ডেঙ্গুর ভয়াবহতা বিগত রেকর্ড ভাঙার শঙ্কা, তবে প্রস্তুতি এখনও অপর্যাপ্ত
দেশে এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গত বছর এক বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ২৮১ জনের মৃত্যু হয়েছিল। তবে গত বছর মে মাস পর্যন্ত কোনও মৃত্যু ছিল না। আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ২৬৪ জন। কিন্তু এ বছর বিগত সকল বছরের রেকর্ড ভেঙেছে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যায়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যমতে, এ বছর ২৩ মে পর্যন্ত সারাদেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৫৩৩ জন রোগী। এবং মারা গেছেন ১৩ জন। যাদের মধ্যে ৯৭১ জন ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে এবং ঢাকার বাইরে ৫৬২ জন।
২০২২ সাল থেকে এ বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা প্রায় ৫ গুণ বেশি। ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত কোনো মৃত্যু ছিল না। এছাড়া দেশে এক বছরে সর্বোচ্চ আক্রান্ত হয় ২০১৯ সালে। সে বছর মে মাস পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যান মাত্র ২ জন। যাদের দুইজনেরই মৃত্যু হয় এপ্রিল মাসে।
কীটতত্ত্ববিদ এবং বিশেষজ্ঞরাও ধারণা করছেন, এ বছর ডেঙ্গু বিগত সকল বছরের থেকেও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বিগত বছরগুলোর রেকর্ড ভাঙতে পারে বলেও আশঙ্কা তাদের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রাক মৌসুম জরিপেও বিষয়টি উঠে এসেছে। তবে সে অনুযায়ী পর্যাপ্ত প্রস্তুতির কথা জানালেও গতানুগতিক ব্যবস্থাপনায় মশা দমন করতে চায় ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে আগামী ১৫ জুন হতে ৪ মাসব্যাপী ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা এবং আগামী ১৫ জুলাই হতে ৩ মাসব্যাপী কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ প্রতিষ্ঠা করবে। দক্ষিণ সিটি এডিসের লার্ভা পেলে জরিমানা করাসহ নগরবাসীর মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করবে বলে জানিয়েছেন দক্ষিণ সিটি মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। তবে এসব ব্যবস্থা আগের বছরগুলোর মতোই।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনও (ডিএনসিসি) এডিস মশা দমনে জনসচেতনতা বৃদ্ধির সাথে সাথে লার্ভিসাইডে জোর দিচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে এডিসের বংশবিস্তার নিয়ন্ত্রণে, মশক নিধন কার্যক্রমে উত্তর সিটির সাথে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (বিএনসিসি) ও জাতীয় স্কাউট দল যুক্ত করেছে। তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে মশক নিধন কার্যক্রম- জনসচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক (সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগ) অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, "আবহাওয়ার যে ধরন সে অনুযায়ী এখন ডেঙ্গুর সংক্রমণ দ্রুত হারে বেড়ে যাবে। সঠিকভাবে এডিস মশা দমন করতে না পারলে ডেঙ্গুতে সংক্রমণ ও মৃত্যু কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে আমরা বলতে পারি না। বিগত বছরগুলোর সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যেতে পারে।"
এ বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, "আমরা ভুল পথে মশা মারতে চাচ্ছি। আমরা বিষয়টি ভুল জেনেও এর থেকে বের হবার চেষ্টা করছি না। আমরা অনেক রোগ নির্মূল করতে পেরেছি। কিন্তু গত ২৩ বছরে ডেঙ্গু নির্মুল তো দূরের কথা, নিয়ন্ত্রণই করতে পারিনি। এজন্য আমাদের পর্যাপ্ত কীটতত্ত্ববিদ দরকার এবং এর উপর গবেষণা দরকার। এজন্য স্থানীয় সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।"
ঢাকা উত্তর সিটির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ জোবায়দুর রহমান বলেন, "আমরা আগে ফগিং ও লার্ভিসাইড এ সমান গুরুত্ব দিতাম কিন্তু এখন লার্ভিসাইড এ বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সকালে লার্ভিসাইড প্রয়োগের সময় দুই ঘণ্টা এগিয়ে ভোর ৬টায় নিয়ে আসা হয়েছে।"
তিনি আরও বলেন, "আমরা কীটতত্ত্ববিদদের এবং বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতার আলোকে এডিস মশা দমনে পদ্ধতিগত অনেক পরিবর্তন এনেছি। আমরা উত্তর সিটির এলাকার জন্য ১০ জনের পিআর টিম তৈরী করেছি এবং রোভার স্কাউট ও বিএনসিসির সদস্যদের প্রশিক্ষণ প্রদান করছি। পাঠ্যসূচিতে ডেঙ্গুর বিষয় অন্তর্ভুক্ত করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি এবং স্কুলে শিশুদের মাঝে ড্রয়িং বই বিতরণ করা হবে বিনামূল্যে।"