ট্রাম্পের কেন ‘অভিযুক্তের মতো’ মাগশট নেওয়া হয়নি, এমনকি তিনি আসলে গ্রেপ্তারও হননি!
রাষ্ট্রীয় গোপনীয় নথির অব্যবস্থাপনাসহ ৩৭টি অভিযোগের শুনানিতে গতকাল মায়ামির ফেডারেল আদালতে হাজির হয়েছিলেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু আদালতে তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ট্রাম্প। যদিও আদালতে তাকে অভিযুক্ত দেখানো হয়েছে; কিন্তু যেহেতু তিনি একজন সাবেক কমান্ডার-ইন-চীফ, তাই তাকে অভিযুক্ত দেখানোর প্রক্রিয়া অন্যদের চেয়ে কিছুটা ভিন্ন ছিল।
সাধারণত আদালতে যেসব অভিযুক্ত হাজির হয়, তাদেরকে হাতকড়া পরানো থাকে এবং আরও কিছু পুলিশি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। সিবিএস নিউজ ট্রাম্পের অ্যাটর্নি ও মুখপাত্র অ্যালাইনা হ্যাবার কাছে জানতে চেয়েছিল যে ট্রাম্পকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া এবং তার আঙুলের ছাপ নেওয়া ও চেহারার ছবি তোলা হয়েছে কিনা ('মাগশট' নামে পরিচিত)।
এর জবাবে অ্যালিনা বলেন, "সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এমন একটি অবস্থানে দাঁড়িয়ে যে তাকে অবশ্যই মাগশট দিতে হবে না। তিনি কোনো 'ফ্লাইট রিস্ক' নন (মামলার শুনানি চলাকালেই দেশ ছেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা)। তিনি এই মুহূর্তে জিওপি'র (গ্র্যান্ড ওল্ড পার্টি, যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান পার্টির ডাকনাম) শীর্ষস্থানীয় একজন প্রার্থী। তিনি এমন একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন যা সমন্বয় করছে সিক্রেট সার্ভিস এবং এই সবকিছুই নির্বিঘ্নে পরিচালনা করা হবে।"
কোনো ব্যক্তি অপরাধ করেছে এমনটা সন্দেহ করার মতো জোরাল প্রমাণ থাকলে তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেপ্তার করে।
কিন্তু অভিযুক্তকে আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসা করা যে সে দোষ স্বীকার করছে কিনা, সেটি ভিন্ন ব্যাপার। এটা ঘটে অভিযোগ দায়ের করার পরে এবং আদালতে আসামীর প্রথম উপস্থিতি, যেখানে তার অধিকার এবং তার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো পড়ে শোনানো হয়। এসময় অভিযুক্ত ব্যক্তির কথা বলার পালা যে সে নিজের দোষ স্বীকার করছে নাকি করছে না। ডোনাল্ড ট্রাম্পকে গ্রেপ্তার করা হয়নি, হাতকড়া পরানো হয়নি; বরং তিনি নিজে আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন এবং এই প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করেছেন।
ফেডারেল আদালতে সাধারণত অভিযুক্ত আদালতে হাজির হওয়ার প্রক্রিয়ার পরে 'বুকিং প্রসেস' শুরু হয়, কিন্তু ট্রাম্পের ক্ষেত্রে তা আদালতে হাজি হওয়ার আগেই হয়ে গিয়েছিল। তার আঙুলের ছাপও নেওয়া হয়েছিল। ট্রাম্পের ডিএনএ নমুনা নেওয়া হবে বলেও ধারণা করা হয়েছিল।
আদালতে এ প্রক্রিয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ট্রাম্পকে হাতকড়া পরানো হয়নি, এর পরিবর্তে তাকে ইউএস মার্শালস এর হেফাজতে রাখা হয়েছে।
মাগশট নেওয়ার পরিবর্তে কর্মকর্তারা ট্রাম্পের ছবি ডাউনলোড করে নিয়েছেন। ফেডারেল আদালতের নিয়ম অনুযায়ী, আদালতকক্ষের ভেতরে ক্যামেরা নেওয়ার অনুমতি নেই। আর যদি মাগশট নেওয়া হয়, সেগুলো জনসমক্ষে ছাড়া হয় না, বলেন সিবিএস নিউজ-এর আইনি বিশ্লেষক রিক্কি ক্লিম্যান।
ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত হয়ে গত এপ্রিলে ম্যানহাটন আদালতে আত্মসমর্পণের সময়ও একই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গিয়েছেন এই সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট। সেসময়ও ট্রাম্পকে হাতকড়া পরানো হয়নি এবং সাধারণ জনতার সামনে দিয়ে তাকে হাঁটিয়ে নিয়ে আসা হয়নি আদালতকক্ষে। ম্যানহাটনের আদালতকক্ষে শুধুমাত্র স্টিল ক্যামেরা নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।
ট্রাম্পের নিউইয়র্ক অ্যারেইনমেন্ট প্রক্রিয়াতেও ট্রাম্পের বুকিং ফটো নেওয়া হয়নি। মাগশট নেওয়া না হলেও, ট্রাম্পের সমর্থকরা তার সাদা-কালো ছবিসহ টি-শার্ট বিক্রি করেছে, যে ছবিটি দেখতে মাগশট হলেও আসলে তা ছিল না।
বুকিং প্রক্রিয়ার পর ট্রাম্প ও তার অ্যাটর্নিরা আদালতকক্ষে প্রবেশ করেন তিনটার কিছু আগে। সেখানে তিনি তার অ্যাটর্নি টড ব্লাংকের মাধ্যমে সব অভিযোগ অস্বীকার করেন।
নিউইয়র্ক মামলার মতো এবারও ট্রাম্পের টাকা দিয়ে জামিন নেওয়ার প্রয়োজন পড়েনি, কিন্তু আদালত ট্রাম্পের উপর কিছু নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে- বলছেন ক্লিম্যান। রিপাবলিক্যান পার্টির এই প্রার্থীকে তার পাসপোর্ট সমর্পণ করতে হয়নি এবং তার যুক্তরাষ্ট্র বা দেশের বাইরে ভ্রমণেও নিষেধাজ্ঞা নেই। কিন্তু আদালত বলেছেন, ট্রাম্প এই একই মামলায় তার সঙ্গে অভিযুক্ত ওয়াল্ট নাউটার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করতে পারবেন না, বিশেষ করে এই মামলার বিষয়াবলি সম্পর্কে। নিউইয়র্ক মামলার ক্ষেত্রে শর্তাবলী আরোপ ছিল না।