খুলনায় বিএনপির ‘মীর জাফররা’ কেউ জেতেননি
'গণতন্ত্র উদ্ধারের ইতিহাসে আপনার নাম একজন বেইমান, বিশ্বাসঘাতক ও মীর জাফর হিসেবে উচ্চারিত হবে।'- এই আখ্যা দিয়ে খুলনা মহানগর বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত ৮ জনকে আজীবন বহিষ্কার করেছিল দলটি। তারা সকলে দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। তবে গতকাল সোমবারের ভোটের ফলাফলে তারা কেউই বিজয়ী হতে পারেননি।
নির্বাচনে অংশ নেওয়া নেতারা হলেন- মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শেখ সাজ্জাদ হোসেন তোতন, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আশফাকুর রহমান কাকন, মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক মো. মাহবুব কায়সার, ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মো. আমান উল্লাহ আমান, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাজী ফজলুল কবির টিটো, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে মুশফিকুস সালেহীন পাইলট, মহানগর তাঁতী দলের যুগ্ম-আহবায়ক দেলোয়ার মাতুব্বর ও সাবেক ছাত্রদল নেতা ইমরান হোসেন।
গত ১০ জুন দলটির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে তাদেরকে বহিষ্কার করা হয়।
এ বিষয়ে বহিষ্কৃত কোন প্রার্থী সরাসরি কথা বলতে চাননি গণমাধ্যমের সাথে। তবে নাম না প্রকাশের শর্তে কয়েকজন দাবি করেছেন, তাদের হারানোর জন্য বিএনপি দায়ী। নির্বাচনের পূর্বে 'বেইমান, বিশ্বাসঘাতক ও মীর জাফর আখ্যা দিয়ে' তাদের চিঠি দেওয়া হয়েছিল। ওই চিঠি ভোটারদের মধ্যে মাঠপর্যায়ে বিলি করে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে সহায়তা করেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা। এছাড়া ভোটের আগে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে বিএনপির নেতাকর্মীরা তাদের বিপক্ষে কাজ করেছেন।
বহিস্কৃত এক নেতা বলেন, 'আমি জয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত ছিলাম। এলাকায় জনপ্রিয়তাও ছিল। তবে দল থেকে আমাদের এমনভাবে অগণতান্ত্রিক ভাষা দিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে, যা আমার পরাজয়ের একটি কারণ। ভবিষ্যতে আমি আর বিএনপির রাজনীতিতে অংশ নিব না।'
এপ্রসঙ্গে খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান মিলটন বলেন, 'যুগে যুগে মীর জাফরদের পতন হয়েছে। খুলনাতেও তার একটি দৃষ্টান্ত দেখা গেল। যাদের বহিষ্কার করা হয়েছে, তাদের পক্ষ বা বিপক্ষে নিয়ে ভোটের মাঠে কোন কাজ করা হয়নি। আর এই নির্বাচন যেহেতু বয়কট করা হয়েছে, তাই বিএনপির কোন আগ্রহ ছিল না।'
তাদের আর কখনো দলে ফেরত নেওয়া না বলে জানিয়েছেন খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আমল মনা। তিনি বলেন, 'তারা দলের সাথে বেঈমানি করেছে। দল আর তাদের কখনো ফেরত নিবে না।'
অন্যদিকে সাধারণ ৩১টি ওয়ার্ডের মধ্যে মাত্র একটিতে বিজয় লাভ করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক এক নেতা। তিনি হলেন খুলনা মহানগর জামায়াতের সাবেক নায়েবে আমীর শফিকুল আলম। ১২ নং ওয়ার্ডে তিনি কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। বাকি ৩০টি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন।
এছাড়া সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলরদের মাধ্যে ৯টিতেই আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিজয় লাভ করেছেন। তবে ৯ নং সংরক্ষিত ওয়ার্ডে বিজয়ী হয়েছেন বিএনপি থেকে সদ্য আজীবন বহিষ্কৃত খুলনা মহানগরের মহিলা দলের নেত্রী মাজেদা খাতুন। দলীয় সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তাকে বহিষ্কার করা হয়।