এবার আম রপ্তানির লক্ষ্য ৪ হাজার মেট্রিক টন
বছর বছর দেশে আম রপ্তানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। রপ্তানিযোগ্য আমের আবাদ বৃদ্ধি, আধুনিক বাগান ব্যবস্থাপনা এবং নতুন বাজার সৃষ্টির ফলে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আম রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছেন রপ্তানিকারকরা।
চলতি মৌসুমে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২৩ লাখ ৩৫ হাজার ৪৯৯ মেট্রিক টন। তবে আমের বাম্পার ফলন হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ২০ শতাংশ বেশি আম উৎপাদন হবে বলে আশা করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। সে হিসেবে, ২৮ লাখ মেট্রিক টন আম উৎপাদন হবে চলতি মৌসুমে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে প্রায় ১০ হাজার মেট্রিক টন রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ফল ও সবজি এবং এ-সংক্রান্ত পণ্য রপ্তানিকারক সমিতির (বিএফভিএপিইএ) তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে প্রায় চার হাজার মেট্রিক টন আম রপ্তানির লক্ষ্যে তারা বিভিন্ন দেশের ক্রেতাদের সাথে যোগাযোগ করছেন।
সমিতির সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন টিবিএসকে বলেন, 'প্রতিবছর আম রপ্তানির পরিমাণ বাড়ছে। চলতি বছরে চার হাজার মেট্রিক টন আম রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা আমাদের। আশা করছি এই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।'
রপ্তানিকারকরা জানিয়েছে, বাংলাদেশ থেকে আকাশপথের ভাড়া বাদে কেজিপ্রতি ১৫০ টাকা থেকে ১৬০ টাকায় আম রপ্তানি হয়। চলতি বছরে ৬৪ কোটি টাকার আম রপ্তানির সম্ভাবনা রয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২৭৯ মেট্রিক টন, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৭৯১ মেট্রিক টন ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৭৫৭ মেট্রিক টন আম রপ্তানি হয়। গত অর্থবছরে খিরসাপাত, হিমসাগর, গোপালভোগ, লেংড়া, আম্রপালি সহ সাত জাতের আম রপ্তানি হয়। এগ্রি-প্রোডাক্ট হিসেবে আম রপ্তানিতে সরকার ২০ শতাংশ নগদ প্রণোদনা দেয় রপ্তানিকারকদের।
অধিদপ্তরের রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্পের পরিচালক মোহাম্মদ আরিফুর রহমান টিবিএসকে বলেন, চলতি বছরে রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ১০ হাজার মেট্রিক টন। গত বছরের তুলনায় এবার আম রপ্তানির পরিমাণ বাড়বে।
আরিফুর রহমান বলেন, আম রপ্তানির জন্য উত্তম কৃষি ব্যবস্থাপনা (জিএপি) সার্টিফায়েড আম বাগান না থাকার কারণে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আম রপ্তানির পরিমাণ বাড়ানো যাচ্ছে না। বাংলাদেশে সার্টিফায়েড আম বাগান তৈরীতে কাজ করছে কৃষি বিভাগ। দুয়েক বছরের ব্যবধানে এটি করা সম্ভব হবে। তখন আম রপ্তানির পরিমাণ আরো বেড়ে যাবে।
তিনি আরো বলেন, "পার্বত্য চট্টগ্রামে উৎপাদিত আম এখনো রপ্তানির প্রক্রিয়ায় আসেনি। বানানা ম্যাংগো জাতের আম রপ্তানির প্রক্রিয়া চলছে। সেটি সম্ভব হলে বাংলাদেশ থেকে আম রপ্তানি আরো বেড়ে যাবে।"
এক্সপোর্ট প্রমোশন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত ২৯,৪২৯ ডলারের ফ্রেশ এন্ড ড্রায়েড ম্যাংগো রপ্তানি হয়। ২০২১-২২ অর্থবছরে ২,৩৬,০২৭ ইউএস ডলার, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৪০০১৯ ইউএস ডলার, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১১৯৬ ইউএস ডলার এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩৬৬৩ ইউএস ডলারের আম রপ্তানি হয়।
বর্তমানে ১৫টির অধিক দেশে আম রপ্তানি হচ্ছে যার মধ্যে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, ভুটান, সুইজারল্যান্ড, গ্রেট ব্রিটেন, ভারত, কুয়েত, নেদারল্যান্ডস, নেপাল, সুইডেন, সিঙ্গাপুর, সোয়াজিল্যান্ড। অথচ ৫ বছর আগেও দুই থেকে তিনটি দেশে আম রপ্তানি হতো।
আম রপ্তানিকারকরা জানিয়েছেন, আম রপ্তানির মৌসুম মে থেকে জুলাই পর্যন্ত। মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে শুরু হবে আম রপ্তানি। চলবে আগস্ট পর্যন্ত।
তারা জানান, বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে আম চাষ বাড়ছে। ফলে বাড়ছে রপ্তানিও। দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি আরো কয়েকগুণ বৃদ্ধি করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন এই খাতের উদ্যোক্তারা।
সাতক্ষীরার সবজি ও ফল রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান শাওন ট্রেডার্সের সহকারী পরিচালক ইমরান হোসেন বলেন, "চলতি মৌসুমে আমি প্রথমবারের মতো আম রপ্তানি শুরু করছি। এর আগে সবজি, পেয়ারা সহ অন্যান্য ফল রপ্তানি করলেও এই মৌসুমে গোপালভোগ, গোবিন্দভোগ সহ অন্যান্য প্রজাতির ১০০ মেট্রিক টন আম রপ্তানি করবো। মে মাসের শেষ সপ্তাহে ইংল্যান্ড এবং পর্তুগালে আম রপ্তানি শুরু হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২৩ লাখ ৩৫ হাজার ৪৯৯ মেট্রিক টন। গত মৌসুমের আম উৎপাদনের উপর ভিত্তি করে এই লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে চলতি মৌসুমে আমের মুকুল আসার সময়কালীন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না আসায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বেশি আম উৎপাদন হবে। সে হিসেবে চলতি মৌসুমে ২৮ লাখ মেট্রিক টন আম উৎপাদন হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হর্টিকালচার উইংয়ের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) কে জে এম আব্দুল আউয়াল টিবিএসকে বলেন, "আম চাষে বাণিজ্যিকীকরণ এবং উন্নত ব্যবস্থাপনার কারণে ক্রমাগত আমের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে পার্বত্য অঞ্চলের আম বাগান ক্ষতিগ্রস্ত না হলে চলতি বছরে সর্বোচ্চ আম উৎপাদন হবে।"