ডেঙ্গু মোকাবিলার নতুন কৌশল: বধির মশা যৌন সম্পর্ক বন্ধ করে দেয়
ডেঙ্গু, পীতজ্বর (ইয়েলো ফিভার) ও জিকার মতো মশাবাহিত রোগ মোকাবিলার বেশ 'অদ্ভুত' একটি কৌশল পেয়ে গেছেন বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। এ পদ্ধতিতে পুরুষ মশাকে বধির করে ফেলা হবে, যাতে তারা সঙ্গিনী খুঁজে বের করে সঙ্গমে লিপ্ত হয়ে প্রজনন করতে হিমশিম খায়।
মশারা উড়ন্ত অবস্থায় মিলিত হয়। পুরুষ মশারা সঙ্গীকে খুঁজে বের করার জন্য শ্রবণশক্তির ওপর নির্ভরশীল। স্ত্রী মশার ডানার শব্দ শুনে আকৃষ্ট হয় পুরুষ মশা।
যে জিনগত বৈশিষ্ট্যের কারণে মশারা শুনতে পায়, পুরুষ মশার মধ্যে সেটির পরিবর্তন বদলানোর একটি গবেষণা চালিয়েছেন গবেষকরা। শ্রবণের জিনগত বৈশিষ্ট্য বদলে দেওয়ার ফলে দেখা গেল, পুরুষ মশারা স্ত্রী মশাদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করছে না। একই খাঁচায় একসঙ্গে তিন দিন কাটানোর পরও তারা শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেনি।
মানুষের মধ্যে রোগ ছড়ায় মেয়ে মশা। তাই তাদের সন্তান জন্মদান ঠেকাতে পারলে মশার জনসংখ্যাও কমে যাবে।
ইউনিভার্সিটি অভ ক্যালিফোর্নিয়া, আরভিন-এর গবেষণাদলটি এডিস ইজিপ্টি মশার ওপর গবেষণা চালায়। এ মশা প্রতিবছর প্রায় ৪০০ মিলিয়ন মানুষের মধ্যে ভাইরাস ছড়ায়।
উড়ন্ত অবস্থায় মশাদের সঙ্গমের অভ্যাস নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেন গবেষকরা। উড়ন্ত অবস্থায় কয়েক সেকেন্ড থেকে এক মিনিটের কিছু কম সময় সঙ্গমে লিপ্ত হয় এ পতঙ্গ। জেনেটিক কৌশলের মাধ্যমে কীভাবে এই মিলন প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করা যায়, তা বের করেছেন গবেষকরা।
পর্যবেক্ষণের পর বিজ্ঞানীরা টিআরপিভিএ নামক একটি প্রোটিনকে টার্গেট করেন। এ প্রোটিনকে মশার শ্রবণশক্তির জন্য অপরিহার্য মনে করা হয়।
জেনেটিক পরিবর্তন আনা মশাগুলোর মধ্যে শব্দ শনাক্তকারী নিউরনগুলো সম্ভাব্য মিলন সঙ্গীর ডানা ঝাপটানো বা ওড়ার আওয়াজে কোনো সাড়া দেয়নি।
সঙ্গীর আকর্ষণীয় আওয়াজ বধির মশা শুনতে পায় না।
অন্যদিকে খাঁচায় একসঙ্গে রাখা বন্য (অপরিবর্তিত) মশাদের পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, এই পুরুষ মশারা দ্রুত সাড়া দিয়ে সঙ্গমে লিপ্ত হয়, তা-ও বহুবার। অপরিবর্তিত পুরুষ মশারা তাদের খাঁচায় থাকা প্রায় সবগুলো স্ত্রী মশাকে নিষিক্ত করেছে।
ইউনিভার্সিটি অভ ক্যালিফোর্নিয়া, সান্তা বারবারা-র গবেষকদেরা অনুসন্ধান পিএনএএস জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। তারা বলেন, জিন পরিবর্তনের ফলাফল ছিল 'দুর্দান্ত'। কারণ বধির পুরুষ মশার সঙ্গম সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়।
জার্মানির ইউনিভার্সিটি অভ ওল্ডেনবার্গ-এর মশা সঙ্গম বিশেষজ্ঞ ড. জোয়ার্গ অ্যালবার্ট এ গবেষণা প্রসঙ্গে বলেন, মশার সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য পতঙ্গটির শ্রবণশক্তির ওপর আক্রমণ চালানো একটি সম্ভাবনাময় পদ্ধতি হতে পারে। তবে এ পদ্ধতি নিয়ে আরও বিশদ গবেষণা ও সঠিক ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, গবেষণাটি প্রথমবারের মতো সরাসরি প্রমাণ দিয়েছে যে 'মশার প্রজননের জন্য শ্রবণশক্তি স্রেফ গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং অপরিহার্য।'
এই বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, 'পুরুষ মশারা যদি শুনবার—এবং শব্দের ভিত্তিতে সঙ্গী খুঁজে বের করার—সামর্থ্য হারালে স্ত্রী মশা বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে।'
অ্যালবার্ট জানান, মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য আরেকটি পদ্ধতি নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। ওই পদ্ধতিতে যেসব এলাকায় মশাবাহিত রোগ আছে, সেখানে জীবাণুমুক্ত পুরুষ মশা ছাড়া।
মশা রোগ ছড়ালেও এ পতঙ্গ খাদ্যশৃঙ্খলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কারণ এরা মাছ, পাখি, বাদুড় ও ব্যাঙের খাদ্য। এছাড়া কিছু প্রজাতির মশা পরাগায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।