অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ মাথায় সুদান থেকে দেশে ফিরলো বাংলাদেশিদের প্রথম ব্যাচ
ভাগ্যান্বেষণে পরবাসে গিয়েও মুক্তি মেলেনি অনেক বাংলাদেশির। আর্থিক স্বচ্ছলতা আর খানিকটা ভালো থাকায় আশায় সুদানে পাড়ি জমানো অনেকেই দেশে ফিরে এসেছেন খালি হাতে। স্বপ্নভঙ্গ আর অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা মাথায় নিয়েই তাদের ফিরতে হয়েছে সংকটে পড়া আফ্রিকান দেশ সুদান থেকে।
"দেশে না ফিরে মরে যেতে পারলেই ভাল হতো। পরিবাবরকে কীভাবে মুখ দেখাবো সেটাই ভাবছি," ১৮ বছর বয়সী টাঙ্গাইলের আলমাস মিয়া এ কথা বলেন।
সৌদি আরবের জেদ্দা হয়ে সুদান থেকে সোমবার (৮ মে) ঢাকায় ফেরা ১৩৬ জন বাংলাদেশির মধ্যে একজন আলমাস। মাত্র দুইমাস আগে ঋণ করে সুদানে গিয়েছিলেন তিনি। সংঘাতের কবলে তাকে দেশে ফিরতে হয়েছে খালি হাতেই।
"আমরা মোট ১৯ জন বাংলাদেশি কোম্পানির চারতলা বিশিষ্ট গোডাউনের তিন তলায়থাকতাম। যুদ্ধ পরিস্থিতি শুরু হওয়ার পর টানা ১৪দিন বিদ্যুৎহীন অবস্থায় অনাহারে-অর্ধাহারে কাটিয়েছি। পর্যাপ্ত খাবার সরবরাহ ছিল না; শুধু খেজুর খেয়েই দিন পার করতে হয়েছে," টিবিএসকে তিনি বলেন।
আতঙ্কের মধ্যে দিন পার করার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে আলমাস বলেন, "প্রায়ই আশেপাশে গোলাগুলির শব্দ পেতাম। এরমধ্যে একাধিকবার আমাদের বাসায় গুলি এসে পড়ে, এতে জানালার কাচ ভেঙ্গে যায়।"
মূলত সুদানের প্যারামিলিটারি গ্রুপের (র্যা পড সাপোর্ট ফোর্সেস- আরএসএফ) হামলায় তাদের ওই এলাকায় ভীতি ছড়িয়ে পড়ে উল্লেখ করে আলমাস জানান, "অনেক বাসায় লুটপাট হয়েছে। তবে আমাদের ভবনের ভেতরে কেউ আসেনি। আমাদের মালিক কাছেই তার নিজের বাসা ছেড়ে পরিবারসহ পালিয়ে যান।"
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সুদানে গিয়েছিলেন আলমাস। সুদানের রাজধানী খার্তুমের একটি সিগারেট কারখানায় মাসিক ৩০,০০০ টাকা বেতনে কাজ শুরু করেছিলেন।
এদিকে, কর্মস্থলে যাওয়ার পর কোম্পানি তাদের কাছ থেকে পাসপোর্ট নিয়ে হস্তগত করে ফেলে। ফলে পাসপোর্টবিহীন অবস্থায় ট্রাভেল পাস সংগ্রহ করে দেশে ফিরতেও তাদেরকে অনেক বেগ পেতে হয়েছে বলে জানান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, সুদানে প্রায় ১,৫০০ বাংলাদেশি রয়েছেন। এদের মধ্যে প্রায় ৭০০ বাংলাদেশি দেশে ফেরত আসার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
এরমধ্যে ৬৭৩ জন রাজধানী খার্তুম থেকে বাংলাদেশ দূতাবাসের ব্যবস্থাপনায় ১৩টি বাসে করে পোর্ট সুদানের উদ্দেশ্যে গত ২ এপ্রিল রওনা দেন।
আলমাস জানান, বাসে করে ১,২০০ কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিয়ে তারা পোর্ট সুদানে পৌঁছান।
অবশেষে সোমবার সকালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ১৩৬ জন বাংলাদেশিকে নিয়ে আসে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট। বিমান বাংলাদেশের সহযোগিতায় জেদ্দা থেকে ঢাকায় ফেরার টিকিটের ব্যবস্থা করে ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অফ মাইগ্রেশন (আইওএম)।
আসার পর তাদেরকে ওয়েজ আর্নার্স ওয়েলফেয়ার বোর্ড (৩,০০০ টাকা) এবং আইওএম (২,০০০ টাকা) খাবার, পানি এবং নিরাপদে বাড়ি পৌঁছাতে পরবর্তী পরিবহন খরচ প্রদান করে।
বিমানবন্দরে ফেরত আসাদের স্বাগত জানিয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও প্রবাসী মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, "কেউ চিন্তা করবেন না। আপনারা আমাদের দেশের জন্য উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন; কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, সুদানে সব হারিয়েছেন আপনাদের সবাইকে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে। তবে নিশ্চিন্ত থাকুন, আমরা আপনাদের সাহায্য ও সমর্থনে পাশি আছি।"
"সরকার সম্ভাব্য সব ধরনের আর্থিক সহায়তা দেবে, এবং আইএমও তাদের সহায়তা দেবে। আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য হল, এই কঠিন সময়ে আপনারা কোনো অসুবিধার সম্মুখীন হলে তা দূর করা," যোগ করেন তিনি।
মন্ত্রী আরও বলেন, "সুদান থেকে বাংলাদেশিদের দেশে ফেরত আনতে কল্যাণ বোর্ড থেকে ২ লাখ ডলার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও আপনাদের পুনর্বাসনের জন্য ঋণ দেওয়ার লক্ষ্যে আমাদের প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক আছে।"
"আগামী ৯ বা ১০ মে সুদান থেকে বাংলাদেশিদের পরবর্তী ব্যাচ দেশে ফেরার কথা রয়েছে," যোগ করেন মন্ত্রী।