তামাকজাত পণ্যে ৩ শতাংশ টার্নওভার কর আরোপ হতে পারে
সিগারেট, বিড়ি, জর্দা সহ বিভিন্ন ধরণের তামাক ও তামাকজাত পণ্যের বিক্রি পর্যায়ে ৩ শতাংশ টার্নওভার কর আরোপ হতে পারে আগামী অর্থবছর থেকে। এর ফলে কোম্পানি কিংবা বিক্রেতার লোকসান হলেও এই হারে কর দিতে হবে। বর্তমানে সিগারেট কোম্পানিগুলোর টার্নওভারের উপর ১ শতাংশ কর রয়েছে।
বর্তমানে দেশে তামাকের বাজারের ৬৫ শতাংশ ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, বাংলাদেশের দখলে। বাদবাকি মার্কেট শেয়ার অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর। কোম্পানিটির স্টেটমেন্ট অনুযায়ী, ২০২২ সালে তাদের বিক্রি বা টার্নওভার ছিল ৩৬ হাজার কোটি টাকার বেশি।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যেসব কোম্পানি বড় টার্নওভার থাকা সত্ত্বেও লোকসান দেখায় কিংবা সামান্য মুনাফা দেখায়, সেসব কোম্পানির কাছ থেকে এ উপায়ে বেশি কর আদায় হবে।
"যেসব কোম্পানির টার্নওভার বেশি কিন্তু মুনাফা খুবই কম কিংবা লোকসান হয়, তারা নতুন এ উদ্যোগ কার্যকর হলে এফেক্টেড হবে। কিন্তু যারা সঠিক প্রফিট দেখায়, তারা তেমন এফেক্টেড হবে না", বলেন কর বিশেষজ্ঞ এবং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ফার্ম স্নেহাশীষ মাহমুদ অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের অংশীদার স্নেহাশীষ বড়ুয়া।
বর্তমানে কোম্পানিগুলোর উপর ৪৫ শতাংশ কর্পোরেট কর ছাড়াও ২.৫% সারচার্জ রয়েছে। এর বাইরে ১% টার্নওভার কর রয়েছে।
এছাড়া সিগারেটের চারটি স্তরের সব স্তরেই মূল্য বাড়ানো হচ্ছে। মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি মিনিমাম রিটেইল প্রাইসে সিগারেট বিক্রির উপর কর প্রদানের জন্য এনবিআরের বিদ্যমান অর্ডারে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হতে পারে।
অন্যদিকে সিগারেট পেপার আমদানির শুল্ক বাড়তে পারে। বাড়তে পারে লিকুইড নিকোটিন ও ই-সিগারেটের ডিভাইসের শুল্ক কর।
সব মিলিয়ে আগামী বাজেটে সহজ কর আদায়ের উপায় হিসেবে সিগারেট থেকে বেশ বড় অঙ্কের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য নিতে যাচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
অবশ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সিগারেটের মূল্যবৃদ্ধি ছাড়াও তামাকজাত পণ্যের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে অন্যান্য পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। স্থানীয় তামাকবিরোধী গ্রুপগুলোও তামাকের ওপর কর বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছে।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মুহম্মদ আবদুল মজিদ টিবিএসকে বলেন, "সিগারেটের দাম বাড়ালে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে। তবে তামাকের ব্যবহার কমাতে হলে এর পাশাপাশি নন-ট্যারিফ শুল্ক সংক্রান্ত বাধা কার্যকরভাবে তৈরি করতে হবে। নাহলে সরকারের রাজস্ব বাড়বে ঠিকই কিন্তু তামাকজাত পণ্যের ব্যবহার কমবে না।"
ব্যয় বাড়বে সিগারেটে
বর্তমানে বাজারের সিগারেটগুলোকে চারটি স্তরে ভাগ করা হয়েছে, সরকারই স্তরগুলোর জন্য মূল্য নির্ধারণ করে দেয় এবং একটি সম্পূরক শুল্ক অ্যাড ভ্যালোরেম কর হিসাবে আরোপ করা হয়।
নিম্ন-স্তরের ১০ শলাকা সিগারেটের দাম ৪০ টাকা থেকে ১২.৫% বাড়িয়ে ৪৫ টাকা করা হতে পারে। বর্তমানে সমগ্র বাজারের প্রায় ৭৩% ধারণ করা এই স্তরের সম্পূরক শুল্ক ১% বাড়িয়ে ৫৮% করা হতে পারে।
মধ্যম স্তরের ১০ শলাকা সিগারেটের বর্তমান মূল্য ৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬৭ টাকা, উচ্চ স্তরের এক প্যাকেট সিগারেটের দাম ১১১ টাকা থেকে ১১৩ টাকা এবং প্রিমিয়াম স্তরে এক প্যাকেট সিগারেটের দাম ১৪২ টাকা থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হতে পারে। এই তিন স্তরের বর্তমান সম্পূরক শুল্ক অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
২০২০-২১ অর্থবছরে তামাকজাত পণ্য থেকে প্রায় ২৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আদায় করা হয়। চলতি অর্থবছরে তা ৩২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা এনবিআর কর্মকর্তাদের।
নতুন মূল্য নির্ধারণ এবং সম্পূরক শুল্ক কাঠামোতে পরিবর্তনের ফলে আগামী অর্থবছরে এ খাত থেকে ৩৮ হাজার কোটি টাকার বেশি সংগ্রহ করা যাবে।
এছাড়াও তরল নিকোটিন, ট্রান্সডার্মাল নিকোটিন বা সাম্প্রতিককালে জনপ্রিয় হওয়া অনুরূপ পণ্যের সম্পূরক শুল্ক ১০০% থেকে বাড়িয়ে ১৫০% করা হতে পারে এবং ইলেকট্রনিক সিগারেট ও অনুরূপ ডিভাইস ও যন্ত্রাংশের উপর শুল্ক বৃদ্ধি পেয়ে ২১২% পর্যন্ত হতে পারে।