অপ্রদর্শিত আয় লুকিয়ে কর ফাঁকি দেওয়ার দিন শেষ
কোনো করদাতার ৬ বছর পূর্বের কোনো সম্পদ আয়কর ফাইলে দেখানো না হলে এবং এই সময়ের মধ্যে আয়কর কর্তৃপক্ষ তার হদিস না পেলে, এর ওপর কর কর্তন না করার বিধানে পরিবর্তন আনছে সরকার।
নতুন আয়কর আইনে করদাতার ৬ বছর আগের যেকোনো সময়ের সম্পদ উদ্ঘাটন হলে, তার ওপর আয়কর ধার্য করা হবে। এর ফলে সম্পদ লুকিয়ে কর ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ কমে যাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ন্যাশনাল বোর্ড অব রেভিনিউ'র (এনবিআর) সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, প্রস্তাবিত আইনে এ ধরনের বিধান রাখা হচ্ছে; আজ (৭ জুন) নতুন আয়কর আইন সংসদে উত্থাপন করা হতে পারে। সংসদে উঠলে চলতি অধিবেশনেই আইনটি পাশ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
নতুন এই আইন পাশ হলে তা ১৯৮৪ সাল থেকে কার্যকর আয়কর অধ্যাদেশকে প্রতিস্থাপন করবে; সামনের জুলাইয়ে কার্যকর হতে পারে নতুন আইন।
ট্যাক্স বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আইনে এ ধরনের বিধান যুক্ত হলে তা ট্যাক্স কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে।
স্নেহাশিষ মাহমুদ অ্যান্ড কো-এর কর বিশেষজ্ঞ ও অংশীদার স্নেহাশীষ বড়ুয়া দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "নতুন আয়কর আইনে এ ধরনের বিধান যুক্ত হলে সম্পদ লুকিয়ে রেখে কর এড়িয়ে যাওয়া কিংবা ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ কমে যাবে। এতে ট্যাক্সপেয়ারদের মধ্যে ট্যাক্স কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত হওয়ার সুযোগ তৈরি হবে।"
নতুন কর আইনের অন্যান্য বিধান
আইনের অন্যান্য বিধানগুলোর মধ্যে রয়েছে- কোনো ফার্ম বা অ্যাসোসিয়েশন, ফান্ডের বার্ষিক টার্নওভার দুই কোটি টাকার বেশি হলে তার অডিটেড ফাইন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্ট জমা দিতে হবে।
এনবিআরের আয়কর বিভাগের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে টিবিএসকে বলেন, "নতুন আয়কর আইনটিকে সহজভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করা হয়েছে। এতে কিছু বিষয় যুক্ত করা হয়েছে, তা ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব হওয়ার পাশাপাশি করদাতাবান্ধবও হবে।"
তিনি বলেন, "নতুন আইনে ট্যাক্সম্যানদের কর্তৃত্ব অনেক কমানো হয়েছে এবং আইনী বিধানকে আরও সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। কিছুক্ষেত্রে করদাতাদের জন্যও সহজ করা হয়েছে।"
গত ১ জুন, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেছিলেন, ইংরেজি ভাষায় প্রণীত আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪-এর পরিবর্তে, একে আরও সমসাময়িক ও আধুনিক করে আয়কর আইন-২০২৩ বাংলা ভাষায় প্রণয়ন করা হয়েছে।
বিধানের বিষয়বস্তু সহজ বাংলায় রূপান্তর করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন মন্ত্রী।
এফবিসিসিআই'র সুপারিশ উপেক্ষিত
এদিকে, দেশের শীর্ষ বাণিজ্য সংস্থা ফেডারেশন অফ বাংলাদেশ চেম্বার্স অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই), বেশ কয়েকটি সংশোধনের সুপারিশ করলেও তার বেশিরভাগেরই এখনও পর্যন্ত কোনো সুরাহা হয়নি বলে টিবিএসকে জানিয়েছে এফবিসিসিআই সূত্র।
এফবিসিসিআই তার প্রস্তাবে ন্যূনতম কর, উৎসে কর এবং অন্যান্য বিষয়, বিশেষ করে 'নো ইনকাম নো ট্যাক্স' ব্যবস্থা প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছিল।
তবে নতুন আয়কর আইনে এই বিষয়গুলোর সমাধান দেখানো হয়নি। কারণ উৎসে কর সরকারের মোট কর আয়ে বড় ভূমিকা রাখে।
কর আইন বিশেষজ্ঞ এবং এফবিসিসিআই'র উপদেষ্টা মনজুর আহমেদ টিবিএসকে বলেন, দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দেশে প্রচলিত কর আইনই প্রধান বাধা।
"আয় না থাকলে, ন্যূনতম কর বা উৎসে কর দিতে হবে কেন? এটা আয়কর দর্শনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক," যোগ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, "আইনটি সংসদে উত্থাপনের পর আমাদের অবজার্ভেশন সংসদীয় কমিটি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরবো।"
গত পাঁচ বছর ধরে নতুন আইন প্রণয়ন নিয়ে বহু আলোচনা হলেও তা এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত হয়নি। এনবিআর খসড়া তৈরির পর, এর বেশকিছু বিষয় নিয়ে আপত্তি তোলে এফবিসিসিআই।
অবশ্য গত ফেব্রুয়ারিতে ৪.৭ বিলিয়ন ঋণ অনুমোদনের পর বাংলাদেশকে বেশকিছু শর্ত দেয় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), যার মধ্যে অন্যতম হলো নতুন আয়কর আইন পাশ করা।