সেনাপ্রধানের সাথে আমার কোনো সমস্যা নেই: ইমরান খান
পাকিস্তানের টালমাটাল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীর সাথে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দ্বন্দ্ব যেন ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে। কিন্তু পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)-এর প্রধান দাবি করেছেন, দেশটির সেনাপ্রধানের সাথে তার কোনো সমস্যা নেই। তবে তার ক্ষমতায় ফিরে আসার পথে চিফ অব আর্মি স্টাফ (সিওএএস) জেনারেল আসিম মুনির বাধা সৃষ্টি করছেন বলেও অভিযোগ করেন ইমরান খান। খবর আল জাজিরার।
গত শনিবার (২০ মে) আল জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইমরান খান বলেন, "সেনাপ্রধানের সাথে আমার কোনো সমস্যা নেই। তবে মনে হচ্ছে, সেনাপ্রধানের নিজের আমার সাথে সমস্যা রয়েছে। যদিও তাকে ক্ষেপিয়ে তোলার মতো আমি কিছু করিনি। তবে আমাকে নিয়ে তার এমন কোনো সমস্যা আছে যেটা আমি জানি না।"
অন্যদিকে ইমরান খানের গ্রেপ্তারের পর দেশজুড়ে বিক্ষোভ এবং সেনাবাহিনীর নানা স্থাপনা ও কর্মকর্তাদের বাড়িতে হামলা করেছিল পিটিআই সমর্থকরা। এমনকি মুক্তির পর ইমরান অভিযোগ করেছিলেন, তার গ্রেপ্তারের পেছনে সেনাপ্রধানের হাত রয়েছে।
লাহোরের জামান পার্কে নিজ বাসভবন থেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইমরান খান জানান, তার দলের প্রায় ৭৫০০ জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তবে তিনি আবারও গ্রেপ্তার হলে সমর্থকদের অহিংস থাকার আহ্বান জানান তিনি। কারণ সহিংসতার অজুহাত দেখিয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের উপর নির্যাতন চালাতে পারেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন ৭০ বছর বয়সী এই নেতা।
ইমরান খান বলেন, "আমার দলের শীর্ষ পর্যায়ের প্রায় সকল নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে প্রায় দেড়শো মামলা চলছে। তাই আমাকে যেকোনো সময় গ্রেপ্তার করতে পারে। তবে আপনি কোনো চিন্তাকে গ্রেপ্তার করতে পারবেন না; বিশেষ করে সময় যখন এর পক্ষে থাকে।"
গত সপ্তাহে পাকিস্তানের সামরিক ও বেসামরিক নেতাদের পক্ষ থেকেও সেনাবাহিনীর স্থাপনার হামলাকারীদের 'সামরিক আইন' এর অধীনে বিচারের আওতায় আনার হুমকি দেওয়া হয়েছে। তবে মানবধিকার সংগঠনগুলো এবং অধিকারকর্মীরা এ সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছেন। কারণ এতে করে বেসামরিক নাগরিকদের অধিকার ক্ষুণ্ণ হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে বলে আশঙ্কা তাদের।
গত শনিবার হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)-এর পক্ষ থেকে বলা হয়, পাকিস্তানে ৪ হাজারের অধিক বিক্ষোভকারীকে 'নির্বিচারে গ্রেপ্তার' করা হয়েছে।
সংস্থাটির এশিয়া অঞ্চলের সহযোগী পরিচালক প্যাট্রিসিয়া গসম্যান বলেন, "পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের উচিত বিরোধীদলীয় কর্মী ও শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের 'নির্বিচারে গ্রেপ্তার' বন্ধ করা।" একইসাথে গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে সরকারের মানবাধিকারের যথাযথ প্রয়োগ এবং আইনের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের বিষয়েও গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি।
এইচআরডব্লিউ-এর বিবৃতিতে পাকিস্তানের আইন অনুযায়ী গ্রেপ্তারকৃত সকল ব্যক্তিদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কোর্টে হাজিরের আইনি বাধ্যবাধকতার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়। এছাড়াও, গসম্যান বলেন, 'শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ যারা করছে তারা যেন পাকিস্তানের রাজনৈতিক সংঘাতের বলি না হয়।'
১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে পাকিস্তানে বেশ কয়েকটি অভ্যুত্থানসহ দীর্ঘ সময় সেনা শাসন জারি ছিল। এমনকি দেশটির বেসামরিক সরকারের ক্ষমতা পরিবর্তনের সাথেও সেনাবাহিনীর যোগসূত্র রয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়।
গত বছরের এপ্রিলে অনাস্থা ভোটে প্রধানমন্ত্রীত্ব হারানোর পর, এর পেছনে সেনাবাহিনীর হাত রয়েছে বলে অভিযোগ করেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। একইসাথে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে বহু সভা, সমাবেশ ও র্যালিতে শাহবাজ শরীফ সরকারের তীব্র সমালোচনা করে আগাম নির্বাচনের দাবি তোলেন বিশ্বকাপজয়ী এই সাবেক ক্রিকেটার।
ইমরান খান জানান, প্রধানমন্ত্রী থাকাবস্থায় তিনি খুব ভালো করে জানতেন যে, তৎকালীন সেনাপ্রধান জাভেদ বাজওয়া তাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চাইছেন। তিনি চাইলে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতাবলে সেনাপ্রধানকে পদ থেকে সরিয়ে দিতে পারতেন। তবে তিনি সেনাবাহিনীতে হস্তক্ষেপ করতে চাননি।
অন্যদিকে, বিক্ষোভ চলাকালীন সেনা স্থাপনায় সহিংসতার ঘটনা সম্পর্কে তার কিছুই জানা ছিল না বলে দাবি করেছেন ইমরান। বিক্ষোভে তার ২৫ জন 'নিরস্ত্র সমর্থক'নিহত হওয়ার ঘটনায় পুলিশকে দায়ী করেছেন তিনি।
ইমরান খান বলেন, "প্রতিটি জরিপে দেখা যাচ্ছে নির্বাচন হলে আমরা দুই-তৃতীয়াংশ আসনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করবো। তাই বর্তমান সরকার ও এর পৃষ্ঠপোষকেরা পিটিআইকে ধ্বংস করতে চায়।"