কিনা, সেটি নিয়ে সড়ক ও জনপদ বিভাগের চিঠি দেওয়া হবে। নতুন সেতুর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের বার্তাটি আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছে দেব।'
মতবিনিময় সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আ স ম মাহাতাব উদ্দিন, জেলা রেলওয়ে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী, রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (পূর্ব) মো. জাহাঙ্গীর আলম, জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) সুদীপ্ত সরকার, সিএমপর অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক বিভাগ উত্তর) মোহাম্মদ কাজী হুমায়ুন রশীদ, চট্টগ্রাম সড়ক বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রোকন উদ্দিন খালেদ চৌধুরী, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুভাশীষ চক্রবর্তী, বিআইডব্লিউটিসির উপ-মহাব্যবস্থাপক গোপাল চন্দ্র মজুমদার, বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক মো. সবুর খান প্রমুখ।