জোঁক ও আজগুবি চিকিৎসা
রক্তশোষণ মহৌষধ
ব্লাডলেটিং বা শরীর থেকে রক্ত বের করে নেওয়ার মাধ্যমে রোগের উপশম নিশ্চিত করার উদ্যোগের ইতিহাস অন্তত তিন হাজার বছর আগেকার। বাংলাদেশে শিঙ্গা লাগিয়ে রক্ত টেনে বেদে সম্প্রদায়ের নারী বৈদ্য বাতের চিকিৎসা করে থাকে। আমি গত শতকের ষাট ও সত্তরের দশকে এমনকি ধানমন্ডি এলাকাতেও তাদের কার্যক্রম দেখেছি, সেবাপ্রার্থী নারী বা পুরুষ পিঠ উদোম করে বসেছে কিংবা শুয়েছে। কোমরের দুপাশে ধারালো বেতের ফলা কিংবা ব্লেডে একটুখানি কেটে অগ্রভাগে ছিদ্রযুক্ত শিং বসিয়ে এই ছিদ্রে মুখ লাগিয়ে ঊর্ধ্বমুখী বাতাস টেনে ভ্যাকুয়াম সাকশনের মতো ভেতর থেকে রক্ত টেনে আনছে। কালচে রং ধরা এই রক্ত দেখিয়ে বলে বিষরক্ত বেরিয়ে এসেছে। রোগী সেরে উঠবে। আমি ঘাড়ে ও দুই হাতের পেছন দিকটাতেও শিঙ্গা লাগাতে দেখেছি।
গ্রামবাংলায় শরীরে জোঁক লাগিয়ে রক্ত শোষণ করিয়ে নেবার দৃশ্যও আমি দেখিছি। রক্ত বের করে নেওয়া যে একটি কার্যকর পদ্ধতি, চিকিৎসাবিজ্ঞানের জনক হিপোক্র্যাটেস (খ্রিষ্টপূর্ব ৪৬০-খ্রিষ্টপূর্ব ৩৭০) বিশ্বাস করতেন। চিকিৎসাবিজ্ঞানে তার অন্যতম অনুসারী গ্যালেন অব পেরগামুস (১২৯ খ্রিষ্টাব্দ জন্ম-২০০ খ্রিষ্টাব্দ মৃত্যু) রক্তনালি থেকে রক্তক্ষরণ করিয়ে বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করেন এবং ইউরোপের বিভিন্ন অংশে রক্ত বের করা চিকিৎসাপদ্ধতি একটি প্রমিতমানের চিকিৎসা হিসেবে গৃহীত হয়।
রোগীর শরীর থেকে রক্ত বের করার দুটো পদ্ধতি অনুসরণ করা হতো। একটি হচ্ছে শিরা কিংবা ধমনি হতে রক্ত বের করে নেওয়া আর একটি পদ্ধতি শরীরের অসুস্থ স্থানে শিঙ্গা লাগিয়ে বা জোঁক লাগিয়ে রক্ত শুষে নেওয়া। সবচেয়ে বেশি প্রচলিত ছিল কনুইয়ের মিডিয়ান কিউবিটাল শিরা থেকে রক্ত বের করা। ডাক্তারদের পকেটে চোখা ও দুধারী ল্যানসেট থাকত। এটাই রক্ত বের করতে বেশি ব্যবহার করা হতো। বিভিন্ন আকৃতির ব্লেড ও পকেট ছুরিও ব্যবহার করা হতো।
ডাক্তার ফ্রাসোয়া ব্রুসেই (১৭৭২-১৮৩৮) জোঁকের মাধ্যমে রক্তশোষণকে অধিক গুরুত্ব প্রদান করতেন। একটি সাধারণ পরিসংখ্যান এই পদ্ধতির চিকিৎসার জনপ্রিয়তার প্রমাণ দেবে। ১৮৩০-এর দশকে কেবল প্যারিসেই চিকিৎসার জন্য ৫০ থেকে ৬০ লক্ষ জোঁকের প্রয়োজন হতো, আর গোটা ফ্রান্সে লাগত ৩ কোটি ৫০ লক্ষ জোঁক। স্মরণ করা দরকার ১৮৩০ ফ্রান্সের জনসংখ্যা ছিল ৩ কোটি ২৬ লক্ষ আর ১৮৩১ সালে প্যারিসে জনসংখ্যা ছিল ৭ লক্ষ ৮৫ হাজার।
রক্ত বের করা হচ্ছে
রাজা দ্বিতীয় চার্লস (১৬৩০- ১৬৮৫) যখন অজ্ঞান হয়ে যাবার রোগে ভুগছিলেন, প্রথমে তার বাঁ হাতের শিরা থেকে ১৬ আউন্স রক্ত বের করে নেওয়া হয়। পুনরায় শোষণ প্রক্রিয়ায় ৮ আউন্স রক্তপাত করানো হয়। তাতে অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় জাগুলার ভেইন (মস্তিষ্ক থেকে নেমে আসা রক্ত শিরা) থেকে আরও ৮ আউন্স রক্ত বের করা হয়। তারপরই তিনি অজ্ঞান হয়ে যান, জ্ঞান ফিরে আর আসেনি।
এক তুষারাচ্ছন্ন অঞ্চলে দীর্ঘ সময় ঘোড়ায় ভ্রমণ করার পর আমেরিকার প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটন জ্বর ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হন। তার জন্য নিয়োজিত তিনজন চিকিৎসক অজ্ঞাত পরিমাণ রক্ত বের করে নেন। পরদিন সন্ধ্যায় জর্জ ওয়াশিংটন (১৭৩২-১৭৯৯) মারা যান। তার মৃত্যুর পর এই রক্তপাত ও রক্তশোষণ চিকিৎসা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়।
ডাক্তার বেঞ্জামিন রাশ (১৭৪৫-১৮১৩) এভাবেই রক্ত বের করার মাধ্যমে চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে প্রচারণাও চালান। তার সময়ের কোনো কোনো তরুণ ডাক্তার তার চিকিৎসাপদ্ধতিকে কেবল ঘোড়ার জন্য উপযুক্ত, মানুষের জন্য নয় বলে মন্তব্য করেন। তারা মনে করেন, এই পদ্ধতি মার্ডারাস বা খুনতুল্য।
এডিনবরা স্কুল অব মেডিসিনের ডাক্তার উইলিয়াম এলিসন (১৭৯০- ১৮৫৯) এবং ডাক্তার হিউজেস বেনেট (১৮১২-১৮৭৫) একই হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বিরোধ জড়িয়ে পড়েন। ডাক্তার এলিসন রক্ত বের করে চিকিৎসার পক্ষে ডাক্তার বেনেট ঘোর বিপক্ষে। তিনি মনে করেন, এলিসনের পদ্ধতি অবৈজ্ঞানিক। তিনি মাইক্রোস্কোপ ও স্টেথোস্কোপভিত্তিক চিকিৎসা চালানোর ওপরে জোর দেন। প্যারিসে ডাক্তার পিয়েরে লুই নিউমোনিয়া আক্রান্ত ৭৭ জন রোগীর ওপর সমীক্ষা চালিয়ে পুরোনো রক্তপাতের ধারণা নাকচ করে দেন। পরবর্তীকালে পাস্তুর, কোচ, ভিরশ প্রমুখ বিজ্ঞানীর গবেষণা ও পর্যবেক্ষণেও রক্তপাতের চিকিৎসাকে নাকচ করে দেন। এই পদ্ধতির চিকিৎসা বিপজ্জনক বিবেচনায় ধীরে ধীরে প্রত্যাখ্যাত হয়ে পড়ে। তবে এখনো হেমোক্রোমাটোসি (রক্তে অতিরিক্ত আয়রন সঞ্চিত) রোগে পাশ্চাত্যে রক্ত ঝরানোর চিকিৎসা দেওয়া হয়ে থাকে।
জোঁকের চেয়ে বড় ডাক্তার নেই
আমি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুরের গ্রামে হাঁটুর কাছাকাছি কিঞ্চিত ওপরে ও নিচে দুই জোঁক লাগিয়ে রক্ত শোষণ করাতে দেখেছি। উদ্দেশ্য, হাঁটুর বাত নামানো। জোঁক প্রয়োগকারী ব্যক্তিকে এটাও বলতে শুনেছি জোঁকের চেয়ে বড় কোনো ডাক্তার নেই। আশেপাশের লোকজন সম্মতি দিয়েছে, কথা ঠিক। যারা বলছেন তাদের নিজেদের বা তাদের স্বজনদের উপশম লাভের প্রমাণ তারা দিচ্ছেন।
জোঁক থেরাপি এখনো কোথাও কোথাও চালু আছে। আর চালু আছে জোঁকের তেলের চিকিৎসা। ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে এখনও জোঁকের তেল সঙ্গে কাচের জারে জোঁক প্রদর্শন পূর্বক তেল বিক্রি দেখা যায়।
প্রাচীন মিসর, ভারত আর গ্রিক সা¤্রাজ্যে এই থ্যারাপির ব্যাপক প্রচলন ছিল। ১৮৩১ সালে মানচেস্টার রয়াল ইনফার্মারি হাসপাতালে ৫০০০০ জোঁক রোগীর ওপর প্রয়োগ করা হয়। ইউরোপে ১৯৭০-এর দশকে কোনো কোনো অঞ্চলে জোঁকের আকাল পড়ে যায়। চর্মরোগ, দন্তশূল, স্নায়ুতন্ত্রের রোগ বিভিন্ন যন্ত্রণা ও প্রদাহ থেকে রক্ষা পেতে, এমনকি মাইগ্রেন, সাইনোসাইটিস, এথোরাক্লোরোসিস অ্যালজিমার্স, হেপাটাইটিস, সিস্টাইটিস, গ্লুকোমা ও কিডনির প্রদাহের ক্ষেত্রেও জোঁকের ব্যবস্থাপত্র দেওয়া হয়েছে।
'ব্লাড লেটিং ইন দ্য মিডল এজ' গ্রন্থের লেখক অভিজ্ঞতা লাভের জন্য জোঁক থেরাপি গ্রহণ করেছেন। তার মতে, এটা প্রীতিকর কোনো চিকিৎসা না হলেও তাৎক্ষণিকভাবে তার যন্ত্রণা কমেছে। তার দুই বাহুতে দুটো করে চারটি জোঁক বসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। শুরুর কামড়গুলো যন্ত্রণাদায়ক ছিল।
জোঁকের ম্যাজিকটা আসলে কী
লোকাল ভ্যাসোডায়ালেটর: জোঁক যেখানে কামড়ে রক্ত শুষে নিচ্ছে, কামড়ের কারণে সে অঞ্চলে রক্তপ্রবাহ বেড়ে গেছে।
হাইরুডিন অ্যাফেক্ট: রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা হ্রাস করে। রক্তের অনুচক্রিকাকে পরস্পরের সাথে জড়ো হয়ে লেগে থাকায় বাধা দেয়।
কিছুটা আরাম বোধ করলেও তিনি দ্বিতীয়বার জোঁক থেরাপির শরণাপন্ন হতে সম্মত নন।
আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান জোঁক থেরাপিসহ সকল ধরনের অবৈজ্ঞানিক রক্তপাতের বিরুদ্ধে।
বিষের ট্যাবলেট
ভিয়ক্স নামের ব্যথার ট্যাবলেট ওষুধ ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নাল ল্যানসেটের হিসাব অনুযায়ী ৮৮০০০ হার্ট অ্যাটাক এবং ৩৮০০০ মৃত্যু ঘটিয়েছে। আগ্রাসী মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে প্রবল যন্ত্রণার আর্থরাইটিস এবং ঋতুকালীন যন্ত্রণা সারাতে বাজারে এসেছিল। কিন্তু পাঁচ বছরের মধ্যেই বেশ কয়েক বিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণের দায় নিয়ে ওষুধটিকে বাজার থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
যন্ত্রণানাশের মহৌষধ দাবি করে জার্মান ফার্মাসিউটিক্যালস জায়ান্ট মেরেক ভিয়ক্স প্রস্তুত করে। ১৯৯৮-এর নভেম্বর ৫৪০০ রোগীর ওপর ট্যাবলেটের ফলাফলসহ অনুমোদনের জন্য ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের কাছে আবেদন জানায়। অনুমোদনপ্রাপ্তির পর ১৯৯৯-এর মে মাসে ব্যাপক বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ওষুধটি বাজারে আসে। প্রাথমিকভাবে সাড়া পড়ে যায়। কিন্তু ১৯৯৯-এর নভেম্বরের সমীক্ষায় উঠে আসে ভিয়ক্স সেবনকারী ৪০০০ রোগীর মধ্যে ওষুধের কারণে মৃত ও হার্ট অ্যাটাকগ্রস্তের সংখ্যা ৭৯; কিন্তু সমসংখ্যক যাদের ওপর ল্যাপ্রোক্সেন প্রয়োগ করা হয়েছে, তাদের বেলায় এই সংখ্যা ৪১। একই বছরের ডিসেম্বরের পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, ভিয়ক্সে হার্ট অ্যাটাক ও মৃত্যুঝুঁকি ল্যাপ্রোক্সেন গ্রুপের ওষুধের দ্বিগুণ। ২০০২ থেকে ২০০৪ সালের সেপ্টেম্বরে কোম্পানি এই ওষুধ নিষিদ্ধ হবার আগেই বাজার থেকে তুলে নেয়। কিন্তু কোম্পানির বিরুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্তদের মামলা থেকে বেরিয়ে আসতে ২০০৭ সালে কোম্পানি ৪.৮৫ বিলিয়ন ডলারের একটি ক্ষতিপূরণ প্যাকেজ ঘোষণা করেন। কোম্পানির বিরুদ্ধে ৪৭০০০ ওষুধ ব্যবহারকারীর মামলা ছিল।
ব্লকবাস্টার ভিয়ক্স নিয়ে টম নেসির একটি বেস্ট সেলার্স তালিকাভুক্ত বই, 'পয়জন পিলস: দ্য আনটোল্ড স্টোরিজ অব দ্য ভিয়ক্স ড্রাগ স্ক্যান্ডাল'।
থ্যালিডোমাইড ডিজাস্টার
মানুষের নিজের তৈরি সবচেয়ে বড় মেডিকেল ধ্বংসযজ্ঞ হিসেবে পরিচিত থ্যালিডোমাইড ডিজাস্টার। অবসাদ দূর, উত্তেজনা প্রশমন, মর্নিং সিকনেস হটানো ও অবসাদ দূরীকরণ এবং ঘুমের জন্য সুইজারল্যান্ডের ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি সিবা ১৯৫৩ সালে এই ট্যাবলেট প্রস্তুত করে। পরের বছরই অপর একটি জার্মান কোম্পানি কেমি গ্রুপ নেনথাল ব্র্যান্ডসহ ওষুধটি কিনে নেয় এবং ৪৬টি দেশে বাজারজাত করে। বিশেষ করে গর্ভবতী নারীদের বেলায় এই ওষুধ মারাত্মক সংহারক ভ'মিকা পালন করে। হাজার হাজার গর্ভপাত ঘটে, বিভিন্ন ধরনের শারীরিক বৈষম্য নিয়ে শিশু জন্মগ্রহণ করতে থাকে। গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে থ্যালিডোমাইড সেবন করলে গর্ভাবস্থায় ২০তম দিনে সেন্ট্রাল ব্রেইন ড্যামেজ ২১তম দিনে চোখ, ২২তম দিনে কান ও মুখমণ্ডল, ২৪তম দিনে হাত ও বাহু এবং ২৮তম দিন পর্যন্ত পা বিকৃত করেছে বলে বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে। থ্যালিডোমাইডে ১০০০০ গর্ভবতী নারী আক্রান্ত হয়েছে, তাদের অন্তত ৪০ ভাগের সন্তান জন্মলগ্নে কিংবা জন্মের পরপর মারা গেছে। তবে গর্ভাবস্থায় ৪২ দিনের পর থ্যালিডোমাইড ভ্রুণের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। ওষুধটি ১৯৫৮ সালে ব্রিটেনে বাজারজাতের লাইসেন্সপ্রাপ্ত হলেও ১৯৬১ সালে তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। এই সময়ে গৃহীত ওষুধের প্রতিক্রিয়া ব্রিটেনে ২০০০ বিকলাঙ্গ শিশু জন্মগ্রহণ করে, কয়েক মাসের মধ্যেই অর্ধেক শিশুর মৃত্যু ঘটে। ২০১০ সাল পর্যন্ত বিকলাঙ্গ অবস্থায় বেঁচে থাকা মানুষের সংখ্যা ৪৪৬। ব্রিটেনে কোম্পানি ২৮ মিলিয়ন পাউন্ড ক্ষতিপূরণ দিয়েছে।
১৯৭০-এর দশকে এবং ১৯৮০-এর দশকেও স্পেনে থ্যালিডোমাইড চালু ছিল। প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান স্পেনীয় এজেন্টকে বরাবর চাপে রেখেছে যেন কোনো ওষুধে কালির ছোঁয়া না লাগে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই লুকোচুরি কোম্পানিকে আরও বদনামের অংশীদার করে তোলে। ২০১৫ সালেও স্পেনে ২৫০ থেকে ৩০০ জন থ্যালিডোমাইড ভিকটিম জীবিত ছিল।
অস্ট্রেলিয়াতে সিস্টার প্যাট স্পেরো নামের একজন ধাত্রী শনাক্ত করেন, সিডনির একটি হাসপাতালে ডাক্তার ম্যাকব্রাইডের অধীনে গর্ভবতী রোগীদের বেলায় এ ধরনের সন্তান বিকৃতির ব্যাপারটা ঘটছে। সিস্টার প্যাট এই ওষুধটিকে সন্দেহ করেন। পরীক্ষায় তা সত্যি প্রমাণিত হয়। ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ডের একটি আদালত ১০৭ জন ভিকটিমকে ৮৯ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দেয়। অস্ট্রিয়াতে ইঙ্গবর্গ ইশলার এই ওষুধের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন এবং প্রেসক্রিপশনে এই ওষুধের নাম না লেখার জন্য ডাক্তারদের অনুরোধ করেন। সে কারণেই অস্ট্রিয়ার আক্রান্তের সংখ্যা অনেক কম। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং পশ্চিম জার্মানিতে এ ওষুধের প্রতিক্রিয়ায় বহু পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। লক্ষণীয় ড্রাগ ট্রাফিক আইন প্রয়োগ করে পূর্ব জার্মানি এই ওষুধ দেশে ঢুকতেই দেয়নি। ফলে সেখানে থ্যালিডোমাইড রোগী বস্তুবিকই দুর্লভ।
জার্মানি শনাক্তকৃত রোগীর জন্য প্রতি মাসে ১৩০ থেকে ৪৫০ মার্কের একটি স্টাইপেন্ড প্রদান করে। ২০১৩ সালে কোম্পানির প্রধান সব থ্যালিডোমাইড আক্রান্ত রোগী ও মৃত্যুবরণ করা রোগী স্বজনদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।