টাকার অবমূল্যায়ন থেকে চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুনাফা ২৭,৭৬১ কোটি টাকা
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2023/05/10/p1_infograph_bbs-gain-from-foreign-currency-revaluation-02.jpg)
দেশে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় চলতি অর্থবছরের নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) ফরেন কারেন্সি রিভ্যালুয়েশন বা বৈদেশিক মুদ্রার পুনর্মূল্যায়ন থেকে ২৭,৭৬১ কোটি টাকা মুনাফা অর্জন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, যা দেশের একক অর্থবছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২২ অর্থবছরে বৈদেশিক মুদ্রা পুনর্মূল্যায়নের মুনাফা ছিল ২৬,৩০০ কোটি টাকা, যার ওপর ভিত্তি করে সে বছর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুনাফা দাঁড়িয়েছিল ২৯,২৪৭ কোটি টাকায়। ক্রমবর্ধমান ডলার সংকটের মধ্যে এই ধারা অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে, ২০২১ অর্থবছরে বৈদেশিক মুদ্রা পুনর্মূল্যায়ন থেকে লাভ হয়েছিল মাত্র ২,৬০৫ কোটি টাকা।
আগে, ব্যাংকগুলো থেকে ৮৬ থেকে ৯৩ টাকা দরে ডলার কিনে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে ডলার সংকট শুরু হলে চলতি অর্থবছরে ব্যাংকগুলোর কাছে আবার ১০০ থেকে ১০৪ টাকায় সেই ডলার বিক্রি হয়েছে; ফলে লাভ হয়েছে বিপুল পরিমাণ।
যদিও টাকার অবমূল্যায়নের ফলে তৈরি হওয়া এই মুনাফা 'বণ্টনযোগ্য লাভ' না হওয়ায় দেশের মানুষের ভোগান্তি কমাতে এটি খুব একটা কাজে আসবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের স্থায়ী অ্যাকাউন্টে থাকবে এই আয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, "দেশের ডলারের বিনিময় হার বেড়ে গেলে এর ভুক্তভোগী হবে দেশের মানুষই। কারণ তখন আমদানি ব্যয় অনেক বেড়ে যাবে এবং এর ফলে সবাইকে অতিরিক্ত মূল্য পরিশোধ করে পণ্য কিনতে হবে।"
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোঃ মেজবাউল হক টিবিএসকে বলেন, "ফরেন কারেন্সি রিভ্যালুয়েশন গেইনটা নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্টে ডেবিট-ক্রেডিট হয়। যখন গেইন হয় এর পরিমাণ বেড়ে যায়, আবার লস হলে এই অ্যাকাউন্ট থেকে ডেবিট (কেটে নেওয়া) হয়।"
তিনি আরও বলেন, "তবে এই মুনাফা ব্যয় করার সুযোগ নেই। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ কম থাকায় ডলারের দাম বেশি হওয়ায় মুনাফা এসেছে। তবে ডলারের দাম আবারও কমার সম্ভাবনা রয়েছে।"
২০২১ সালের আগস্টে দেশে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪৮ বিলিয়ন ডলার। এরপর থেকে আমদানি বৃদ্ধি ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে আমদানি ব্যয় বেড়ে গিয়ে রিজার্ভের পরিমাণ কমতে থাকে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক চলতি অর্থবছরের নয় (জুলাই থেকে ৯ মে পর্যন্ত) সময়ে প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে, যা আগের ২০২১-২২ অর্থবছর সময়ে ছিল ৭.৬২ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৩ সালের ৯ মে এসে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৯.৭৮ বিলিয়ন ডলারে।
এদিকে, বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৩৮ টি শর্ত দিয়েছে। তাদের ঋণের অন্যতম বড় শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে- ইউনিফর্ম এক্সেচেঞ্জ রেট চালু করা, ঋণের সুদহার বাড়ানো ও ফরেক্স রিজার্ভকে নিট রিজার্ভ হিসেবে দেখানো।
শর্ত মেনে ডলারের দর আরও বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মঙ্গলবার (৯ মে) পর্যন্ত দর ছিল প্রতি ডলার ১০৪.৫ টাকা।